শ্রীলঙ্কার রাজনীতিতে আগামীর ভবিষ্যত রূপরেখা কিরুপ হবে।
বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোয় শ্রীলঙ্কার বেশ কিছু ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। এসব ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষের বিছানায় শুয়ে আছেন। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সুইমিং পুলে কেউ সাঁতার কাটছেন। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহের বাড়িতে হামলা চালানোর ছবিও ছড়িয়ে পড়েছে। এখন বিক্ষোভকারীরা বলছেন দুজন আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা বিলাসবহুল বাড়ি দুটির নিয়ন্ত্রণ ছাড়বেন না। আর এখন বাস্তবতার কথা আসি। বিক্ষোভকারীরা প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ দখল করে বসে নেই। কেউ প্রতিবাদী গান গাইছেন, কেউ সেখানে বারবিকিউ পার্টির আয়োজন করছেন কেউ খাবার খাচ্ছেন আবার কেউ প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন। খাবারের মূল্যবৃদ্ধি জ্বালানিসংকট বিদ্যুৎ ঘাটতির কারণে মার্চে বিক্ষোভ শুরু হয় শ্রীলঙ্কায়। এই বিক্ষোভের জেরে মাহিন্দা রাজাপক্ষে পদত্যাগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে। কিন্তু বিক্ষোভ এতে থামেনি। বিক্ষোভকারীরা চাইছিলেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষেকে পদত্যাগ করতে হবে। গোতাবায়া রাজাপক্ষে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিক্ষোভকারীরাদের মধ্যে একধরনের সন্দেহ ঢুকে গেছে। এখন তাঁদের দাবি প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা পর্যন্ত তাঁরা বিক্ষোভ চালিয়ে যাবেন।
সরকারের বর্তমান অবস্থাঃ
প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে হামলার পর জরুরি বৈঠক ডেকেছিলেন পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে। এরপর প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া ঘোষণা দিয়েছেন তিনি বুধবার পদত্যাগ করবেন। বিক্রমাসিংহেও এক টুইট বার্তায় ঘোষণা দিয়েছেন সব দলের অংশগ্রহণে সরকার গঠনের লক্ষ্যে তিনিও পদত্যাগ করবেন। তবে সুনির্দিষ্ট কোনো তারিখ তিনি জানাননি। এই পরিস্থিতিতে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে চার মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। নতুন করে বিক্ষোভ জোরালো হওয়ার পর সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে পদত্যাগের ঘটনা এটাই প্রথম। এর আগে গত ৩ এপ্রিল দেশটির শীর্ষ মন্ত্রীরা পদত্যাগ করলে মন্ত্রিসভা ভেঙে দেওয়া হয়।
যা ঘটতে পারেঃ
প্রেসিডেন্ট পদত্যাগের পর সরকারের নেতৃত্ব দেবেন পার্লামেন্টের স্পিকার মাহিন্দা ইয়াপা আবেবর্ধনে। প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর এক মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচন করতে হবে পার্লামেন্টকে। তবে এটা ঠিক পরিষ্কার নয় পার্লামেন্ট নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে পারবে কি না। আর যিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন তিনি সাধারণ মানুষ বা বিক্ষোভকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন কি না। এখানে একটি বিষয় লক্ষণীয় গোতাবায়া রাজাপক্ষের দলের সংখ্যারগরিষ্ঠতা রয়েছে পার্লামেন্টে। ফলে এই দলের সহযোগিতা ছাড়া নতুন সরকার গঠন করা কঠিন। তাই আশঙ্কা করা হচ্ছে যে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে সেই বিক্ষোভ আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে। নতুন সরকার গঠন না হলে শ্রীলঙ্কার আর্থিক সংকট সমাধানের সম্ভাবনা কম। কারণ আইএমএফের এক্সটেন্ডেড ফান্ড ফ্যাসিলিটির (ইএফএফ) অধীনে অর্থ দেওয়ার কথা রয়েছে শ্রীলঙ্কাকে। কিন্তু এর জন্য দেশটিতে বৈধ সরকার প্রয়োজন। কারণ এই সরকারের সঙ্গে আলোচনা করেই অর্থ দিতে পারবে আইএমএফ। কোনো দেশ অর্থ দিতে চাইলেও শ্রীলঙ্কায় নতুন সরকার দরকার। ফলে আইএমএফ ও বিভিন্ন দেশ চাইছে শ্রীলঙ্কার চলমান সংকটের সমাধান দ্রুত হোক। এ কারণে বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে আইএমএফ। এ প্রসঙ্গে রোববার আইএমএফের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে আমরা আশা করছি বর্তমান সংকটের সমাধান হবে। এটা হলে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আলোচনা পুরনায় শুরু করা সম্ভব হবে। এখন দেখার বিষয় পরিস্থিতি কোন দিকে মোর নেই।