তহবিল সংকটে চাপে আছে এশিয়ার স্টার্টআপগুলো
তহবিল সংকটে গত বছর বেশ খারাপ গেছে বিশ্বের বেশির ভাগ স্টার্টআপের। এশিয়ার স্টার্টআপগুলোর জন্য এ কথা আরো বড় আকারে সত্য। অথচ করোনা-পরবর্তী ২০২১ সালে রেকর্ড বিনিয়োগ পেয়েছিল তারা। গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ইউক্রেন আগ্রাসনের পর থেকেই স্টার্টআপগুলোর নতুন বিনিয়োগ প্রাপ্তি কমতে শুরু করে। দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনে কয়েক মাসের প্রলম্বিত লকডাউন এ সংকট আরো বাড়িয়ে দেয়। মহামারীর ভয়াবহ দিনগুলোয় বেশির ভাগ প্রযুক্তি জায়ান্ট রেকর্ড আয় করে। এমনকি অনেকেই ব্যবসা সম্প্রসারণের পাশাপাশি নতুন কর্মী নিয়োগ বাড়িয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানও আশা দেখে। কিন্তু ২০২২ সাল ছিল প্রযুক্তি জায়ান্টদের জন্য চরম হতাশার বছর। আয়ে বড় আকারের ধাক্কা খাওয়ায় বিনিয়োগের রাশ টেনে ধরা থেকে শুরু করে রেকর্ড কর্মী ছাঁটাইয়ে যায় তারা। বড় অংকের পুঁজি থাকা সত্ত্বেও বহুমুখী সংকটে আয় বাড়াতে হিমশিম খাচ্ছে প্রযুক্তি জায়ান্টগুলো। সেখানে ছোট ছোট স্টার্টআপের অনেকেই অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। ইউরোপ-আমেরিকায় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা ও বিনিয়োগ সহজলভ্য হলেও এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে এটা দুষ্প্রাপ্য। এতে সবচেয়ে ভুক্তভোগী হয়েছে সেখানকার স্টার্টআপগুলো।
ডিলস্ট্রিটএশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় স্টার্টআপগুলো নতুন শেয়ার ইস্যুর মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহের হার স্থির রাখতে সমর্থ হয়। কিন্তু জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে তা ৩০ শতাংশের বেশি হ্রাস পায়। ভারতীয় ডাটা কোম্পানি ট্র্যাক্সনের উপাত্তে বলা হয়, দেশটির স্টার্টআপগুলো ২০২২ সালে মোট ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার বিনিয়োগ পেয়েছে, যা পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় প্রায় ৪০ শতাংশ কম। লন্ডনভিত্তিক বিনিয়োগ উপাত্ত বিশ্লেষক কোম্পানি প্রিকিনের মতে, বিশ্বব্যাপী জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত তহবিল সংগ্রহ বছরে কমেছে ৪০ শতাংশের বেশি। এ হার ‘ডট-কম বাবল’ পরবর্তী ২০০১ ও ২০০২ সালের ২০ শতাংশ পতন কিংবা ২০০৯ সালের বৈশ্বিক আর্থিক সংকট-পরবর্তী ৩০ শতাংশের অধিক পতনের তুলনায় বেশি।
২০২২ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ শতাংশ ও চীনে স্টার্টআপ তহবিল সংগ্রহের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। তাই আগের বছরের তুলনায় ২০২২ সালকে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ‘অনাহারী’ বছর হিসেবেও আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
প্রিকিনের মতে, ২০২১ সালে বিশ্বব্যাপী স্টার্টআপ বিনিয়োগ ১৩০ শতাংশ বাড়ে। তবে ২০২২ সালে তহবিল সংগ্রহের পরিমাণে ৪০ শতাংশ পতন ঘটলেও তা ২০২০ ও ২০১৭ সালের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি ছিল।
ভারতের ক্ষেত্রেও এ কথা সত্য, দেশটি ২০২১ সালে তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে ১৭০ শতাংশ বৃদ্ধি দেখেছে। তবে ২০২২ সালে দেশটির সংগৃহীত তহবিলের পরিমাণ ২০১৭ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ এবং ঐতিহাসিক মানদণ্ড বিচারে এখনো উচ্চতর।
তবে বিশ্বজুড়ে গত বছর ভেঞ্চার ক্যাপিটাল ঘিরে বিনিয়োগ দৃষ্টিভঙ্গির দিক পরিবর্তন হয়েছে। যদিও এর আগ পর্যন্ত, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতারা ব্যয়ের বিপরীতে খুব একটা লাগাম টানেননি, বরং সবকিছু ছাপিয়ে ব্যবসা সম্প্রসারণের দিকেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। যেহেতু ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে জ্বালানির দাম বেড়েছে ও মূল্যস্ফীতি ত্বরান্বিত হয়েছে; যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে সুদের হার বাড়াতে প্ররোচিত করে। এর প্রভাব পড়ে স্টার্টআপ ব্যবসায়ে বিনিয়োগের ওপরও। তাই বলা যায়, স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতারা পরিবর্তিত এ পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে চলতে তীব্র সংগ্রাম করছে। ভারতীয় অনলাইন শিক্ষা সংস্থা বাইজুস। এটিকে বলা হয় দেশটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টার্টআপ। অক্টোবরে তারা ঘোষণা করে, তাদের ২ হাজার ৫০০টি কর্মসংস্থান বা তার ৫ শতাংশ কর্মী কমাতে যাচ্ছে।
এমনকি এটি তাদের হাজার হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছে। যদিও পরবর্তী সময়ে দেখা যায়, কোম্পানিটি প্রায় ৪ কোটি ডলার খরচ করে বিশ্বকাপ স্পনসরশিপ চুক্তি সম্পাদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী টেলিভিশনে নিজস্ব লোগো প্রদর্শন করছে। এ ধরনের বৈপরীত্য অবশ্য কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে সমালোচনাকে উসকে দেয়।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1050388767.jpg[/IMG]