উদীয়মান অর্থনীতিতে চীনা ঋণ ১৩ বছরের সর্বনিম্নে
উন্নয়নশীল ও উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোয় চীনা ঋণের পরিমাণ কমছে। বোস্টন ইউনিভার্সিটির গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট পলিসি সেন্টারের এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। বৃহদাকার প্রকল্পে বিনিয়োগ সংকোচনের নীতি নেয়ার ফলে ঋণ সরবরাহ কমিয়েছে চীনা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনের দুই প্রধান ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান গত ২০২১ সালে ৩৭০ কোটি ডলার ঋণ দিয়েছে, যা ১৩ বছরের সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। ২০১৬ সালে রেকর্ড বিদেশী ঋণের পরবর্তী বছরগুলোয় কমতে থাকে ১০০ উন্নয়নশীল দেশে চায়না এক্সিমব্যাংক ও চায়না ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (সিডিবি) ঋণের প্রতিশ্রুতি। ২০১৮ সালে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং তিন বছর ধরে চলা করোনা মহামারী এতে প্রভাব রেখেছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1017879543.jpg[/IMG]
বিশ্বব্যাংকের উপাত্ত অনুযায়ী বিশ্বে শীর্ষ দ্বিপক্ষীয় ঋণদাতা চীন। জাম্বিয়া ও শ্রীলংকার মতো দেশগুলোতে ঋণভার কমাতে বেইজিংয়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করছে যুক্তরাষ্ট্রের মতো পশ্চিমা দেশ ও বহুজাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। ঋণগ্রহীতার সঙ্গে কীভাবে চুক্তিতে পৌঁছায় এবং কোন শর্ত রাখে তা প্রকাশে বিরত থাকে চীন। ২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চায়না এক্সিমব্যাংক ও সিবিডির ঋণ প্রতিশ্রুতি ছিল ৪৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। মূলত বেল্ট অ্যান্ড রোড অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায় এ ঋণ সরবরাহ করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রি তেল কোম্পানিতে সাধারণ ঋণ ছিল ৬ হাজার কোটি ডলার। ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে এ ঋণ পেয়েছে অ্যাঙ্গোলা, ব্রাজিল, একুয়েডর, রাশিয়া ও ভেনিজুয়েলা। তখন থেকে জ্বালানি তেলনির্ভর অর্থনীতি থেকে ফোকাস কমিয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় মনোযোগ দেয়া হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চীনা ঋণের শীর্ষ গ্রহীতা হিসেবে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলংকা। বিগত বছরগুলোয় বার্ষিক ঋণ সরবরাহও কমেছে। ২০১৩ থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে চীনের গড় ঋণের পরিমাণ ৫৩ কোটি ৪০ লাখ ডলার। ২০১৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে ওই গড় কমে দাঁড়ায় ৩৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার।
২০০৮ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে চীনা ঋণের সর্বোচ্চ গ্রহীতা ছিল রাশিয়া। এ সময়ে দেশটি ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার চীনা ঋণ সংগ্রহ করে। ভেনিজুয়েলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার চীনা ঋণ নেয়। পরিবহন, কৃষি, পানি ও জ্বালানি তেলের মতো খাতের জন্য তৃতীয় সর্বোচ্চ ৩ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ঋণ নেয় অ্যাঙ্গোলা। আফ্রিকার অন্যান্য শীর্ষ ঋণগ্রহীতার মধ্যে রয়েছে কেনিয়া, ইথিওপিয়া ও মিসর। এদিকে বোস্টন ইউনিভার্সিটির গবেষণা বলছে, চীনা ঋণের পরিমাণ যখন কমছে তখন বাড়ছে বিশ্বব্যাংকের। ২০১৬ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক গড় ঋণের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার কোটি ডলার। ২০২০ সালে করোনা মহামারীতে তা ৬ হাজার ৭০০ কোটি ডলারে দাঁড়ায়। ২০০৮ সালের পর যা বিশ্বব্যাংকের সর্বোচ্চ ঋণ সরবরাহ। ২০২১ সালে বিশ্বব্যাংকের ঋণ সরবরাহ দাঁড়ায় ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার। চীনা অর্থায়নের চেয়ে তা ১৭ গুণ বেশি।
গত মাসে রয়টার্সের অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও অন্যান্য বৈশ্বিক সংকটের মতো খাতে ঋণের মাধ্যমে বিশ্বব্যাংক তার সক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে। আগামী এপ্রিলে শেয়ারহোল্ডারদের সঙ্গে বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
