বিশ্ব মূল্যস্ফীতির ওপর চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রভাব
নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টানা তিন বছর কঠোর বিধিনিষেধ পালন করেছে চীন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের জিরো কভিডনীতির কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, অর্থনীতি নানা সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। তবু কঠোর অবস্থা থেকে সরেনি চীন সরকার। গত বছরের শেষদিকে যখন বিশ্বের প্রায় সব দেশ বিধিনিষেধ তুলে নিয়ে সীমান্ত খুলে দিয়ে পূর্ণগতিতে ব্যবসা শুরু করল, তখন আন্দোলনে নামে চীনের সাধারণ মানুষ। এর একপর্যায়ে বিধিনিষেধ তুলে নিতে অনেকটা বাধ্য হয় সরকার। বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনে অর্থনৈতিক কার্যক্রম শুরু হলে তা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এটা যেমন সঠিক তেমনি মূল্যস্ফীতির শঙ্কাও বাড়িয়ে তুলতে পারে। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজারও। এ অর্থনীতি নবজীবন পেলে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল, শিল্প খাতে ব্যবহৃত ধাতবসামগ্রী এবং খাদ্যপণ্যের দামের ওপরও চাপ পড়বে। কারণ অর্থনীতি গতি ফিরে পেলে স্বাভাবিকভাবেই তেল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বাড়বে।
চলতি বছরের শুরুতেই দস্তা, অ্যালুমিনিয়াম ও জিংকের বাজার ছিল রমরমা। লন্ডন মেটাল এক্সচেঞ্জের তথ্য অনুযায়ী, এ ধাতুগুলোর গড় প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ। যেটি গত ১১ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভালো। এছাড়া আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধাতু টিনের বিক্রি বেড়েছে ৩০ শতাংশ। মূলত ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী তৈরিতে এর ব্যবহার বেশি হয়। এমকেএস পাম্পের হেড অব মেটাল স্ট্র্যাটেজি নিকি শিয়েলস বলেন, এসব ধাতুর চাহিদা সামনের দিনে আরো বাড়বে বলে প্রত্যাশা করছি। বিশেষ করে চীনা নববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে ধাতুর বাজার ফিরতে শুরু করবে। বাজার সংশ্লিষ্টরাও এখন সে প্রত্যাশায়ই রয়েছেন। শুধু যে ভোগ্যপণ্যের বাজারেই চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের প্রভাব পড়বে তা নয়। পুঁজিবাজারেও পড়েছে এর প্রভাব। যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিবন্ধিত চীনা কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে ১৯ শতাংশের বেশি হারে।
বিলাসবহুল পণ্যবিক্রেতা এলভিএমএইচের প্রধান নির্বাহী বার্নার্ড আরনোঁ জানান, ম্যাকাওয়ে এলভির শোরুমগুলোয় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে। যা শেষের বছরগুলোর তুলনায় বেশি। অর্থনীতি যে আবার স্বনির্ভর হতে শুরু করেছে, তার অনেকগুলো লক্ষণ এভাবে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের অর্থনীতিতে গতি এলে তার রেশ গোটা বিশ্ব অর্থনীতির ওপরই পড়বে। তবে যদি খাদ্য ও জ্বালানির দাম আরেক দফা বাড়ে, তাহলে এর প্রভাবও ভোক্তার ওপরই বেশি পড়বে। চীনের ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফেরায় কৃষিপণ্যের চাহিদা বাড়তে পারে। যদিও বিশ্ব এ মুহূর্তে আধুনিক সভ্যতার সবচেয়ে ভয়াবহ খাদ্যসংকটের মধ্যে রয়েছে। বর্তমানে গমের সরবরাহ মূল্য ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের চাইতেও ৫৮ শতাংশ বেশি।
চীনের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার তেলের চাহিদায়ও বড় উল্লম্ফনের সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। দি ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি গত সপ্তাহে দেয়া প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বের দৈনিক তেলের চাহিদা অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি। এ চাহিদা এখন ১০ কোটি ১৭ লাখ ব্যারল। এ প্রবৃদ্ধির অর্ধেকের বেশির কারণ চীনের চাহিদা বেড়ে যাওয়া। চলতি বছরের শেষ ভাগে যখন ভ্রমণ ও ভোগ আরো বাড়বে তখন তেলের দামও বাড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিশ্লেষকরা বলছেন, তেলের দাম বাড়তে থাকলে তা বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির কারণ হবে। যদিও অক্সফোর্ড ইকোনমিকসের গ্লোবাল ম্যাকরো রিসার্চের পরিচালক বেন মে বলেন, ‘*বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির পেছনে চীনের অবদানের কথা যেভাবে চাউর করা হচ্ছে, বিষয়টি ততটা নাও হতে পারে। যদিও বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতিতে চীনকে এখন এক্স ফ্যাক্টর হিসেবে দেখা হচ্ছে।’
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/269854164.jpg[/IMG]