এক দশক দীর্ঘ হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি
যুক্তরাষ্ট্রে চলমান উচ্চমূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি শিগগিরই স্বাভাবিক হচ্ছে না। বরং সব পূর্বাভাসকে মিথ্যে প্রমাণ করে এটি টিকে থাকতে পারে আরো অন্তত এক দশক। স্মিদ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা বিল স্মিদের বরাতে এমন তথ্যই জানিয়েছে সিএনবিসি। মার্কিন শ্রম মন্ত্রণালয় প্রকাশিত বার্ষিক মূল্যস্ফীতির প্রবৃদ্ধির পরিসংখ্যান প্রকাশের পর পরই মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিল স্মিদের এ মন্তব্য এল। মন্ত্রণালয় মূল্যস্ফীতির প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৪ শতাংশ বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছিল। বিল স্মিদ বলেন, ‘*আমরা মনে করি মূল্যস্ফীতি নাছোড়বান্দা হিসেবে অর্থনীতিতে অবস্থান করবে এবং অনেক দীর্ঘমেয়াদি হবে। যেহেতু যুক্তরাষ্ট্র এবং আমাদের বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে, তাই মূল্যস্ফীতি এক দশক দীর্ঘ হতে পারে।’
এর আগে চলতি মাসের শুরুতে ফেডারেল রিজার্ভ বেঞ্চমার্ক সুদের হার বাড়িয়েছিল। সুদের হার বৃদ্ধির এ ধারার অবসান হতে যাচ্ছে, এমন ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছিল। সে সময় ফেডারেল রিজার্ভের গভর্নর মিশেল বোম্যান সতর্ক করে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ২ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করে মূল্যস্ফীতি কমাতে নিয়ন্ত্রকদের সুদের হার বৃদ্ধির এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1826548654.png[/IMG]
তবে বিল স্মিদের মতে, সাম্প্রতিক সুদের হার বৃদ্ধির পরও ফেডারেল রিজার্ভের পক্ষে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কঠিন হবে। তিনি বলেন, ‘*আমাদের ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ আছে যাদের বয়স ২২ থেকে ৪২ বছরের মধ্যে। আগামী ১০ বছর তারা প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনার পেছনে নিজেদের অর্থ ব্যয় করবে। তা পুঁজিবাজারের অবস্থা যেমনই হোক না কেন। তারা তাদের জীবন নিজেদের নিয়মেই যাপন করবে। অর্থনীতির অবস্থা কিছুটা ভালো হবে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কষ্ট করতে হবে।’
গত মঙ্গলবার মার্কিন শ্রম মন্ত্রণালয় প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, জানুয়ারিতে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া কোর মূল্যস্ফীতি সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া বার্ষিক ভোক্তা মূল্যস্ফীতি জানুয়ারিতে হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ, যা ডিসেম্বরের ৬ দশমিক ৫ শতাংশের চেয়ে কিছুটা কম। কিন্তু বাজারের যে পূর্বাভাস ছিল অর্থাৎ ৬ দশমিক ২ শতাংশের বেশি, মূল্যস্ফীতির এ তথ্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেক বিনিয়োগকারী। তাদের মধ্যে একধরনের আতঙ্কও দেখা দিয়েছে। যার রেশ দেখা গেছে পুঁজিবাজারেও। মঙ্গলবার দিনের শুরুতেই পুঁজিবাজারে পতন দেখা গেছে। অনেক বিনিয়োগকারীই মনে করছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফেডারেল রিজার্ভ শিগগিরই সুদের হার বৃদ্ধির ধারা বন্ধ করছে না।
অন্যদিকে বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতি ও মন্দার শঙ্কার পরেও মার্কিনদের কেনাকাটা কমেনি। এ ধারা অব্যাহত ছিল গোটা ২০২২ সাল জুড়েই। যার ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ুলোয় ছিল কর্মচাঞ্চল্য, মানুষের কর্মসংস্থানেও সমস্যা সৃষ্টি হয়নি। এমনকি এখনো, মহামারীকালে জমানো অর্থ ব্যয় করে চলেছে দেশটির মানুষ। তবে বাস্তবতা হলো, ক্রেতাদের এ কেনাকাটা যেমন অর্থনীতিকে সচল রাখে তেমনি এটি অর্থনীতিকে মূল্যস্ফীতি ও সামনের দিনগুলোয় মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতার দিকেও নিয়ে যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার কমেছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত ৫৩ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এ সময়ের মধ্যে কর্মসংস্থানের সুযোগও রয়েছে সর্বোচ্চে। কর্মসংস্থানের এ পরিস্থিতি কেনাকাটার ক্ষেত্রে ভোক্তাদের সক্ষমতা বাড়িয়ে দিয়েছে, তাদের আস্থা বাড়িয়েছে, যা মার্কিন অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করেছে।
যদিও অর্থনীতিবিদরা পরিস্থিতির বিপরীত চিত্রের বিষয়েও সতর্ক করছেন। তারা বলছেন, ভোক্তা ব্যয়ের এ চমৎকার পরিস্থিতির কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ আরো কঠিন হতে পারে। সরকারি তথ্য মতে, জানুয়ারিতে পেট্রলের দাম বেড়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশ। সর্বশেষ প্রকাশিত মূল্যস্ফীতির প্রতিবেদন অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। বিশেষ করে সিরিয়াল ও রুটিজাতীয় পণ্য বেশ দামি হয়ে উঠছে। জানুয়ারিতে ডিমের দাম বেড়েছে ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। এছাড়া বাড়ি ভাড়া ও বাড়ির দামও বেড়েছে। জানুয়ারিতে বাড়ি ভাড়া বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ, যা ডিসেম্বরের চেয়ে খুব সামান্য কম।