অর্থ বিনিয়োগের নিরাপদ গন্তব্যের খোঁজে মার্কিনরা
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/657772936.png[/IMG]
যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাত নিয়ে গ্রাহকের মধ্যে দুশ্চিন্তা বাড়ছে। বিশেষ করে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতন ও একই সময়ে আরো কয়েকটি ব্যাংকের দুরাবস্থার কথা সামনে এলে তৈরি হয় আস্থার সংকট। এ অবস্থায় নগদ অর্থের প্রতি ঝুঁকছেন মার্কিনরা। অর্থাৎ ব্যাংকে অর্থ জমা করার চেয়ে তা নগদ হিসেবে নিজের কাছে রাখার প্রবণতা বাড়ছে। দেশটির পুঁজিবাজারেও পড়েছে প্রভাব, অস্থির বাজারে নতুন করে বিনিয়োগ করতে চাইছেন না বিনিয়োগকারীরা। এর চেয়ে বরং বিকল্প বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুঁজছেন তারা। খবর সিএনএন বিজনেস।
সাধারণত, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অর্থ বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ ধরা হয়। বিশ্বজুড়েই বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিচিত খাতটি। সংশ্লিষ্ট তহবিলগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বল্পমেয়াদি সঞ্চয়ী বিনিয়োগ যেমন সরকারি বন্ড বা নির্দিষ্ট মেয়াদি সঞ্চয়ী অ্যাকাউন্ট ও বাণিজ্যিক ঋণ। অর্থের বাজারভিত্তিক এসব তহবিলের লক্ষ্য হলো বিনিয়োগকারীকে তুলনামূলক স্থিতিশীল বিনিয়োগের ক্ষেত্র দেয়া। যেখানে প্রথাগত সঞ্চয়ের চেয়ে কিছুটা বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। এ তহবিলগুলোয় সম্প্রতি নগদ অর্থের প্রবাহ দেখা গিয়েছে। কারণ বিনিয়োগকারীরা আরো স্থিতিশীল খাতের সন্ধান করছেন, যেখানে এসব অর্থ বিনিয়োগ করা যায়। ফলে বিনিয়োগের জন্য কম ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়টি আর এ খাতের জন্য প্রযোজ্য হচ্ছে না। জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষণ বলছে, ব্যাংক খাতের টালমাটাল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকের পতনের পর থেকে ৫৫ হাজার কোটি ডলার ছোট ও আঞ্চলিক ব্যাংকগুলো থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এসব অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে বড় ব্যাংক বা অর্থ বাজারভিত্তিক তহবিলে।
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেপ কোরালের আর্থিক পরামর্শক ড্যানিয়েল লাচ বলেন, বাজারে অস্থিরতা তৈরি হলে সবসময়ই সচল হয়ে ওঠে অর্থ। এ মুহূর্তে গ্রাহকদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো তাদের অর্থ নিরাপদ আছে কিনা। কীভাবে একে আরো নিরাপদ করা যায়। যেসব গ্রাহকের ছোট ব্যাংকগুলোয় সাধারণ সঞ্চয়ী হিসেবে অর্থ জমা আছে, তারা এখন সেগুলো সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে লাখো মার্কিন একই ধরনের হিসাব কষছেন। কীভাবে নিজের কষ্টে অর্জিত সঞ্চিত অর্থকে ঝুঁকিমুক্তভাবে গচ্ছিত রাখা যায়, সেটাই তাদের মূল ভাবনা।
কেন নিরাপদ খাতটিতে সংকটের সৃষ্টি হলো, তা জানতে গেলে কিছুটা পেছনে যেতে হবে। এক বছর আগে যখন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়াতে শুরু করে, তখন অর্থ বাজার তহবিলে সঞ্চিত অর্থের পরিমাণ ৪০ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। অ্যাপোলো গ্লোবাল ম্যানেজমেন্ট বলছে, গত সপ্তাহেই বাজারে প্রবেশ করেছে ১২ হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ এ মুহূর্তে রেকর্ড ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ রয়েছে। নতুন এ অর্থের বেশির ভাগই গত সপ্তাহে এসেছে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। যার মধ্যে ১০ হাজার ১০০ কোটি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে। অন্যদিকে ২ হাজার কোটি ডলারের দায় খুচরা বিনিয়োগকারীদের। তবে শিগগিরই অর্থ বাজার তহবিলে খুচরা বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ সর্বোচ্চে উঠতে পারে। গোল্ডম্যান স্যাকসের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি বছর মার্কিনরা ১ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারের শেয়ার বিক্রি করতে পারেন। এরপর সে অর্থ নগদে পরিণত করে বা অর্থ বাজারে বিনিয়োগ হিসেবে জমা রাখতে পারেন।
তবে এ বাজারে যত অর্থ বিনিয়োগ হবে, তত বেশি নগদ অর্থের প্রবাহের সংকট তৈরি হয়। এতে তারল্য সংকটও সৃষ্টি হতে পারে। কারণ হঠাৎ গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার প্রয়োজন হলে সবসময় তহবিলে পর্যাপ্ত অর্থ পাওয়া যায় না। অর্থ বাজার তহবিলটি অত্যন্ত গভীরভাবে আর্থিক ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পর্কিত থাকে। ফলে ব্যাংকগুলোকেও এ-সংক্রান্ত নানা সংকটে পড়তে হয়।