জাপানে নতুন অর্থবছরেও মূল্যস্ফীতি অব্যাহতের শঙ্কা
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/477783811.png[/IMG]
জাপানে শুরু হয়েছে নতুন অর্থবছর। তবে নতুন বছরেও পুরনো সমস্যা মিটছে না। এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ বাণিজ্য বছরেও মূল্যস্ফীতি ও তার রেশ দেশটির ভোক্তাদের পিছু ছাড়ছে না। এমনকি মজুরি যা বৃদ্ধি পেয়েছে, তাও মূল্যস্ফীতির সঙ্গে পেরে উঠছে না। জাপানে এখনো কাঁচামালের দাম অনেক বেশি, যা কোম্পানিগুলোর মুনাফায় ভাগ বসাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে দ্রব্যমূল্য আরো একদফা বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। মেয়োনিজ ও ডেইরি পণ্য থেকে আমদানি করা ওয়াইন পর্যন্ত ৫ হাজার ১০০টির বেশি খাদ্য ও পাণীয়ের দাম বাড়বে বলে এক গবেষণায় জানিয়েছে তেইকোকু ডাটাব্যাংক। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা বলছে, প্রতি মাসে জাপানের পরিবারগুলোকে খাদ্যপণ্যের পেছনে অতিরিক্ত ২ হাজার ১৪০ ইয়েন বা ১৬ ডলার বেশি ব্যয় করতে হবে। কেবল নিত্যপণ্যের দামই যে বাড়ছে তা নয়। ভোক্তাদের ওপর নানামুখী চাপ তৈরি হচ্ছে। গণপরিবহন থেকে প্যাকেজ ডেলিভারি পর্যন্ত খরচ বাড়ছে। আবার কভিড-১৯ মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে ও ক্রমবর্ধমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মেলাতে থিম পার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্রে টিকিটেরও দাম বাড়ানো হচ্ছে। ভোক্তারা এরই মধ্যে মূল্যস্ফীতির বাড়তি চাপের কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন। জাপানে মূল্যস্ফীতি চার দশকে সর্বোচ্চে পৌঁছেছে। এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের জীবনধারণ সহজ করতে মজুরি বৃদ্ধির আলোচনা চলছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে জাপান শ্রমিক ইউনিয়নের এ আলোচনা ফলপ্রসু হলে দিন দশেকের মধ্যে সর্বোচ্চ মজুরি বৃদ্ধি দেখবেন দেশটির শ্রমিকরা।
অবশ্য মূল্যস্ফীতি ও উচ্চ দ্রব্যমূল্যের এ পরিস্থিতিতে সরকার তার তরফ থেকে যতটুকু সহায়তা করা যায়, করছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউটিলিটি বিল কমিয়ে দেয়া ও নিম্ন আয়ের পরিবারগুলোর সুরক্ষার জন্য অর্থ প্রণোদনা দেয়া।
জাপানের সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে এভিয়ান ফ্লুর ছড়িয়ে পড়া। যার কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। শুধু ডিম নয়, ডিম দিয়ে তৈরি হওয়া বিভিন্ন পণ্য, যেমন মেয়োনিজের দামও অনেক বেড়ে গেছে। মশলা ও আচারজাতীয় খাবার প্রস্তুতকারক দুই কোম্পানি কিউপাই করপোরেশন ও আজিনোমোতা কোম্পানি ২০২১ সালের জুলাই থেকে এখন পর্যন্ত চারদফায় পণ্যের দাম বাড়িয়েছে।
অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য যেমন পনির, দই, হ্যাম ও সসেজের দামও ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে। জাপানি খাবারে বহুল ব্যবহৃত ও প্রয়োজনীয় সয়াসসের দামও বাড়বে ১০ শতাংশ। শুধু খাদ্যদ্রব্যের দামই নয়, শিগগিরই বাড়ানো হচ্ছে ট্রেনের ভাড়াও। পশ্চিম জাপানের কানসাই অঞ্চলে পরিচালিত ছয়টি ট্রেনের ভাড়া বাড়ছে। এ ট্রেনগুলো ওসাকার সঙ্গে টোকিও মেট্রোপলিটন এলাকার যোগাযোগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া ওসাকা ও ফুকুওকার মধ্যে চলমান বুলেট ট্রেনের জন্যও যাত্রীদের এখন বাড়তি ভাড়া গুনতে হবে। কভিড-১৯ মহামারীর সময় কুরিয়ার সার্ভিস ও পণ্য ডেলিভারি পরিষেবার ব্যবসা বড় হয়। এগুলো মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পরিষেবায়ও পরিণত হয়। এখন এ খাতেও ব্যয় বাড়ছে। ইয়ামাটো ট্রান্সপোর্ট কো. ও সাগাওয়া এক্সপ্রেস কো তাদের পরিষেবার মূল্য ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াচ্ছে।
কভিড মহামারীর পর জাপানের পুনরুদ্ধারের গতি বেশ ধীর। সেই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বেড়ে যায় জ্বালানি ও কাঁচামালের ব্যয়। একপর্যায়ে ডলারের বিপরীতে ইয়েনের দ্রুত পতন হয়। সব মিলিয়ে জাপানের সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় অনেক বেড়ে যায়।
সরকার প্রণোদনা দেয়ার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতির প্রভাব প্রশমনে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদা কোম্পানিগুলোকে মজুরি বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন, যেন কর্মীরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির এ দেশ গত বছর মন্দার মুখ থেকে ফিরে এসেছে। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে সবচেয়ে বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করবে মজুরি বৃদ্ধি। জাপানের কোম্পানিগুলোও গড়ে ৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির ব্যাপারে সম্মত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম আগামী কয়েক মাস বাড়বে। এমনকি সরকার ইউটিলিটি বিল কমিয়ে দিলেও ভোক্তাদের ওপর চাপ খুব একটা কমবে না। ফলে সামনের দিনগুলো এমন চাপের মধ্যেই চলতে হবে জাপানের সাধারণ মানুষকে।