খাদ্য মূল্যস্ফীতির প্রভাবে বাধাগ্রস্ত হবে মেনার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত ও বাজার অস্থিরতার প্রভাবে বিশ্বজুড়েই বেড়েছে খাদ্যের দাম। মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও ইয়েমেনের মতো দেশগুলোয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে খাদ্য সংকট পরিস্থিতি। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক বলছে, চলতি বছর খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির বড় ধরনের প্রভাব পড়বে মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার অর্থনীতির (মেনা অঞ্চল) ওপর। অতিরিক্ত মূল্যস্ফীতি দরিদ্র পরিবারগুলোর দুর্দশা বৃদ্ধির পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদে খাদ্যনিরাপত্তাহী তাকেও বাড়িয়ে তুলবে। খবর দ্য ন্যাশনাল।
বৃহস্পতিবার বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২২ সালের ৫ দশমিক ৮ শতাংশের তুলনায় চলতি বছর মেনা অঞ্চলের দেশগুলোয় জিডিপি প্রবৃদ্ধি কমে হবে ৩ শতাংশ। এদিকে মাথাপিছু প্রকৃত জিডিপি ২০২২ সালের ৪ দশমিক ৪ শতাংশের তুলনায় চলতি বছর কমে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৬ শতাংশে। মেনা অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর অধিবাসীদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন চলতি বছর খাদ্যনিরাপত্তাহী তার সম্মুখীন হতে পারে বলে। এছাড়া পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮০ লাখ শিশু ক্ষুধার্ত থাকবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, যা মূলত খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাবের কারণে হবে। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1505845757.png[/IMG]
এ প্রসঙ্গে মেনা অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফেরিদ বেলহাজ বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি দরিদ্র পরিবারগুলোর ওপর বিধ্বংসী প্রভাব ফেলছে। খাদ্যনিরাপত্তাহী তার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব দ্বারা আক্রান্ত হবে তরুণ প্রজন্ম। দুঃখজনকভাবে যা তাদের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। অক্ষমতা বা নিষ্ক্রিয়তার মানবিক ও অর্থনৈতিক মূল্য অত্যধিক। এ অঞ্চলের জন্য সাহসী নীতির প্রয়োজন, কেননা এখানের জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি তরুণ।’
উল্লেখ্য, যখন কোনো পরিবারের অন্তত একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি অর্থ বা সম্পদের অভাবজনিত কারণে বছরজুড়ে তার খাবারের পরিমাণ কমাতে বাধ্য হয়, অভুক্ত বা ক্ষুধার্ত থাকে, কিংবা সারাদিন না খেয়ে কাটায় তখন সে পরিবারকে মারাত্মকভাবে খাদ্যনিরাপত্তাহী শ্রেণীতে লিপিবদ্ধ করা হয়।
গত বছর আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পক্ষ থেকে বলা হয়, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের ফলে শস্য সরবরাহ বন্ধ হওয়ায় আরব বিশ্বের ১৪ কোটি ১০ লাখেরও বেশি মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহী তার সম্মুখীন হয়েছে। মেনা অঞ্চলের বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ রবার্তা গ্যাটি বলেন, ‘খাদ্য মূল্যস্ফীতি, যদি তা সাময়িকও হয়, তবে দীর্ঘমেয়াদে অপরিবর্তনীয় ক্ষতির কারণ হতে পারে।’ ২০২২ সালের মার্চ-ডিসেম্বরের মধ্যে মেনা অঞ্চলে বার্ষিক গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ২৯ শতাংশ। খাদ্যের দামের এ বৃদ্ধি ভবিষ্যতের প্রজন্মের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করে বৈশ্বিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
ইউক্রেনে রাশিয়ার যুদ্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত খাদ্যের দাম বৃদ্ধির ফলে মেনা অঞ্চলের উন্নয়নশীল দেশগুলোর দুই লাখ থেকে ২ লাখ ৮৫ হাজার শিশুর গর্ভবস্থায় পুষ্টি বঞ্চনা কিংবা পরবর্তী সময়ে অপুষ্টির শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ১৭-২৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, মেনা অঞ্চলে খাদ্যনিরাপত্তাহী তার ব্যাপকতা বেশি, যা ২০০৬ সালের প্রাক্কলিত ১১৮ শতাংশ থেকে বেড়ে চলতি বছর ১৭ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হতে পারে।
ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) সিরিয়া ও ইয়েমেনকে সংকটপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। খাদ্যনিরাপত্তাহী তার চ্যালেঞ্জগুলো মূলত ব্যাপক। শুধু মানবিক দিক বিবেচনা করে নয়, এ অঞ্চলের সরকারগুলো এখন অর্থনৈতিক কারণেও সক্রিয় হবে। কেননা অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুরা ভবিষ্যতের কম উৎপাদনশীল শ্রমিক হিসেবেই অর্থনৈতিক বোঝায় পরিণত হবে।