যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি ২.৪ শতাংশ
বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে অপ্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির সাক্ষী হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। এপ্রিল-জুন সময়ে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৪ শতাংশে, যা সর্বশেষ আইএমএফের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির চেয়ে বেশি। এর মধ্য দিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ১৬ মাস ধরে ফেডারেল রিজার্ভের যে প্রচেষ্টা, তার ফল দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। প্রভাব পড়েছে সুদহার বৃদ্ধির। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে দাবি করা হয়েছে, দেশটির জিডিপি জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ২ শতাংশের বেশি বেড়েছে। সর্বশেষ প্রান্তিকে অর্থনীতি সম্প্রসারণের পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল ১ দশমিক ৫ শতাংশ। গত প্রান্তিকের প্রবৃদ্ধি প্রভাবিত হয়েছে মূলত বিনিয়োগ বৃদ্ধির কারণে। আবাসন খাত বাদ দিলে ব্যবসায় ব্যয় বেড়েছে বার্ষিক ৭ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালের প্রথম দিকের পর এটাই সবচেয়ে দ্রুতগতির বৃদ্ধি। কোম্পানিগুলো উৎপাদনের পেছনে আরো বেশি বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় সরকার ব্যয় বাড়িয়েছে, যা এপ্রিল ও জুনজুড়ে অর্থনীতিকে বিস্তৃত হতে সহযোগিতা করেছে।
মার্কিন অর্থনীতির প্রাণ হলো ভোক্তা ব্যয়। দ্বিতীয় প্রান্তিকে পৌঁছে ভোক্তা ব্যয়ও ছিল স্বাভাবিক। বার্ষিক ১ দশমিক ৬ শতাংশ মন্থর হলেও প্রথম প্রান্তিকের তুলনায় দ্বিতীয় প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বেড়েছে ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তবে উচ্চ বাড়িসংশ্লিষ্ট খরচের কারণে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে আবাসন খাতে বিনিয়োগ। ফিচ রেটিংসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা ওলু সনোলার মতে, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষণীয়।
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি চার দশকের সর্বোচ্চে অবস্থান করে। মে মাসের পর থেকে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অন্তত ১১ বার বাড়িয়েছে সুদহার। ফলে বড় ধরনের ঋণে খরচ বেড়েছে। মর্টগেজ ও ক্রেডিট কার্ড থেকে শুরু করে গাড়ি ঋণ এবং আবাসন খরচ পর্যন্ত ছড়িয়েছে প্রভাব। চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল সংশোধিত প্রবৃদ্ধি প্রকাশ করেছে। ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস জানানো হয়েছে ১ দশমিক ৮ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির এ হার ২০২২ সালের প্রবৃদ্ধির চেয়ে কম, ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রবৃদ্ধি ছিল ২ দশমিক ১ শতাংশ। তার পরও আইএমএফের এপ্রিলে ঘোষিত পূর্বাভাসের চেয়ে বেশি এ প্রবৃদ্ধির পরিমাণ।
যুক্তরাষ্ট্রের চাকরির বাজার যথেষ্ট শক্তিশালী। জুনে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৬ শতাংশ। কভিড-১৯-পরবর্তী সময়ে অবসর গ্রহণের প্রবণতা দেশব্যাপী শ্রমশক্তির ঘাটতি হিসেবে দাঁড়িয়েছে। ফলে অনেক প্রতিষ্ঠানই নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে মজুরি বাড়িয়েছে কর্মী আকর্ষণে। উচ্চ বেতন ও চাকরি জীবনে নিরাপত্তা নাগরিকদের উদার করে খরচের ব্যাপারে। দেশের অর্থনৈতিক কার্যক্রমের ৭০ শতাংশ নিয়ন্ত্রিত হয় ভোক্তা ব্যয়ের মাধ্যমে। জানুয়ারি-মার্চ সময়ের মধ্যে বার্ষিক ৪ দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারণ হয়েছে কার্যক্রম। অর্থাৎ দুই বছরের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগতির বৃদ্ধি। মার্কিন নাগরিকদের ব্যয়ের বড় অংশজুড়ে রয়েছে উড়োজাহাজ ভ্রমণ, বিদেশে ঘুরতে যাওয়া, কনসার্ট ও মুভি থিয়েটারগুলো।
বার্ষিক মূল্যস্ফীতি ২০২২ সালের জুনে উন্নীত হয়েছিল ৯ দশমিক ১ শতাংশে। পরবর্তী সময়ে তা কমতে থাকে ধীরে ধীরে। মার্কিন অর্থনীতিবিদ রুবিলা ফারুকি দাবি করেছেন, ফেড তার প্রত্যাশিত পথেই এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি প্রকাশিত জিডিপির প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, দ্বিতীয় প্রান্তিকে পৌঁছে ভোক্তা ব্যয়ের সূচক দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৬ শতাংশে, যা প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে কম। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে ছিল ৪ দশমিক ১ শতাংশ।
অর্থনীতির সবচেয়ে দুর্বল জায়গা এখন পর্যন্ত আবাসন খাত। জুনে এ খাত ছিল তুলনামূলক মন্থর। বাসা বিক্রি বা ভাড়ার সংখ্যা কমে গেছে। ২০২২ সালের জুনের তুলনায় বিক্রি কমেছে ১৯ শতাংশ। বছরের প্রথমার্ধের তুলনা করলে ২৩ শতাংশ কমেছে বাসা বিক্রি। তার পরও অন্যান্য খাতে প্রাণ ফিরে পাচ্ছে অর্থনীতি।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/519873826.jpg[/IMG]