মিউচুয়াল ফান্ড ছেড়ে ইটিএফে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা
বিশ্বব্যাপী এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডের (ইটিএফ) পরিসম্পদ ১৫ ট্রিলিয়ন (প্রতি ট্রিলিয়নে ১ লাখ কোটি) ডলার ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তুলনামূলকভাবে আকর্ষণীয় হওয়ায় প্রথাগত মিউচুয়াল ফান্ড থেকে অর্থ তুলে নিয়ে ইটিএফে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে বিনিয়োগ ক্ষেত্রটিতে পরিসম্পদের আকার বাড়ছে। এতে নতুন রূপ পাচ্ছে বৈশ্বিক সম্পদ ব্যবস্থাপনা শিল্পও। গবেষণা প্রতিষ্ঠান ইটিএফজিআই জানিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ইটিএফে ১ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ হয়েছে। ফলে এ খাতে মোট পরিসম্পদ ২০২৩ সালের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। নতুন বিনিয়োগের বেশির ভাগই হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির ওয়াল স্ট্রিট পুঁজিবাজারের উত্থান থেকে মুনাফা অর্জন করতে ব্যবসায়ীরা ১ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ইটিএফ হলো স্টক, বন্ড বা অন্যান্য সম্পদের (যেমন স্বর্ণ) সমন্বয়ে তৈরি এক ধরনের বিনিয়োগ প্যাকেজ। কোনো ইটিএফে সাধারণত একই ধরনের বা খাতের শেয়ার, বন্ড কিংবা অন্যান্য সম্পদ অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রথাগত মিউচুয়াল ফান্ডের সঙ্গে মিল থাকলেও এটি সাধারণ শেয়ারের মতো ট্রেডিং আওয়ারে বেচাকেনা করা যায়।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/5284737.jpg[/IMG]
১৯৯০-এর শুরুর দিকে ইটিএফকে ‘নিষ্ক্রিয় বিনিয়োগ কৌশল’ হিসেবে দেখা হতো। তখন পরোক্ষভাবে বিভিন্ন শেয়ারবাজার সূচক পর্যবেক্ষণ (ট্র্যাক) ও তার সঙ্গে ইটিএফের পারফরম্যান্সকে অনুকরণ করা হতো। কিন্তু বর্তমানে ব্যবসায়ীরা সক্রিয় বিনিয়োগ কৌশল হিসেবে ইটিএফকে বেছে নিচ্ছেন। অর্থাৎ সচেতনভাবে নির্দিষ্ট খাতের শেয়ারসংবলিত ইটিএফ কিনতে পারেন। এক্ষেত্রে সরকারি বন্ড ও করপোরেট ঋণের ইটিএফগুলোয় আগ্রহ বেশি তাদের।
সিরুলি অ্যাসোসিয়েটসের পণ্য উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক ড্যানিল শাপিরো বলেন, ‘ইটিএফ এখন বিনিয়োগ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য অপরিহার্য হয়ে উঠছে। মিউচুয়াল ফান্ডের তুলনায় কম খরচ, উদ্ভাবনী কৌশল এবং একই সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের শেয়ার কেনার সুবিধার কারণে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে।’
যুক্তরাষ্ট্রভিত্ িক ব্ল্যাকরক, ভ্যাংগার্ড ও স্টেট স্ট্রিট বিশ্বের বৃহত্তম তিন ইটিএফ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এ তিন প্রতিষ্ঠান মার্কিন পুঁজিবাজার সূচক এসঅ্যান্ডপি৫০০ সূচক ট্র্যাক করে।
এসঅ্যান্ডপি৫০০ ছাড়া অন্যান্য সূচক ট্র্যাক করা ইটিএফগুলোও জনপ্রিয়। যেমন লিভারেজড ইটিএফের মাধ্যমে টেসলার শেয়ার থেকে শুরু করে কম দামের স্টক ও বিটকয়েন পর্যন্ত সবকিছুর ওপর বিনিয়োগ করার সুযোগ পান ব্যবসায়ীরা। এক্ষেত্রে দুই-তিন গুণ বা তারও চেয়ে লাভের সম্ভাবনা থাকে। অবশ্য এক্ষেত্রে লোকসানের ঝুঁকিও বেশি।
বিনিয়োগকারীরা দৈনিক ট্রেডিং আওয়ারের মধ্যে ইটিএফগুলো বেচাকেনা ও মূল্যায়নের সুবিধাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাছাড়া ইটিএফের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে কর সুবিধাও রয়েছে, যা একে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড তিন বছরে প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ হারিয়েছে।
তবে বিনিয়োগ কমলেও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার এখনো ইটিএফের তুলনায় অনেক বড়। বিশ্বব্যাপী ২১ দশমিক ৬ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিসম্পদ এর অধীনে রয়েছে। বিনিয়োগ উপকরণটি এখনো পেনশন অ্যাকাউন্টে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। তাছাড়া প্যাসিভ মিউচুয়াল ফান্ডগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোয় কিছুটা নগদ প্রবাহ আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে।
ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ শেলি অ্যানটোনিওয়িজ বলেন, ‘*আমি আশা করছি, সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠানগুলো একটি ভারসাম্যের দিকে এগিয়ে যাবে, যেখানে মিউচুয়াল ফান্ড ও ইটিএফ উভয় খাতে বিনিয়োগের যথেষ্ট সুযোগ থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘*প্রতিষ্ঠানগুলো বিষয়টি বিনিয়োগকারীদের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন, যাতে তারা নিজেদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও প্রয়োজনের সঙ্গে মানানসই বিকল্প বেছে নিতে পারেন।’
এদিকে ৩০টির বেশি সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে ইটিএফের মতো ক্রয়-বিক্রয়ের অনুমতি চেয়ে নিজ নিজ নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানের কাছে আবেদন করেছে। ভ্যানগার্ড এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে এবং এক্ষেত্রে সফলও হয়েছে। অবশ্য অন্য ফান্ড ম্যানেজারদের এ অনুমতি দেয়া হয়নি। এ কাঠামো অনুমোদন হলে বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড থেকে ইটিএফে বিনিয়োগের এক নতুন পথ খুলতে পারে।
শাপিরো বলেন, ’এ ধরনের বিনিয়োগ উপকরণগুলোর জন্য চলতি বছর সুখবর আসতে পারে। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ কমানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’ আগামী বছরের জানুয়ারিতে দায়িত্ব গ্রহণ করতে যাচ্ছেন তিনি।