সাড়ে ৬৩ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ও সেবা রফতানির লক্ষ্য প্রবৃদ্ধির আশা ১৬.৫%
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1939120409.jpg[/IMG]
সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল বাংলাদেশ। বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৪৮ দশমিক ২৮ বিলিয়ন ডলারের। যা লক্ষ্যমাত্রার ৯৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ। আবার ২০২৩-২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৮ দশমিক ৫৮ শতাংশ বেশি। চলমান ২০২৫-২৬ অর্থবছর শেষে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে সরকার, এক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এর সঙ্গে সাড়ে ৮ বিলিয়ন ডলারের সেবা রফতানির মাধ্যমে মোট রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ হয়েছে সাড়ে ৬৩ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
চলতি অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার জন্য গতকাল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এ ঘোষণা দেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সাম্প্রতিক অর্থবছরে রফতানি খাতে অর্জিত প্রবৃদ্ধির গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণ ও বহুমুখীকরণ, বিশ্ব বাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, ভূরাজনৈতিক প্রভাব, দেশীয় ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মধ্যপ্রাচ্য সংকট, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব, অংশীজনদের মতামত, বিগত অর্থবছরের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা এবং লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জনের হার ও পূর্ববর্তী অর্থবছরের তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার ইত্যাদি পর্যালোচনা করে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পণ্য খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৫৫ বিলিয়ন ডলারের রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সেবা খাতে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ১৮ দশমিক ৬৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৮ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সেবা খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৫০ বিলিয়নের বিপরীতে গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল পর্যন্ত রফতানি হয়েছে ৫ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারের, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৫ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে কম্পাউন্ড বার্ষিক বৃদ্ধির হার পণ্য খাতে হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৮ শতাংশ এবং সেবা খাতে ৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
তৈরি পোশাক খাতের ওভেন পণ্যে ১৪ দশমিক ৩১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ হাজার ৭৯ কোটি ডলারের রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। একই খাতের নিট পণ্যের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ২ হাজার ৩৭০ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হোম টেক্সটাইল খাতের ক্ষেত্রে বিশ্ববাজার আকৃতি, প্রবৃদ্ধি এবং নিজস্ব সক্ষমতার প্রেক্ষাপটের আলোকে ১৭ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১০২ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি খাত লেদার, লেদারগুডস ও ফুটওয়্যারে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রকৃত অর্জনের ওপর ১০ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে ১৮৫ কোটি ডলারের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বিশ্ববাজার পরিস্থিতি, রফতানি প্রবৃদ্ধি এবং এ খাতের সক্ষমতা বিবেচনায় এ খাতের রফতানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
হিমায়িত ও জীবন্ত মাছে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ। রফতানির লক্ষ্য ৫৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ খাতের নীতিগত সহায়তা, ভেনামি চিংড়ির হ্যাচারির লাইসেন্স প্রদান ও কোয়ারেন্টিন সুবিধা বৃদ্ধি করার বিষয়ে সরকারের যথাযথ সহায়তা ও সহযোগিতা পেলে প্রস্তাবিত হারের চেয়েও বেশি রফতানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করার বিষয়ে এ খাতের প্রতিনিধিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানিতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। রফতানির লক্ষ্য ৯০ কোটি ডলারের। পণ্যের গুণগত মান যাচাই করার জন্য ল্যাব টেস্টিংয়ের ওপর গুরুত্বারোপ এবং বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) সক্ষমতা বৃদ্ধির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে বাংলাদেশ এ খাতে একটি টেকসই পণ্য রফতানিকারক দেশ হিসেবে আবির্ভূত হবে বলে দাবি করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
কৃষিপণ্য রফতানির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১২১ কোটি ৪ লাখ ডলার। প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ। কার্গো বিমান, বিমানবন্দরে কুলিং সিস্টেম এবং ইডিএস মেশিনের বিষয়াদিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বারোপ করে অবকাঠামো উন্নয়ন করা সম্ভব হলে রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে মর্মে এ খাতের প্রতিনিধিরা উল্লেখ করেছেন বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
গতকাল লক্ষ্যমাত্রা ঘোষণার সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন তৈরি পোশাক রফতানি খাতের প্রতিনিধিরা।
এ সময় বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘যে লক্ষ্যমাত্রা দেয়া হয়েছে, আমরা মনে করি এটা অর্জনযোগ্য। আমাদের প্রত্যাশা এখন এর চেয়ে বেশি। কারণ ওনারা যে সাফল্য অর্জন করেছেন এবারের নেগোসিয়েশনে (যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টা শুল্ক চুক্তি) এটার একটা ভালো ফল আমরা প্রত্যাশা করছি। সে কারণেই আমাদের প্রত্যাশা বেড়ে গেছে। এর চেয়ে বেশি করার সুযোগ হয়তো সামনে আসবে। সেই সুযোগগুলো নিতে গেলে দেশীয় পর্যায়ে বেশকিছু সংকট আমাদের মোকাবেলা করতে হয়, এই সংকটগুলো যদি তারা অ্যাড্রেস করেন, নিশ্চিন্তে বলতে পারি এর চেয়ে বেশি আমরা করতে পারব। দেশীয় সংকটগুলোর মধ্যে গ্যাস সংকট আপনারা জানেন। ব্যাংক খাতে চরম সংকট চলছে আমাদের। নানা রকমের সমস্যা। এছাড়া কাস্টমসের কিছু সমস্যা আছে। আর সর্বোপরি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এই কয়টি জিনিস যদি ঠিক হয় আমরা লক্ষ্যের চেয়ে বেশি রফতানির জন্য প্রস্তুত হব।’
দেশীয় সংকটগুলো সমাধানের জন্য বাণিজ্য উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আপনি উদ্যোগ নিন, আমাদের সঙ্গে বসেন। কোথায় কী সমস্যা আছে এগুলো শুনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।’
বাণিজ্য সচিব বলেন, ‘ঘোষিত লক্ষ্যমাত্রার বিষয়ে আমরা সবসময়ই ঘোষণার পর পরই বিভিন্ন খাতের প্রধানদের সঙ্গে বসি। মোট ২২টি খাতের সঙ্গে আমরা বসি। অন্যান্য রফতানি খাতের অংশীজনদের সঙ্গেও আমরা বসব। সেই সময় প্রধান সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানোর উদ্যোগ নেব।’
সাংবাদিকরা পণ্য রফতানিতে ভারতের আরোপ করা বিধিনিষেধের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি মনে করি না রফতানির লক্ষ্যমাত্রার ওপর কোনো প্রভাব আসবে।’ ভারতের বিধিনিষেধের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমাদের দপ্তর থেকে ভারতের বাণিজ্যমন্ত্রীকে আমরা একটা চিঠি দিয়েছি, সার্বিক আলোচনার উদ্দেশে, এখনো জবাব পাইনি।’
আসন্ন এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন প্রেক্ষাপট লক্ষ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশ্যই নিয়ামক হিসেবে শুল্ক চুক্তি বা বিভিন্ন কিছু হচ্ছে, সেগুলোকে আমরা নিয়ামক হিসেবে নিয়েছি। আমরা নিজেরাও এখন তিনটা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (এফটিএ) করছি। জাপানের সঙ্গে করছি, দক্ষিণ কোয়িরা ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে করছি। আমরা তিনটা ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করছি। কোনো কোনো দেশের সঙ্গে ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট উপযোগী বা সহায়ক নাও হতে পারে। আমরা সিলেকটিভলি ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট করার চেষ্টা করছি। তাদের সঙ্গে এফটিএ করলে আমাদের সুবিধা হবে, এলডিসি হিসেবে আমাদের যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার প্রবেশাধিকার (প্রেফারেনশিয়াল মার্কেট অ্যাকসেস) আছে, এই জিনিসগুলো আমরা যতদিন সম্ভব ধরে রাখার চেষ্টা করছি। পরবর্তী সময়ে আমরা আরো কীভাবে প্রেফারেনশিয়াল মার্কেট অ্যাকসেস ধরে রাখতে পারি, সেই প্রচেষ্টায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’