এশিয়ার দিকে সরছে চীনা ইভি খাতের বিনিয়োগ
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1666872823.jpg[/IMG]
সর্বশেষ পাঁচ বছরে বিশ্বব্যাপী দ্রুত সম্প্রসারণ হয়েছে চীনা বিদ্যুচ্চালিত গাড়ির বাজার, এর সঙ্গে বেড়েছে এ খাতে বিদেশে বিনিয়োগ। সাম্প্রতিক সময়ে বিক্রির প্রবৃদ্ধি ধীর হওয়ার পাশাপাশি বিদেশে লগ্নির ধারায় পতন ঘটেছে। এখন বিনিয়োগের কেন্দ্র সরে এসেছে এশিয়ায়। আগে উচ্চ মূলধননির্ভর বিনিয়োগ করলেও এখন কম মূলধন লাগে এমন প্রকল্পে আগ্রহ দেখাচ্ছে চীনা কোম্পানিগুলো। ইভি সরবরাহ চেইনে পূর্ববর্তী প্রধান বিনিয়োগ ছিল ব্যাটারি ও কাঁচামাল সম্পর্কিত। উচ্চ মূলধননির্ভর এ প্রকল্পগুলো ২০২৩ সালে শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছায়। এখন বিদেশে নতুন বিনিয়োগ স্থিতিশীল অবস্থায় এসেছে। গত বছর ইভি খাতের চীনা কোম্পানিগুলো ১৪৪টি লেনদেনের ঘোষণা দিয়েছে, এগুলোর সম্মিলিত আকার ১ হাজার ৯৬০ কোটি ডলার, যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) মোট ১ হাজার ৪০ কোটি ডলারের ৬৪টি লেনদেনের ঘোষণা হয়েছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশ ছিল গাড়ি উৎপাদন কেন্দ্রভিত্তিক।
এ বিষয়ে রোডিয়াম গ্রুপের চায়না ডাটা সার্ভিসেস বিভাগের সিনিয়র রিসার্চ অ্যানালিস্ট আর্মান্ড মেইয়ার বলেন, ‘অধিকাংশ আপস্ট্রিম বিনিয়োগ পরিকল্পনা ইউরোপে ছিল, কিন্তু এখন সেখানে ধীরগতি এসেছে এবং অনেক প্রকল্প বাতিল হয়েছে।’
রোডিয়াম গ্রুপ এও বলেছে, চীনা কোম্পানিগুলোর বিদেশে বিনিয়োগের গতি এখনো স্থানীয় পর্যায়ের তুলনায় এগিয়ে থাকবে। কভিড মহামারীর পর গত বছর থেকে দেশটির প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগ (এফডিআই) বাড়তে শুরু করেছে। ২০২৪ সালে বিদেশে চীনা বিনিয়োগের এক-চতুর্থাংশই ছিল ইভি সরবরাহ চেইনে, যা ২০২১ সালে ছিল ৫ শতাংশ। এমন সময়ই চীনা সরকার ২০২৬ সালে যাত্রীবাহী ইভি রফতানি সীমিত করার পরিকল্পনা নিয়েছে।
ব্যাটারি নির্মাতা কোম্পানি সিএটিএল, বিওয়াইডি ও এনভিশন সর্বশেষ সাড়ে ১১ বছরে ইভি সরবরাহ চেইন সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ করেছে, যার বড় অংশ পেয়েছে ইউরোপ।
চীনা ব্যাটারি নির্মাতারা বলছে, ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে এ বছর নতুন বৈদেশিক বিনিয়োগ কমেছে। তবে বিদেশী বাজার এখনো লাভজনক। চীনের বাজারে তীব্র মূল্যযুদ্ধের কারণে মোট আয়ে বিদেশের হিস্যা বেড়েছে।
এক ব্যাটারি কোম্পানির কর্মকর্তা জানান, কোম্পানিগুলো এখন কম মূলধনি বিনিয়োগে মনোযোগ দিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রযুক্তি লাইসেন্সিং ও স্থানীয় উৎপাদনে অংশীদারত্ব।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপসহ অনেক অঞ্চলে বাণিজ্য সুরক্ষানীতির কারণে চীনের বাইরে সরবরাহ চেইন সরাচ্ছে কোম্পানিগুলো। এখনো চীনা ইভি বিনিয়োগের প্রধান গন্তব্য ইউরোপ হলেও এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যে বিনিয়োগ স্থানান্তর করছে তারা।
নিকেলের মতো কাঁচামালের বড় ভাণ্ডার থাকায় ইন্দোনেশিয়া এখন চীনা বিনিয়োগের বড় প্রাপক। দেশটির অনেক নিকেল খনি চীনা মালিকানাধীন এবং সম্প্রতি বড় একটি ইভি ব্যাটারি প্রকল্পে কৌশলগত অংশীদার হয়েছে হুয়াইও কোবাল্ট।
আর্মান্ড মেইয়ার বলেন, ‘ইন্দোনেশিয়া ব্যাটারি উপকরণ সরবরাহ ও ব্যাটারি সেল উৎপাদন করতে পারে। এটি একটি বড় বাজারও। তাই এখানে ইভি অ্যাসেম্বলির পরিকল্পনা হচ্ছে।’
২০২১-২২ সালে চীনের মূল ভূখণ্ডে ইভি খাতে বিনিয়োগের ঢেউ তৈরি হয়। এতে ব্যাটারি উৎপাদন সক্ষমতা দাঁড়ায় স্থানীয় চাহিদার দ্বিগুণ এবং বৈশ্বিক চাহিদার ১ দশমিক ২ গুণ। সাম্প্রতিক মাসগুলোয় চীনা কর্মকর্তারা ইভি ও সৌরবিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত সক্ষমতা ও মূল্যযুদ্ধ মোকাবেলার উদ্যোগ নিয়েছে।
এক ব্যাটারি কোম্পানির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সিনিয়র বিক্রয় ব্যবস্থাপক জানান, চীনা সরকার বিদেশে বিনিয়োগ কঠিন করে তুলেছে। জুলাইয়ে ব্যাটারি ক্যাথোড উপকরণের গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি রফতানির ক্ষেত্রে অনুমোদনের শর্ত আরোপ হয়েছে। এর আগে দুষ্প্রাপ্য খনিজ চুম্বক প্রযুক্তি রফতানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়।
কিছু বিশ্লেষক মনে করেন, চীনা কোম্পানিগুলোকে বিদেশী কারখানায় প্রযুক্তি ব্যবহারের ছাড়পত্র দেয়া হতে পারে। তবে বিদেশী প্রতিযোগীদের কাছে লাইসেন্স বিক্রির অনুমোদন দেয়ার সম্ভাবনা কম।