-
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট জগতের সবচেয়ে আলোচিত ও জনপ্রিয় নাম মেটাভার্স। এই প্ল্যাটফর্মে নিজেদের ব্যবসায় এগিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে নতুন সিইও নিয়োগ করেছে বিনোদন জগতের বিখ্যাত নাম, সিনেমা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ডিজনি। সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটি মাইক হোয়াইটকে নতুন সিইও হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে।
ডিজনি মাইক হোয়াইটকে প্রধানত মেটাভার্স প্রযুক্তিতে প্রতিষ্ঠানটির অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও ব্যবসায় এগিয়ে নেওয়ার কৌশল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এ কাজে মাইক হোয়াইট প্রতিষ্ঠানটির জ্যেষ্ঠ কয়েকজন কর্মকর্তাকে নিয়ে একটি দল পরিচালনা করবেন। যাদের কাজ হবে, মেটাভার্সে ডিজিনির ব্যবসায়িক কৌশল নির্ধারণ করা।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/578912641.jpg[/IMG]
-
মেটাভার্স নিয়ে অনেকদিন ধরেই ব্যাপক আলোচনা চলছে। এটি নাকি হবে এমন এক ত্রিমাত্রিক ভার্চুয়াল জগত, যেখানে আপনার এক অবতার বা প্রতিমূর্তি ঘুরে বেড়াবে। মেটাভার্সের পর এখন প্রযুক্তি দুনিয়ায় মানুষের ডিজিটাল যমজ কিভাবে তৈরি করা যায়, সেটা নিয়েও শুরু হয়েছে আলোচনা।*ডিজিটাল যমজ বলতে বোঝানো হচ্ছে বাস্তব পৃথিবীর কোন মানুষের হুবহু কপি, তবে এর একটা অনন্য উদ্দেশ্য থাকবে- বাস্তব জগতের মানুষটির কিভাবে আরও উন্নয়ন ঘটানো যায় অথবা তাকে বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো যায়।*শুরুর দিকে এরকম ডিজিটাল যমজরা হবে বাস্তব মানুষদের কম্পিউটারের তৈরি করা অত্যাধুনিক ত্রিমাত্রিক প্রতিমূর্তি। তবে এর সঙ্গে যখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) এবং ইন্টারনেট অব থিংস (যেখানে ঘরে-বাইরে দৈনন্দিন জীবনের সব জিনিসই ইন্টারনেটের সঙ্গে যুক্ত থাকবে) যুক্ত হবে, তখন ব্যাপারটা ভিন্ন মাত্রায় পৌঁছে যাবে। তখন আপনি ডিজিটাল প্রযুক্তি দিয়ে এমন যমজ তৈরি করতে পারবেন, যে বাস্তব মানুষটির কাছ থেকে সারাক্ষণ শিখবে এবং এরপর সেই শিক্ষা কাজে লাগবে বাস্তব মানুষটির উন্নতি সাধনে। ডিজিটাল যমজের ব্যবহার বরং এখন ব্যাপক এবং ভালোভাবে হচ্ছে পণ্যের ডিজাইন, বিতরণ এবং নগর-পরিকল্পনার ক্ষেত্রে। ফর্মূলা ওয়ান রেসিং এ ম্যাকলারেন এবং রেড বুল টিম তাদের গাড়ির ডিজিটাল যমজ ব্যবহার করে।*এদিকে ডিএইচএল এর মতো বিশাল ক্যুরিয়ার কোম্পানি এখন তাদের গুদামঘর এবং সাপ্লাই চেইনের একটি ডিজিটাল ম্যাপ তৈরি করছে যাতে কর্মদক্ষতা বাড়ানো যায়।*আর আমাদের শহরগুলোকে এখন আরও বেশি করে ডিজিটাল দুনিয়ায় তৈরি করা হচ্ছে। সাংহাই এবং সিঙ্গাপুর- এই দুটি নগরীরই ডিজিটাল যমজ আছে।এগুলো তৈরি করা হয়েছে শহরের দালান-কোঠা, পরিবহন ব্যবস্থা এবং রাস্তার নকশা থেকে শুরু করে নগর পরিচালনার কাজ যেন আরও উন্নত করা যায়, সেজন্যে।**
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/478587854.jpg[/IMG]
-
খেনি। ডিজিটাল বিশ্বের অন্যতম মাইলফলক মনে করা হচ্ছিল মেটাভার্সকে, কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মুখ থুবড়ে পড়া থেকে আর মাত্র কয়েক কদম দূরে আছে। মেটাভার্সের গল্প যেন শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে গেল। রিয়েলিটি ল্যাব অংশেই প্রায় ১৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খুইয়েছে এই প্রকল্প। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মেটার হরাইজন ওয়ার্ল্ডের প্রতি ভোক্তাদের তেমন একটা আগ্রহ নেই। বেশিরভাগ মানুষই প্রথম মাসের পর আর ভার্চুয়াল জগতে ফিরে যেতে চায় না। তাই দিন দিন ব্যবহারকারীর সংখ্যা একইরকম হারে কমছে। ভবিষ্যতের অন্যতম প্রযুক্তি হিসেবে মেটাভার্সের আশা দেখেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ, তবে বেশ কয়েকটি কারণেই সে আশার গুড়েবালি।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/541759946.jpg[/IMG]
এ লেখায় তার পেছনের সম্ভাব্য ১০টি কারণে সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে–
ঐক্যমতের অভাব: মেটা প্রকল্প থেকে মেটাভার্স সম্পূর্ণ আলাদা কোনো বিষয় নয়। কিন্তু এর আলাদাভাবে প্রভাব রাখতে চাওয়ার প্রবণতা কোম্পানির জন্য কিছুটা ক্ষতিকর। জাকারবার্গের 'ব্রেইনওয়েভ'-এর আগেও এটি ছিল। অগমেন্টেড রিয়েলিটি বা ভার্চুয়াল জগতের মধ্যে সেতুবন্ধনের বাইরেও এর একটি আলাদা উপস্থিতি রয়েছে।
সাধারণ আগ্রহের অভাব
সিএমসিওয়ার-এর সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪২ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের মধ্যেই মেটাভার্সের প্রতি তেমন কোনো আগ্রহ বা মনোযোগ দেখা যাচ্ছে না। অন্য ৩৯ শতাংশ বরং বিষয়টি ধীরে ধীরে আরও পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বুঝতে চাইছে। এ ক্ষেত্রে তারা অনেকটা 'কী হয়, দেখা যাবে' মনোভাবে বিশ্বাসী।
অপরিপক্ব পরিকল্পনা
মেটাভার্সের ভিআর তথা ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং এআর তথা অগমেন্টেড রিয়েলিটির পরিকল্পনায় রয়েছে বেশ অপরিপক্ব আচরণ। এর প্রকাশ ঘটে জাকারবার্গের সাম্প্রতিক এক ঘোষণার মাধ্যমে, যেখানে তিনি বলেন– 'মেটার অ্যাভাটারগুলোর জন্য পা তৈরি করা হয়েছে'। ডেমোতে থাকা অ্যানিমেশনকৃত এই পা সংযোজনের খবরটি খুব একটা ভালো সাড়া পায়নি বরং ইন্টারনেটের দুনিয়ায় হাস্যরসের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া মেটাতে সংযুক্ত থাকতে ভিআর হেডসেট ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তাও কিছুটা পরস্পরবিরোধী।
অপেক্ষাকৃত বৃহৎ প্রযুক্তির সহযোগিতা
মেটাভার্সকে একটি একক, মিথস্ক্রিয়ামূলক পরিবেশ গড়ে তুলতে হলে মেটা, আলফা, মাইক্রোসফট, অ্যাপল এবং অ্যামাজনের মতো কোম্পানিগুলোর সহযোগিতার প্রয়োজন হবে। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য মেটাভার্স এখনো পর্যন্ত শুধু একটি বাণিজ্যিক সম্ভাবনা। এতে বিভিন্ন ব্যবহারকারীর জন্য বিভিন্ন পরিবেশ সৃষ্টি হতে পারে। তা না করে অংশগ্রহণমূলক সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সাধারণ ক্ষেত্র নির্মাণ করা গেলে এটি ব্যবহারকারীদের জন্য আরও ভালো হবে।
ব্যবহারকারীর সংখ্যা
ইনস্টাগ্রাম, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপের মতো অন্যান্য অ্যাপের নতুন কিছু ব্যবহারকারী বৃদ্ধি হওয়া নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল এই কোম্পানিকে। অন্যদিকে এ বছর এর মূল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ ফেসবুকের এক মিলিয়নের মতো ব্যবহারকারী সংখ্যা কমেছে। ব্যবহারকারীর সংখ্যা যথেষ্ট বৃদ্ধি না পাওয়াও মেটাভার্সের মুখ থুবড়ে পড়ার একটি বড় কারণ।
ভিআর নিয়ে অযথা মাতামাতি
মার্ক জাকারবার্গ যখন মেটাভার্সের ভার্চুয়াল রিয়েলিটিকে পুনরায় ব্র্যান্ডের আওতায় আনেন, তখন এর বহু চমকপ্রদ দিক দেখা যায়। কিন্তু সেই দিকগুলো শুধুমাত্র বিটস্যাবার বা বেটাম্যাক্স ভিডিওর মতো অনলাইন গেইমেই কার্যকর হয়। ভিআর নিয়ে যতটা বেশি মাত্রায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা সম্ভব ছিল, তা হয়নি। মাতামাতিই হয়েছে বেশি।
বিনিয়োগকারীদের উদাসীনতা
মেটা সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা লাভ বা এর বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বুঝতে পারা বিনিয়োগকারীদের জন্য এখন অনেকটা গোলকধাঁধার মতো। বিশেষত এমন সময়ে, যখন শেরিল স্যান্ডবার্গের মতো অগ্রজদের হারাচ্ছে এই কোম্পানি। স্বল্পমেয়াদে ফিরতি অর্থের যোগান না পাওয়ার দরুণ বিনিয়োগকারীরা এই কোম্পানির ক্ষেত্রে নতুন করে আর তেমন আগ্রহ পাচ্ছেন না।
অ্যাপলের নিরাপত্তা ঢাল
সম্প্রতিকালে অ্যাপল একটি অ্যাপ ট্র্যাকিং ট্রান্সপারেন্সি ব্যবস্থার জানান দিয়েছে। এতে করে আইফোন ব্যবহারকারীরা তাদের অনলাইন কার্যক্রমকে ফেসবুকের মাধ্যমে নজরদারি করতে পারে। এই চলমান নজরদারির ফলে মেটার ব্যবসায় ভালোরকম মন্দা দেখা দেবে।
বিজ্ঞাপন রাজস্বে গুগলের থাবা
মেটার মতো গুগল ব্যবহারকারীদের তথ্যের জন্য অ্যাপলের ওপর অতটা নির্ভরশীল নয়। ওয়েনারের মতে, মেটার বিজ্ঞাপন ক্ষেত্রের চাইতে গুগলের কাছে অনেক বেশি পরিমাণে থার্ড পার্টি তথ্য বিদ্যমান। আর সেজন্যই বেশিরভাগ বিজ্ঞাপনদাতা গুগলে স্থানান্তরিত হন।
টিকটকের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
বর্তমানে মেটার সঙ্গে অনেকটা সাদৃশ্যপূর্ণ একটি ক্ষেত্র তৈরি করছে টিকটক। এতে মেটাভার্সের হার্ডওয়্যার, সফটওয়্যার এবং কনটেন্ট– সবকিছুর সমন্বয় ঘটেছে। এর ব্লকচেইন ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এতটাই সক্ষম যে মেটার অস্তিত্ব এখন এতটাই হুমকির মুখে পড়েছে যে সিইও নিজেই তার কর্মচারীদের বলেছেন টিকটক ভিডিও তৈরি করতে।