-
1 Attachment(s)
[ATTACH=CONFIG]6727[/ATTACH]
একটি খুশির খবর হল চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর মধ্যে চলা তিক্ত ‘ট্রেড ওয়ার’ ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুই দেশের প্রতিনিধিরা। গত শনিবার আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্সে দেশ দুটির প্রেসিডেন্টের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের মিটিংয়ের পর এই সিন্ধান্ত গ্রহন করা হয়েছে। যদিও শিল্পোন্নত দেশগুলোর জি-২০ সম্মেলনে যাওয়ার আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগামী ১ জানুয়ারি থেকে ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা আমদানি পণ্যে শুল্কের হার ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার হুমকি দিয়েছিলেন। কিন্তু শনিবার বুয়েন্স আয়ার্সের বৈঠকের পর ওই পদক্ষেপ ‘এখনি কার্যকর করা হচ্ছে না’ বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস। দু্ই দেশের মধ্যকার বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ কৃষি, জ্বালানি, শিল্পপণ্যসহ অন্যান্য পণ্য কেনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলেও ভাষ্য তাদের। “দ্রুতই চীন আমাদের কৃষকদের কাছ থেকে কৃষি পণ্য কিনবে,” বিবৃতিতে এমনটাই জানানো হয়। বাধ্যতামূলক প্রযুক্তি স্থানান্তর, মেধাসত্ত্ব আইনের সংরক্ষণ, শুল্কমুক্ত বাধা, সাইবার অনুপ্রবেশ ও চুরি, কৃষি এবং চাকরিখাতের অবকাঠামোগত পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা শুরুর ক্ষেত্রেও দুই নেতা সম্মত হয়েছেন। এ ‘লেনদেন’ আগামী ৯০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন হতে হবে, নাহলে চীনা পণ্যের ১০ শতাংশ শুল্ক ২৫ শতাংশেই উন্নীত হবে বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউস।
-
বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্বকারী ২০টি শিল্পোন্নত দেশকে নিয়ে প্রতিষ্ঠিত জি২০’র এবারের জি২০ সম্মেলনটি কেন্দ্র করে তিন মাসের জন্য বানিজ্য যুদ্ধ স্থগিত করেছে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে দুই দেশই আলোচনার মাধ্যমে এর একটি স্থায়ী সমাধানে পৌছাতে একমত হয়েছে। ডব্লিউটিওর বিষয়ে প্রথমবারের মতো আলোচনায় সম্মত হয়েছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের আগের হুমকিগুলো বিবেচনায় নিলে জি২০ সম্মেলনে ডব্লিউটিও সংস্কারের ব্যাপারে ঐকমত্যের মতো বিষয়টি সত্যিই বেশ মজার।
-
বাণিজ্যযুদ্ধ ৩ মাসের জন্য বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে চীন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে বলে আশা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিশেষ করে মার্কিন গাড়ি আমদানিতে ট্যারিফ কমানো এবং মেধাসম্পদ চুরি ও বাধ্যতামূলক প্রযুক্তি স্থানান্তর বন্ধের মতো প্রতিশ্রুতির অতি শীগ্রই বাস্তবায়ন দেখতে চায় দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের তাগিদ দিলেও চীন এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংসহ চীনের অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তা সফরের কারণে দেশের বাইরে থাকায় এমনটা হচ্ছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় বাস্তবিক অর্থে কবে নাগাদ দুই দেশের বিবাদ ঘুচবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার প্রভাবে মঙ্গলবার এশিয়ার বেশির ভাগ শেয়ারবাজারে পতন দেখা যাচ্ছে।
-
দুই পক্ষের বাণিজ্য বিবাদ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে গত সপ্তাহে একমত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির সম্পর্কে টানাপোড়েন অব্যাহত রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী চীন খুব দ্রুত তাদের থেকে পণ্য কেনা শুরু করবে, কিন্তু বেইজিং এখনো এ বিষয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চীনের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড ছাড়িয়ে নভেম্বরে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫৬০ কোটি ডলার। যদিও এ সময় চীনের আমদানি ও রফতানি দুটিতেই শ্লথগতি ছিল। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির বাণিজ্যে এ পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা হ্রাসের বিষয়টিকেই ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ অবস্থায় ধারণা করা হচ্ছে, প্রবৃদ্ধি হারে আরো পতন ঠেকাতে চীনা কর্তৃপক্ষ অতিরিক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে
-
সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মিটিংয়ে ৯০ দিন পর্যন্ত শুল্ক আরোপ থেকে বিরত থাকার বিষয়ে একমত হবার পর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে গাড়ি আমদানিতে শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে চীন। গত মে মাসে ওয়াশিংটনে আলোচনার পর যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক হুমকি বন্ধে একমত হয়। চীন সে সময় বিদেশী গাড়ি আমদানিতে শুল্ক ২৫ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়। মার্কিন যুক্তরাষ্টের মন্ত্রিসভা বিষয়টি পর্যালোচনা করবে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা এ সময় মার্কিন গাড়ির ওপর শুল্ক কমানোর ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেছে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছে বলে জানিয়েছে চীন। জি২০-এর বুয়েন্স আয়ার্স সম্মেলনে ৯০ দিনের জন্য একে অন্যের পণ্যে শুল্ক আরোপ থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছিল উভয় পক্ষ। গত সপ্তাহে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে ফোনালাপের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ার জবাবে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। দেশটি বলছে, গত ডিসেম্বরে পৌঁছানো ‘গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা’ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করতে প্রস্তুত তারা। কয়েক মাস ধরে তীব্র বাণিজ্যযুদ্ধের পর উভয় পক্ষের মধ্যে ইতিবাচক সম্পর্কের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
-
চীন-মার্কিন বাণিজ্য যুদ্ধের প্রভাবে কমতে শুরু করেছে নামীদামী ব্র্যান্ডের বিক্রি আর আয়। বিক্রি কমে গেছে আইফোনের। যা কমিয়ে দিয়েছে অ্যাপলের আয়। আয় কমার তালিকায় আছে বিশ্বখ্যাত চেইনশপ স্টারবাকস, কুরিয়ার সেবা প্রতিষ্ঠান ফেডএক্স, জার্মান গাড়ি নির্মাতা মার্সিডিজ বেঞ্জ আর বিএমডব্লিউও। গত ডিসেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতে কর্মতত্পরতা দুই বছরের সর্বনিম্নে নেমে এসেছে। নতুন করে ক্রয়াদেশ ও কারখানাগুলোয় কর্মসংস্থান হ্রাস পাওয়ায় ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে চীন ও ইউরোপের ধীর প্রবৃদ্ধির মতো যুক্তরাষ্ট্রও একই দিকে ধাবিত হচ্ছে। এদিকে উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে আগামী সপ্তাহে বেইজিংয়ে এক বৈঠকে বসতে যাচ্ছে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র।
-
দুই অর্থনৈতিক মহাশক্তির মধ্যে বিভিন্ন সময়ে দ্বন্দ্বের মধ্যে সম্প্রতি বছরে তারা লিপ্ত হয়েছে বাণিজ্য যুদ্ধে। বিশ্বের দুই শক্তিশালী দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত বছর উভয় দেশ একে অপরের পণ্য রপ্তানিতে বিলিয়ন ডলারে শুল্ক আরোপ করে। বৈশ্বিক অর্থনীতিতে ও উভয় দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। তবে এই বাণিজ্য যুদ্ধের অবসানের জন্য এবার আলোচনায় বসছে দেশ দুটি। সোমবারে চীনের রাজধানী বেইজিং এ বাণিজ্য যুদ্ধের সমঝোতার জন্য দেশ দুটি ৯০ দিনের জন্য একে অপররের শুল্ক আরোপ করবে না এমন চুক্তির পর এই প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে দুই দিনের আলোচনায় বসতে যাচ্ছে।
-
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ওয়ার যদি আরেকটু বৃদ্ধি পায় তাহলে এটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে এবং বৈশ্বিক অর্থনীতিতে তীব্র মন্দা দেখা দেবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যদিও বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা এবং কঠোর আর্থিক পরিস্থিতি সিংহভাগ দেশের অর্থনীতির কার্যক্রমকে আক্রান্ত করছে। চলতি মাসে পাঁচশর বেশি অর্থনীতিবিদকে নিয়ে রয়টার্সের সর্বশেষ মতামত জরিপে ৪৬টি অর্থনীতির মধ্যে ৩৩টির চলতি বছরের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস হ্রাস করা হয়েছে এবং ১০টি অর্থনীতির পূর্বাভাস অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। কেবল তিনটি ছোট অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস সামান্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। এছাড়া সিংহভাগ অর্থনীতির চলতি বছরের মূল্যস্ফীতি পূর্বাভাসও কমিয়ে লোয়ার লো এবং লোয়ার হাইয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে গত বছর প্রায় তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল প্রবৃদ্ধির দেখা পেয়েছে চীন। এদিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির সর্বশেষ মন্থরতার আভাসে গত ছয় মাসে ড্রাই-বাল্ক ও কনটেইনার জাহাজের পরিবহন ভাড়ায় উল্লেখযোগ্য পতন দেখা গেছে।
-
অর্থনৈতিক ধীরগতির কারণে চলতি বছরও পতনের মুখে পড়তে পারে চীনের ভোক্তা প্রবৃদ্ধি। আর এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য বিরোধে থাকা দেশটির অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরো বাড়তে যাচ্ছে। ভোক্তা প্রবৃদ্ধির পতনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ব্যবসা ও বিনিয়োগে বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব ঠেকাতে এরই মধ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে চীনা কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক শ্লথগতি ঠেকাতে দেশটির বিশাল ভোক্তাশ্রেণীর ওপরও নির্ভর করছে কর্তৃপক্ষ
-
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতি। দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিশ্ব অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কয়েক দশকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নত হলেও বাণিজ্যনীতি নিয়ে সাম্প্রতিক বিরোধের কারণে এ সম্পর্কে ফাটল ধরেছে। বিশ্ব বাণিজ্যে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনের সর্ববৃহৎ রফতানি বাজার ও ষষ্ঠ আমদানিকারক দেশ। অন্যদিকে চীন যুক্তরাষ্ট্রের দ্রুতবর্ধনশীল রফতানি বাজার ও সর্ববৃহৎ আমদানিকারক দেশ। বিবদমান দেশ দুটির মধ্যকার শুল্ক বিরোধ বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে নাড়া দিতে পারে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
-
১লা মার্চ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট এবং চীনের মধ্যে ৩ মাসের অস্থায়ী ট্যারিফ ডিলটি শেষ হবে। এখন দুই দেশের মধ্যে একটি চুড়ান্ত ডিল হতে পারে, অবশ্য এটা কোন নিদিষ্ট মাসের জন্য থাকবে না। আর এই ডিল যত দেরী হবে অন্য অর্থনীতিগুলো তত বেশি সুবিধা পাবে। এর মধ্যে জাপান ও জার্মান অন্যতম।
-
আগামী ১ মার্চের মধ্যে কোনো একটি চুক্তিতে পৌঁছার ক্ষেত্রে ট্রাম্পের বেঁধে দেয়া সময়সীমা শেষ হওয়ার আগে চূড়ান্ত দফা আলোচনা গত শুক্রবার শেষ হওয়ার কথা ছিল। স্পষ্টত উভয় পক্ষ আলোচনায় কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারায় চীনের প্রতিনিধি দলের প্রধান উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হি যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানীতে অবস্থানের সময় আরো দুদিন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। শুক্রবার লিয়ু হি ও নিজ ক্যাবিনেটের মন্ত্রিদের পাশে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ইঙ্গিত দেন বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যকার আলোচনায় যদি অগ্রগতি দেখা যায়, তাহলে ১ মার্চের সময়সীমা তিনি এক মাস বা তারও বেশি বাড়াতে প্রস্তুত রয়েছেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সমঝোতায় পৌঁছতে সক্ষম হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে শি জিনপিং ও ট্রাম্প দ্বিপক্ষীয় চুক্তিতে স্বাক্ষর করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। ট্রাম্প আশা করছেন, চুক্তির বিষয়টি ‘অত দূরে নয়’ এবং তিনি মনে করেন চুক্তি না হওয়ার চেয়ে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এদিকে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিয়ু হি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শিগগিরই চুক্তি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিন ইঙ্গিত দেন, শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ফ্লোরিডার মার-অ্যা-লাগো রিসোর্টে মার্চের শেষের দিকে আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে পারে।
-
উভয় দেশের মধ্যকার এ বাণিজ্যযুদ্ধ দুই দেশের অর্থনীতিসহ বিশ্ব অর্থনীতিতে বেশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আর গত শনিবার থেকে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে কারেন্সী রেট দরকষাকষি নিয়ে আলোচনা চালিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন।বেইজিং ইচ্ছেমতো ইউয়ানের মান অবমূল্যায়ন করবে না, ওয়াশিংটনের এ দাবি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে এখনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়নি। বিষয়-সংশ্লিষ্ট চারটি সূত্র জানিয়েছে, উভয় পক্ষ মুদ্রাচুক্তিসহ বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে কোনো চুক্তিতে উপনীত হতে পারেনি।
উল্লেখ্য যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট চীনের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার হুমকি দিলেও শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরো তিক্তকর অবস্থায় পৌঁছানোর বিষয়টি এড়াতে সময়সীমা মাসখানেক বাড়ানোরও ইঙ্গিত দিয়েছেন।
-
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, ১ মার্চের মধ্যে দুই দেশ কোনো চুক্তিতে না পৌঁছলে ২০০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর শুল্কহার ১০ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করবে ওয়াশিংটন। এখন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন ট্রাম্প, এছাড়াও ট্রাম্প শিগগিরই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বৈঠকের মাধ্যমে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করবেন। তাই যদি সবকিছু ঠিকমতো এগোয়, তাহলে আগামী এক বা দুই সপ্তাহের মধ্যে বড় কোন সংবাদ পাব। যদিও এই সংবাদের পর থেকেই এশিয়ার শেয়ারমার্কেটে লেনদেনের শুরুতেই সূচক বাড়তে দেখা যায়। সাংহাই কম্পোজিট সূচক বেড়েছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ এবং টোকিও নিক্কেই ২২৫ সূচক বেড়েছে শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ।
-
গত শুক্রবার এক টুইটে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতির দাবি করে মার্কিন গরুর মাংস, শূকরের মাংসসহ কৃষিপণ্যে শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য চীনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। ফলে মার্চের ১ তারিখ থেকে চীনের পণ্যে শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করার হুমকি থেকে বিরত হলেন ট্রাম্প। গত বছর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন কৃষিপণ্যে পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছিল চীন। গত জুলাইয়ে সয়াবিন, গরুর মাংস, শূকরের মাংস ও মুরগির মাংসসহ প্রথম দফায় ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলারের মার্কিন পণ্য আমদানিতে ২৫ শতাংশ পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ হয়েছিল। যদিও ট্রাম্পের আহ্বান সম্পর্কে চীনের বাণিজ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্লুমবার্গ শনিবার ফ্যাক্স ও টেলিফোন করলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি।
-
গত আট মাসের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ২৫ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনও পাল্টাপাল্টি ১১ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপ করে। এর ফলে বৈশ্বিক বাণিজ্যে অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়, ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সাপ্লাই চেইন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য রফতানি সংকুচিত হয়। সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্র ট্রেডওয়ার বন্ধ হবার জন্য একটি চুড়ান্ত চুক্তির কাছাকাছি চলে এসেছে। বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যকার বাণিজ্য আলোচনায় অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আনতে চীন সম্মত হলে বেইজিংয়ের ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ থেকে বিরত থাকতে সম্মত হয়েছে ওয়াশিংটন। যা আগামী ২৭ মার্চের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে পারেন।
-
যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিবিদদের দ্বারা গঠিত একটি দলের গবেষণ ‘ দ্য রিটার্ন টু প্রটেকশনিজম’ এ দেখা যায় নের মতো দেশগুলোর সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে আদতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মার্কিন অর্থনীতিই। কেননা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ২০১৮ সালে জিডিপিতে ৭৮০ কোটি ডলার হারিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এ যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের কর্মসংস্থান, প্রযুক্তি ও মেধাসম্পত্তি রক্ষা করছে। মুলত ট্রাম্পের ‘লক্ষ্যবস্তু করা’ দেশগুলো থেকে আমদানি কমেছে ৩১ দশমিক ৫ শতাংশ, যখন ‘লক্ষ্যবস্তু হওয়া’ যুক্তরাষ্ট্রের রফতানি কমেছে ১১ শতাংশ। এছাড়াও আমদানির উচ্চতর ব্যয়ের কারণে বার্ষিক ভোক্তা ও উৎপাদকদের বার্ষিক মোট ক্ষতি হয়েছে ৬ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
-
মার্কিন-চীন বাণিজ্য চুক্তি হলেও বিশ্বের শীর্ষ এ দুই অর্থনীতির মধ্যকার দ্বন্দ্বের যে ইতি ঘটবে, সে সম্ভাবনা ক্ষীণ। গত বছর থেকে এ দুই দেশ বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত, যার নেতিবাচক প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে পড়ছে। তবে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এ দুই অর্থনীতির মধ্যে দ্বন্দ্ব শুধু বাণিজ্য নিয়ে নয়, তার চেয়েও বেশি কিছু। বাণিজ্যযুদ্ধ এ দুই দেশের ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে প্রতিফলিত করছে। চুক্তি হোক আর না-ই হোক, আশঙ্কা করা হচ্ছে দুই দেশের দ্বন্দ্বের তীব্রতা আরো বাড়বে এবং সমস্যার সমাধান কঠিনতর হয়ে উঠবে। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ইউরেশিয়া গ্রুপের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মাইকেল হারসন বলেন, আমরা একটি নতুন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্রবেশ করেছি; যেখানে মার্কিন-চীন ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে এবং আরো বেশি করে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, মার্কিন-চীন ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে কিছুটা হ্রাস করতে পারে একটি বাণিজ্য চুক্তি, তবে এর প্রভাব হবে সাময়িক ও সীমিত।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন-চীন দ্বন্দ্ব প্রযুক্তি খাতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে, কেননা বিশ্বের প্রযুক্তি নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে উভয় দেশই চেষ্টা করছে। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বিশ্বের সর্ববৃহৎ এ দুই অর্থনীতির মধ্যে যে বাণিজ্য আলোচনা হয়েছে, সেখানে প্রধান ইস্যুগুলো ছিল মূলত প্রযুক্তিসংশ্লিষ ট।
-
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে দীর্ঘদিনের বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আয়োজিত *দুই দিনব্যাপী বাণিজ্য আলোচনা কোনো ধরনের চুক্তি ছাড়াই গত শুক্রবার শেষ হয়েছে। যদিও ওয়াশিংটনে এ আলোচনার মাধ্যমে বিশ্বের দুই বৃহৎ অর্থনীতির মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে অর্থনীতিতে উত্তেজনা হ্রাসের ছিলো। কিন্তু এই বাণিজ্য আলোচনা চলাকালেই চীন থেকে আমদানিকৃত ২০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এ ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বেইজিং বলেছে, তারাও পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। এতে করে বিশ্ব অর্থনীতি বড় ধরনের একটি ধাক্কা খেতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
-
চীন-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মোড় নিয়েছে। একটি বাণিজ্য চুক্তির জন্য বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে আলোচনা চলমান থাকলেও দুই পক্ষের মধ্যে মতভেদ বেড়েই চলেছে। এদিকে একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছার জন্য চীনকে এক মাস সময় বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়ায় চীন প্রথমবারের মতো স্পষ্ট করে জানাল, বাণিজ্যযুদ্ধ নিরসনে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে তারা কী ধরনের পদক্ষেপ প্রত্যাশা করছে।
-
নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রের ৬ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় বিশ্বের প্রধান শেয়ারবাজারগুলোয় ব্যাপক দরপতন লক্ষ করা গেছে। চীনা ঘোষণার প্রথম প্রভাব পড়ে ওয়াল স্ট্রিটে। এরপর গতকাল বিশ্বের অন্যান্য প্রধান শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা দেয়। চীন পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে বাণিজ্য সংঘাত আরো তীব্রতর হবে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের এই হুমকি অবজ্ঞা করে চার সহস্রাধিক মার্কিন পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। গত শুক্রবার কোনো চুক্তি ছাড়া আলোচনা শেষ হলে ২০ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে বেইজিংয়ের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের আরো ৩০ হাজার কোটি ডলারের পণ্যে নতুন করে শুল্ক আরোপের প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাম্প।
-
সম্প্রতি চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পুনরায় বাণিজ্য উত্তেজনায় সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় বড় করপোরেশনগুলোর চেয়েও বেশি ক্ষতির শঙ্কায় রয়েছে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত স্বল্প মূলধনের ছোট মার্কিন কোম্পানিগুলো। বছরের বাকি অংশে তাদের জন্য আরো কঠিন হিসাব-নিকাশ দেখা দিতে পারে। ২০১৯ সালের দ্বিতীয়ার্ধে অল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোর জন্য এসঅ্যান্ডপি-৫০০ সূচকে আয় বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল ওয়াল স্ট্রিট। কিন্তু বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ তিক্ততর হওয়ায় সে আশায় গুড়ে বালি দেখা যাচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলোর তুলনায় ছোট কোম্পানিগুলো বৈদেশিক বিক্রির ওপর কম নির্ভর করে বলে কিছু বিনিয়োগকারী অল্প মূলধনের কোম্পানিগুলোকে কম নাজুক মনে করছিল। কিন্তু চীনা আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল শুল্ক আরোপের ফলে যদি দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে ছোট কোম্পানিগুলোও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কারণ বড় বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর তুলনায় অনেক সময়ই ছোট কোম্পানিগুলোর আর্থিক নিরাপত্তা দুর্বল। যেহেতু অনেক মার্কিন কোম্পানি বিদেশী সরবরাহকারীদের ওপর নির্ভরশীল, শুল্ক বৃদ্ধিতে তাদের আমদানি পণ্যের দাম অনেক বেশি পড়বে।
-
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ট্রেড ওয়ার বা বাণিজ্য যুদ্ধের জের ধরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এর প্রায় ২০০টি মার্কিন সংস্থা শীঘ্রই তাদের পণ্য উৎপাদনের মূ্*ল ঘাঁটি চিন থেকে ভারতে সরিয়ে নিতে চাইছে। মুলত কমিউনিস্ট শাসনে থাকা চিনের তুলনায় ভারত তাদের কাছে অনেক বেশি পছন্দের হয়ে উঠেছে। আপাতত ভারতে সাধারণ নির্বাচনের পর্ব চলছে। এটা শেষ হবার পর সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শেষ হলেই সংস্থাগুলি এ বিষয়ে চুড়ান্ত পদক্ষেপ নিবে। এবিষয়ে ইউএসআইএসপিএফ-এর প্রেসিডেন্ট মুকেশ আঘি জানিয়েছেন যে শীর্ষস্থানীয় আমেরিকান গোষ্ঠী ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র*্যাটেজিক অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফোরাম (ইউএসআইএসপিএফ) এর সাথে কীভাবে ভারতে লগ্নি করা যায়, তা নিয়ে তাদের সঙ্গে সংস্থাগুলি আলাপ আলোচনা চালাচ্ছে।
-
ট্রাম্প বলছেন, চলতি মাসের শেষ দিকে ওসাকায় জি২০ সম্মেলনে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে বসতে যাচ্ছেন। তবে চীনের পক্ষ থেকে বরাবরই এ দাবি অস্বীকার করা হচ্ছে। চীনের সমঝোতাকারী দলের এ সদস্য বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মনে করছে, বাণিজ্যবিরোধ আরো কঠোর করার মাধ্যমে চীনকে চুক্তিতে পৌঁছতে বাধ্য করা যাবে, যা আসলে অসম্ভব কল্পনা। চীনের ওপর জোর করে কোনো বাণিজ্য চুক্তি চাপিয়ে দিতে পারে না যুক্তরাষ্ট্র।
উল্লেখ্য যে অর্থনৈতিক নীতিতে কাঠামোগত সংস্কারে নিয়ে আসার পূর্বপ্রতিশ্রুতি থেকে চীন সরে এসেছে—যুক্তরাষ্ট র গত মাসে এ অভিযোগ তুললে পরিস্থিতি তিক্ত আকার ধারণ করে। পরবর্তী সময়ে চীনের আরো ২০ হাজার কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানিতে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে। চীনও পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ৬ হাজার কোটি ডলারের মার্কিন পণ্যে শুল্ক বৃদ্ধি করে।
-
চলমান চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ ধাপে ধাপে অনেক দূর গড়িয়েছে। সর্বশেষ হুয়াওয়ে-কেন্দ্রিক ঘটনা ও প্রতিপক্ষের পণ্যের ওপর প্রতিশোধমূলক পাল্টাপাল্টি শুল্কারোপ ছিল এ বাণিজ্যযুদ্ধের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দুটি পর্ব। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ এরই মধ্যে বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে, বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দুই দেশের চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে দুর্লভ খনিজ পদার্থকেন্দ্রিক বিশ্ববাণিজ্য। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে ১৭ ধরনের দুর্লভ খনিজ পদার্থকেন্দ্রিক বিশ্ববাণিজ্যে কিছুটা অস্থিরতা দেখা দেবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। এসব দুর্লভ খনিজ পদার্থ রোবটিকস, ড্রোন ও বৈদ্যুতিক গাড়ির মতো উচ্চপ্রযুক্তিনির ভর পণ্য তৈরিতে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
-
গতকাল ট্রাম্প ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের মধ্যে বহুল প্রত্যাশিত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বলতে গেলে গোটা বিশ্বের নজর ছিল এর দিকে। সবার প্রত্যাশা, এ বৈঠকের মাধ্যমে বিশ্বের দুই শীর্ষ অর্থনীতির মধ্যকার বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমিত হওয়া শুরু হবে। অর্থাৎ বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা আর বাড়বে না। এ দ্বন্দ্বের কারণে উভয় দেশের কোম্পানিগুলো এরই মধ্যে কোটি কোটি ডলার লোকসানে পড়েছে, ম্যানুফ্যাকচারিং ও পণ্য সরবরাহ শৃঙ্খলে বড় ধরনের ব্যাঘাত ঘটছে। তাই এবার নতুন করে বাণিজ্য আলোচনা আবারও শুরু করতে সম্মত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এবং চীনা রফতানির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপ করবে না ওয়াশিংটন। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা সিনহুয়া গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, আলোচনা নিয়ে তারা ‘ছন্দে ফিরতে শুরু করেছেন’। তবে কবে নাগাদ দুই দেশের মধ্যে ফের আলোচনা শুরু হতে পারে, সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
-
মার্কিন-চীন বাণিজ্য বিরোধ এশিয়ার ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে ক্রমে চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। এ পরিস্থিতিতে চলতি বছরের জুনে এশিয়ার অধিকাংশ দেশের কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত হতে দেখা গেছে। এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দ্বৈরথের মধ্যে একটি বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতি এড়াতে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণেরও চাপে রয়েছেন নীতিনির্ধারকরা। জাপানের ওসাকায় জি২০ নেতাদের সম্মেলনের পর ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জরিপ পাওয়া গেল। শনিবার জি২০ সম্মেলনের শেষ দিন বিশ্বনেতারা মন্থর বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি এবং ভূরাজনৈতিক ও বাণিজ্য উত্তেজনার তীব্রতা বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছেন। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনো নতুন শুল্কারোপ না করা এবং চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি হুয়াওয়ের নিষেধাজ্ঞা শিথিলসহ বেশকিছু ছাড়ের ঘোষণা দিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে জি২০ সম্মেলনে বাণিজ্য আলোচনা পুনরায় শুরু করতে সম্মতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। ট্রাম্পের এ ঘোষণা ও বাণিজ্য বিরোধ নিরসনে আলোচনা পুনরায় শুরুর সম্ভাবনা ব্যবসায়ী ও আর্থিক বাজারগুলোকে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে।
তবে এ যুুদ্ধবিরতি দীর্ঘমেয়াদে উত্তেজনা প্রশমিত করলেও একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তা করপোরেট ব্যয়ের আগ্রহ ও বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন বিশ্লেষকরা।
-
গার্ডিয়ানএর খবর অনুসারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ এবং সুদহার বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগের কারণে গত বছর শেয়ারবাজারগুলোয় ২ লাখ কোটি ডলার হারিয়েছেন বিশ্বের অতিধনীরা। দীর্ঘ সাত বছর ধারাবাহিক সম্পদ বৃদ্ধির পর ২০১৮ সালে বিশ্বের অতিধনী (সুপার রিচ) ব্যক্তিদের সমন্বিত সম্পদের মূল্য এক বছর আগের চেয়ে ৩ শতাংশ কমে ৬৮ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। মূলত ক্রমবর্ধমান বাণিজ্য উত্তেজনার প্রভাবে আর্থিক বাজারগুলো পতনের জেরে এ পরিমাণ সম্পদ হারিয়েছেন অতিধনীরা। এ পতনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে চীন। এছাড়াও মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের (ফেড) সুদহার বৃদ্ধির কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান অনিশ্চয়তায় গত বছর শেয়ারবাজারগুলোয় বড় পতন দেখা যায়। ফলে পেনশন তহবিল ও বিশ্বের অভিজাতদের বিনিয়োগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
-
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের অর্থনীতির ওপর নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলছে। তবে এটি ছাড়াও আরো বেশকিছু কারণ বিশ্বের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ অর্থনীতিটিকে স্থিতিশীল হতে দিচ্ছে না। আর এর জেরে প্রায় তিন দশকের মধ্যে চলতি বছর সবচেয়ে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধি দেখতে যাচ্ছে দেশটি। পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে চীনের জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ২ শতাংশ, যা তিন মাস সময়ে অনন্ত ১৯৯২ সালের পর সবচেয়ে শ্লথ। বছরের বাকি সময়ে বাহ্যিক চাহিদায় দুর্বলতা, কারখানাদরের সংকোচন এবং ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের সংকোচন বিনিয়োগে স্থিতিশীলতা, ভোক্তা ব্যয় বৃদ্ধি ও আবাসন খাতের ঘুরে দাঁড়ানোর মধ্য দিয়ে সামাল দেয়া যাবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে।
-
চলমান চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধীরচক্র থেকে বের হতে পারছে না চীন। চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকেও (এপ্রিল-জুন) কমেছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার, হয়েছে ৬ দশমিক ২ শতাংশ। যা ১৯৯০ সালের পর সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। আজ সোমবার দেশটির পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে বলে বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়। চলতি বছরে অর্থনীতিকে চাঙা করতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নেয় চীন। ভোক্তা ব্যয় বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি কর কমিয়েছে সরকার। তবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের কারণেই অর্থনীতির গতি বাড়েনি। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। গত বছর ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ একটি নির্দিষ্ট হারে কমে যাচ্ছে অর্থনৈতিক গতি। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো বলছে, দেশের বাইরে ও অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে।
প্রবৃদ্ধি কমলেও শিল্প খাতে গতি বেড়েছে দেশটির। গত বছরের চেয়ে এ বছরের জুনে শিল্প উৎপাদন বেড়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। একই সময়ের ব্যবধানে খুচরা বিক্রয় বেড়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।
-
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এক বছর ধরে চলা ট্রেড ওয়ার বন্ধ করার জন্য গত বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেছেন, এছাড়া শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মানিউচিনের বেশ ভালো আলোচনা হয়েছে। তবে উভয় পক্ষ মুখোমুখি আলোচনায় বসতে পারে, কেননা বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব যেমন দুই দেশের অর্থনীতিতে পড়ছে, তেমনি তা বিশ্ব অর্থনীতিরও ক্ষতি করছে।
-
বেইজিংয়ের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা এগিয়ে নেয়ার কথা বলে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে দ্বিতীয় দফা শুল্ক কার্যকর করবে ওয়াশিংটন। প্রথম দফায় ২৫ হাজার কোটি ডলারের চীনা পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন ট্রাম্প, যার বেশির ভাগই ছিল শিল্পপণ্য। এর বিপরীতে সর্বশেষ যেসব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়েছে সেগুলো হলো জুতা, পোশাক ও সেলফোনের মতো ভোগ্যপণ্য; যা আমেরিকান ভোক্তারা ব্যবহার করেন। ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের সম্ভাব্য পরিণতি নিয়ে উত্কণ্ঠায় রয়েছে রিটেইলাররা। এরই মধ্যে গভীর সংকটে থাকা রিটেইলারদের সামনে দুটি কঠিন পথ অপেক্ষা করছে—হয় নতুন শুল্কের উচ্চ ব্যয় বহন করা কিংবা দাম নিয়ে সংবেদনশীল গ্রাহকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয়ে বাধ্য করা।
তার ওপর মার্কিন পণ্যে পাল্টা শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত দিয়েছে চীন, যা মার্কিন রফতানিকারকদের জন্য গোদের উপর বিষফোড়া হিসেবে দেখা দেবে। করপোরেট মুনাফায় কেমন প্রভাব পড়বে, সে বিষয়ে উদ্বেগের কারণে শুক্রবার শেয়ারবাজারে দরপতন দেখা গেছে।
-
‘টাইমিং’ এর চেয়ে ভালো হতে পারত না। ১ সেপ্টেম্বর ১৯৩৯, জার্মানির সামরিক বাহিনী সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ডে প্রবেশ করে, যার সঙ্গে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ওইদিনের ৮০ বছর পর, অর্থাৎ ১ সেপ্টেম্বর ২০১৯, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানীকৃত আরো চীনা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা করছেন। যদি এটি ঘটে, তবে তা হবে বাণিজ্য নিয়ে চলমান ‘কোল্ড ওয়ার বা স্নায়ুযুদ্ধের’ তেতে ওঠার মুহূর্ত।
এতে কোনো ভুল নেই যে, ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত ঘোষণায় মারাত্মক ফলাফল দেখতে পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এখন পর্যন্ত শুল্কারোপের জন্য সতর্কতার সঙ্গে চীনা পণ্য নির্বাচন করা হয়েছে, যাতে মার্কিন ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। কিন্তু এখন আর সে পরিস্থিতি নেই। আগামী মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা প্রায় সব চীনা পণ্যে শুল্কারোপ হতে যাচ্ছে। এখনো এর প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত কিছু না জানা গেলেও এটা প্রায় নিশ্চিত যে, মার্কিন ক্রেতাদের স্মার্টফোন, ল্যাপটপ ও কাপড় কিনতে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে। ট্রাম্প বড়াই করে বলেছেন, চীনের ওপর শুল্ক অস্ত্র নিয়ে চড়াও হবে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু নিজেদের অর্থনীতি নিয়ে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা করে বসে রয়েছেন তিনি। আদতে চীন থেকে আমদানীকৃত পণ্যের জন্য মার্কিনদেরই ওই শুল্ক পরিশোধ করতে হবে।
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড়ের ১৮ মাসের কম সময় আগে, ট্রাম্প যে কৌশল গ্রহণ করেছেন, তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। চীনা নেতা শি জিনপিংয়ের সঙ্গে জুয়া খেলছেন ট্রাম্প। তিনি চাইছেন শুল্কারোপের মাধ্যমে চাপ দিয়ে চীনের সঙ্গে একটি বিস্তৃত বাণিজ্য চুক্তি করতে। যে চুক্তির মাধ্যমে চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলো বৃহত্তর বাজার প্রবেশাধিকার পাবে, মার্কিন কৃষিপণ্যের আমদানি বৃদ্ধি পাবে এবং মার্কিন মেধাস্বত্ব সম্পদ চুরি হওয়া রোধ হবে।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1940253410.jpg[/IMG]
চীন-আমেরিকা এর ট্রেডওয়ার আরও জোরলো হচ্ছে এবং উভয় দেশের মধ্যে অবিশ্বাস ও দূরত্ব ক্রমাগত বাড়ছে। চীন-আমেরিকার গত ৩১ জুলাই একটি বাণিজ্য আলোচনা হয়েছিল, এই আলোচনাকে ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘গঠনমূলক’ উল্লেখ করেলেও এরপরই জানা যায় আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে চীনের আরও ৩০ হাজার কোটি ডলার মূল্যমানের পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্র ১০ শতাংশ হারে শুল্কারোপ করবে। যার মানে হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র চীনা প্রায় সব পণ্যকেই শুল্কের আওতায় নিয়ে আসছে। এ ধরনের ঘোষণা স্বাভাবিকভাবেই বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও তীব্র করে তুলবে। চীন বিষয়টিকে নিজেদের মতো করেই মোকাবিলা করবে। এই ঘোষণা বাণিজ্য আলোচনা ‘ব্যর্থ হয়েছে’ বলেই বার্তা দেয়। ফলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বিশ্ববাজারেই, যা এরই মধ্যে দৃষ্টিগ্রাহ্য হচ্ছে। ঘোষণাটি আসার পরপরই সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক একটি ঝাঁকুনি লেগেছে। যুক্তরাজ্যভিত্তি সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট জানাচ্ছে, এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকে মার্কিন বিভিন্ন শেয়ারের দাম এরই মধ্যে নিম্নমুখী হয়েছে। কমেছে যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি ঋণের বিপরীতে সুদহার।
-
বিশ্ব অর্থনীতির শীর্ষ দুই দেশের বাণিজ্যযুদ্ধ আরো বিধ্বংসী হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কৃষি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র হিসেবে হাজির হয়েছে। চীন আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্য ক্রয় বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে মার্কিন কৃষকদের হাতছাড়া হলো তাদের অন্যতম বৃহৎ এক ক্রেতা। শস্য ও পণ্যের দাম নিয়ে এমনিতেই চলতি বছর সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল দেশটি। তদুপরি চীনের সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের এ খাত বিপর্যয়ের মুখে পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চীনের এ সিদ্ধান্তে দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) এবং জন ডিয়ারের মতো কোম্পানিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ কোম্পানিটি দেশটির কৃষি ব্যবসায় সরাসরি জড়িত।
বিরাজমান শুল্কের কারণে দেশটির চলতি শস্য মৌসুম এমনিতেই শ্লথ হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে দেশটি চীনে কোনো ধরনের কৃষিপণ্য রফতানিতে ব্যর্থ হলে সেটি দেশটির কৃষিবাজার ও দামের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে জানিয়েছেন মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও কৃষিনীতি গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্যাট ওয়েস্টহফ। নিজেদের কৃষিবাজার থেকে চীনের সম্পূর্ণ সরে দাঁড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতের বড় ক্ষতি করবে বলে জানিয়েছেন এ কর্মকর্তা।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1872951132.jpg[/IMG]
চীন এবং আমেরিকার মধ্যকার বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানের কোনও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না বরং দুপক্ষ নতুন করে একে অপরের পণ্যের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ শুরু করেছে। আজ রোববার মার্কিন সরকার চীনের ১১ হাজার ২০০ কোটি ডলার মূল্যের পণ্যের ওপর নতুন করে শতকরা ১৫ ভাগ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে বেশিরভাগই ভোগ্যপণ্য। জবাবে চীনও মার্কিন জ্বালানি তেলের ওপর শতকরা ৫ ভাগ বাড়তি শূল্ক এবং মার্কিন অন্য পণ্য সামগ্রীর উপর ১০ ভাগ শুল্ক আরোপ করেছে। আমেরিকা ও চীনের মধ্যে বছরেরও আগে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই প্রথম মার্কিন তেলের উপর শূল্ক আরোপ করল চীন। এছাড়া, দুপক্ষই চলতি বছরের শেষের দিকে পরস্পরের পণ্যের ওপর আরো বাড়তি শূল্ক আরোপ করার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র পিপলস ডেইলি বলেছে, মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে এসব বাড়তি শূল্ক আরোপের কারণে চীনের উন্নয়ন থেমে থাকবে না। পত্রিকাটি বলছে, চীনের বিস্ফোরণোন্মুখ অর্থনীতি এখানকার বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে এত বেশি উর্বর করেছে যে, বিদেশী কোম্পানিগুলো তা উপেক্ষা করতে পারবে না।
-
লমান বাণিজ্য যুদ্ধের মধ্যেই পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ কার্যকর করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। রবিবার থেকে শুল্ক আরোপের প্রথম দফা কার্যকর হয়েছে এই দুই দেশে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানায়, সাড়ে সাত হাজার কোটি ডলার মূল্যের মার্কিন জ্বালানি পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করেছে চীন। অন্যদিকে, রবিবার থেকেই সাড়ে ১২হাজার কোটি ডলার মূল্যের চীনা পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। দ্বিতীয় দফায় মার্কিন পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ আগামী ১৫ই ডিসেম্বর থেকে কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে রেখেছে বেইজিং। একই দিন চীনের পোশাক ও প্রযুক্তি পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ কার্যকর করবে ট্রাম্প প্রশাসন।
এদিকে, চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ অবসানে চলতি মাসেই দুদেশের বাণিজ্যিক দল আলোচনায় বসবে বলে জানান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/626949767.jpg[/IMG]
চিনের সঙ্গে আমেরিকার দ্বি-পাক্ষিক শুল্ক নিয়ে দুই দেশের মধ্যে মাঝে কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরস্পরকে জবাব দিতে অস্ত্র হয়ে উঠেছিল শুল্ক। সম্প্রতি ফের বেজিং-ওয়াশিংটনের মধ্যে আলোচনা শুরু হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছিল আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মহলে। কিন্তু ওয়াশিংটন নানা সময়ে এক একরকম বার্তা দিয়ে চলেছে। ফলে সম্পূর্ণ চিন্তামুক্ত হতে পারছে না বিভিন্ন মহল। সমস্যা পুরোপুরি না-মেটা পর্যন্ত সংস্থাগুলিও নতুন করে লগ্নির সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। এর আগে ১২ দফা আলোচনায় বসেও সন্ধিতে পৌঁছাতে পারেনি দুই দেশ। ফলে আগামী দিনে অবস্থা কী দাঁড়ায়, সে দিকেই নজর রাখছে বিনিয়োগকারীরা।
-
রফতানির ওপর দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাবে গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম কমে ১০ বছরের সর্বনিম্নে নেমে গেছে। এদিকে মার্কিন ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রমের এ পতনের ধাক্কায় গতকাল বিশ্বব্যাপী শেয়ারদর এক মাসের সর্বনিম্নে নেমে যায়। গত সপ্তাহে আগস্টে মার্কিন ভোক্তা ব্যয় প্রশমিত হওয়ার পরিসংখ্যান প্রকাশের পর মঙ্গলবার ইনস্টিটিউট ফর সাপ্লাই ম্যানেজমেন্ট (আইএসএম) যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানুফ্যাকচারিং কার্যক্রম নিয়ে জরিপ প্রকাশ করল। বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতিটির ক্রমাগত ম্লান হয়ে পড়ার পেছনে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের চীনের সঙ্গে ১৫ মাসব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধকে দায়ী করা হচ্ছে। এরই মধ্যে এ বাণিজ্যযুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসা আস্থার অবনতি ঘটিয়েছে ও উৎপাদন ক্ষুণ্ন করেছে। গত মাসে কারখানা কর্মসংস্থান সূচক আগস্টের ৪৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট থেকে কমে ৪৬ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে, যা সাড়ে তিন বছরের বেশি সময়ের মধ্যে সর্বনিম্ন। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কারখানা কার্যক্রম এক দশকের সর্বনিম্নে নামায় বিশ্বব্যাপী শেয়ারদর বড় ধাক্কা খেয়েছে। একই সঙ্গে মার্কিন অর্থনীতিতে যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব বিস্তৃত হচ্ছে বলে আশঙ্কা বাড়ছে।