Printable View
গোল্ডের মূল্য ও মার্কিন ডলারের মধ্যে বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। ডলারের মান বাড়লে, গোল্ডের দাম সাধারণত কমে যায়, কারণ ডলার শক্তিশালী হলে গোল্ড কেনা ব্যয়বহুল হয়। বিপরীতে, ডলারের মান কমলে গোল্ডের দাম বাড়ে, কারণ এটি সস্তা হয়ে যায়। অর্থনৈতিক সংকট বা মুদ্রাস্ফীতির সময় বিনিয়োগকারীরা গোল্ডের দিকে ঝোঁকে, যা ডলারের মানকে আরও দুর্বল করে।
গোল্ডের মূল্য এবং মার্কিন ডলারের মধ্যে সাধারণত বিপরীত সম্পর্ক রয়েছে। মুদ্রাস্ফীতি বা অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বাড়লে, বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য গোল্ডে বিনিয়োগ করে, যা সোনার দাম বাড়ায় এবং ডলারের চাহিদা কমায়। ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার বাড়ালে ডলার শক্তিশালী হয়, যা গোল্ডের চাহিদা কমায়। আবার, ডলার দুর্বল হলে গোল্ডের মূল্য বৃদ্ধি পায়, কারণ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য সোনা ক্রয় করেন। ফলে অর্থনীতির অবস্থা, মুদ্রাস্ফীতি এবং বিনিয়োগের মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব সোনার এবং ডলারের এই সম্পর্ককে প্রভাবিত করে।
যখন মুদ্রাস্ফীতির হার বেড়ে যায়, তখন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে। বিনিয়োগকারীরা মুদ্রার পরিবর্তে সোনায় বিনিয়োগ করতে ঝোঁকে, যা নিরাপত্তার প্রতীক। এর ফলে সোনার মূল্য বাড়ে এবং ডলারের চাহিদা কমে যায়। এতে ডলারের মূল্য কমে, কারণ বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিনিয়োগ খুঁজতে থাকে। তাই, উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির সময়ে গোল্ডের মূল্য বাড়তে থাকে এবং ডলারের দাম পড়তে থাকে।
২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় বিনিয়োগকারীরা সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে বেছে নেন। বাজারের অনিশ্চয়তার কারণে ডলারের উপর চাপ পড়ে, এবং সোনার দাম বাড়তে থাকে। সাধারণত, অর্থনৈতিক সংকটের সময় মানুষ মুদ্রার পরিবর্তে স্থিতিশীল সম্পদ যেমন সোনায় বিনিয়োগ করতে চায়, যা ডলারের মূল্যকে আরও দুর্বল করে দেয় এবং সোনার চাহিদা বাড়িয়ে দেয়।
মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের সুদের হার বৃদ্ধি: ফেডারেল রিজার্ভ যখন সুদের হার বাড়ায়, তখন বিনিয়োগকারীরা ডলারে আকৃষ্ট হয় কারণ এতে বেশি রিটার্ন পাওয়া যায়। এর ফলে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পায় এবং ডলার শক্তিশালী হয়। অন্যদিকে, সোনায় বিনিয়োগ কমে যাওয়ায় সোনার মূল্য কমতে থাকে। অর্থাৎ, সুদের হার বৃদ্ধির সময় সোনার দাম কমে এবং ডলারের মূল্য বাড়ে।
যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধি উচ্চ বৈদেশিক ঋণ ডলারের মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে, কারণ এটি দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রশ্ন তোলে। যখন যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ বাড়ে, বিনিয়োগকারীরা ডলারের পরিবর্তে সোনায় বিনিয়োগ করে। এতে ডলারের চাহিদা কমে যায় এবং সোনার দাম বেড়ে যায়। এভাবে বৈদেশিক ঋণ বৃদ্ধির ফলে সোনার দাম বাড়তে থাকে এবং ডলারের মূল্য হ্রাস পায়।য
তেলের দাম বৃদ্ধি পেলে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায় এবং সাধারণত মুদ্রাস্ফীতির চাপও বাড়ে। এতে ডলারের ক্রয়ক্ষমতা কমতে পারে এবং বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ করে। ফলে সোনার মূল্য বেড়ে যায়, কারণ এটি একটি নির্ভরযোগ্য সম্পদ। তাই তেলের দাম বাড়লে গোল্ডের দামও বৃদ্ধি পায় এবং ডলারের মান কমে যায়।
যুদ্ধ বা আন্তর্জাতিক সংকটের সময় সোনার চাহিদা বাড়ে কারণ এটি এক নিরাপদ বিনিয়োগ। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো দেশে যুদ্ধ বা সংকট দেখা দেয়, তবে বিনিয়োগকারীরা ডলার থেকে সোনায় ঝুঁকে পড়ে। এতে ডলারের চাহিদা কমে যায় এবং সোনার দাম বাড়তে থাকে। ভূরাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সময় সোনার দাম বাড়ে এবং ডলার দুর্বল হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য ঘাটতি বাড়লে দেশের উপর ঋণের বোঝা বাড়ে। এতে ডলারের মান কমে যায় কারণ আমদানি বেশি হওয়ায় মুদ্রার চাহিদা কমে যায়। তখন বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ শুরু করেন, এবং সোনার দাম বাড়তে থাকে। অর্থাৎ, বাণিজ্য ঘাটতির সময় ডলারের মান কমে এবং সোনার মূল্য বাড়ে।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ধীরগতিতে হলে বিনিয়োগকারীরা অর্থনৈতিক সংকটের ভয়ে সোনায় বিনিয়োগ শুরু করেন। এতে সোনার দাম বাড়ে এবং ডলারের চাহিদা কমে যায়। ধীর পুনরুদ্ধারের সময় ডলারের দাম কমে, কারণ এটি অর্থনীতির দুর্বলতা নির্দেশ করে এবং বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য সোনায় ঝোঁকে।
যদি ইউএস বন্ড মার্কেটে কম আয় হয়, তবে বিনিয়োগকারীরা বন্ডের পরিবর্তে সোনায় বিনিয়োগ শুরু করেন। এতে সোনার দাম বাড়ে এবং ডলারের মান দুর্বল হতে থাকে। ইউএস বন্ডে কম আয় হলে ডলারের চাহিদা কমে যায় এবং সোনার চাহিদা বাড়ে।
অন্যান্য দেশের মুদ্রায় অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য সোনায় বিনিয়োগ করে। এতে সোনার চাহিদা বাড়ে এবং ডলারের মান কমে যায়। অর্থাৎ, বৈশ্বিক মুদ্রায় অস্থিতিশীলতার সময় সোনার মূল্য বাড়ে এবং ডলারের চাহিদা হ্রাস পায়।
মহামারির কারণে অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপত্তার জন্য সোনায় বিনিয়োগ করেন। এতে সোনার দাম বেড়ে যায় এবং ডলারের চাহিদা কমে যায়। করোনার মতো সংকটের সময় ডলারের পরিবর্তে সোনাকে বেশি নিরাপদ মনে করা হয়।
যখন শেয়ারবাজার ধসে পড়ে, বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝোঁকে। ২০০৮ এবং ২০২০ সালে স্টক মার্কেট ক্র্যাশে সোনার চাহিদা বেড়ে যায় এবং ডলারের মান পড়ে যায়। এ ধরণের পরিস্থিতিতে সোনার দাম বাড়ে এবং ডলারের মূল্য হ্রাস পায়।
সরকারি ব্যয় কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিলে ডলারের চাহিদা কমে যেতে পারে। এই সময় বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ শুরু করেন, ফলে সোনার দাম বাড়তে থাকে এবং ডলারের দাম কমে যায়।
যদি আমদানি খরচ বৃদ্ধি পায় এবং বৈশ্বিক বাণিজ্যের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়, তবে ডলার দুর্বল হতে পারে। এ সময় সোনার চাহিদা বাড়ে, কারণ এটি বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
নির্বাচনকালে মার্কিন অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অনিশ্চয়তা থাকে। বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ করে নিরাপত্তা খোঁজেন, এতে ডলারের চাহিদা কমে যায় এবং সোনার দাম বাড়ে।
যখন বড় দেশগুলো ঋণ সংক্রান্ত সমস্যায় পড়ে, তখন বিনিয়োগকারীরা সোনায় ঝুঁকে পড়ে। এর ফলে সোনার চাহিদা বেড়ে যায় এবং ডলারের মান হ্রাস পায়।
যদি বড় দেশগুলো তাদের বৈদেশিক মুদ্রা মজুতের মধ্যে ডলারের পরিবর্তে সোনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়, তবে সোনার মূল্য বেড়ে যায় এবং ডলারের মান কমে।
ডলারের মান কমলে বা আন্তর্জাতিকভাবে অবমূল্যায়িত হলে বিনিয়োগকারীরা সোনায় বিনিয়োগ করেন, যার ফলে সোনার দাম বেড়ে যায় এবং ডলারের মান কমে।
কিছু দেশ ডলারের পরিবর্তে তাদের নিজস্ব মুদ্রায় বা সোনায় লেনদেন শুরু করলে ডলারের চাহিদা কমে এবং সোনার দাম বাড়ে।