-
চলতি ২০১৮-১৮ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে পণ্য রপ্তানি আয়ে বেশ ভালো করেছে বাংলাদেশ। এ সময়ে তৈরি পোশাক খ্যাতে রপ্তানি আয় বেড়ে ১৩ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় রপ্তানি বৃদ্ধির এ হার স্বস্তিদায়ক। আলোচ্য সময়ে তৈরি পোশাক, পাট ও পাটজাত পণ্য, হিমায়িত খাদ্য, হোম টেক্সটাইল ইত্যাদি পণ্যের রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে দ্বিতীয় প্রধান খাত পাট ও চামড়ার রপ্তানি আয় কমেছে, যদিও ব্যাগ, জুতা ইত্যাদি চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি আগের চেয়ে বেশি হয়েছে।
-
বাংলাদেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা। গত দশকে বন্দরের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত থাকলেও সাম্প্রতিক সময়ে তা আবার চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বন্দরের উন্নয়নে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় এর সক্ষমতা বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে বিদেশী জাহাজের আগমনের সংখ্যা। ফেব্রুয়ারিতে এক মাসেই মোংলা বন্দরে ১০০টি জাহাজ ভিড়েছে, যা বন্দরের ৬৯ বছরের ইতিহাসে একটি রেকর্ড। এর আগে কখনই মোংলা বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা তিন অংকে পৌঁছায়নি। সর্বশেষ রেকর্ড হয়েছিল গত নভেম্বরে। ওই মাসে বন্দরে ৯১টি জাহাজ নোঙর করেছিল। পরের দুই মাসে জাহাজ ভিড়েছিল যথাক্রমে ৮২টি ও ৮৭টি।
-
বাংলাদেশর বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধি পাবার কারনে খুলনার মোংলা বন্দরেও গতি ফিরতে শুরু করছে, কেননা সে লক্ষ্যেই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ এরই মধ্যে শুরু হয়েছে। ফলে যুক্ত হচ্ছে সাতটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ মোবাইল হারবার ও মাল্টিপারপাস ক্রেন, উচ্চক্ষমতার ফর্কলিফট, রিচ ট্রাক, লো-মাস্ট ফর্ক লিফট ট্রাক, রোড রোলার, ডাম্প ট্রাক ও এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার ছাড়াও অন্যান্য সরঞ্জাম। সাতটি ক্রেনের মধ্যে ১৪ সারির কনটেইনার হ্যান্ডলিং উপযোগী তিনটি, পাঁচ মিটার ব্যাসার্ধের ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি মোবাইল হারবার এবং দুটি ১০ মিটার ব্যাসার্ধের ৫০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস ক্রেন রয়েছে। পাশাপাশি ১০টি স্ট্রাডেল ক্যারিয়ার, দুটি ৩০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ফর্কলিফট ট্রাক, দুটি ৪০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ভেরিয়েবল রিচ ট্রাক, চারটি পাঁচ টন ক্ষমতাসম্পন্ন লো-মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, ১৫টি তিন টন লো মাস্ট ফর্কলিফট ট্রাক, চারটি ১০ টন ক্ষমতাসম্পন্ন ডাম্প ট্রাক, ১০-১২ টন ক্ষমতাসম্পন্ন রোড রোলার এবং নয় টন ক্ষমতাসম্পন্ন এম্পটি কনটেইনার হ্যান্ডলার স্থাপন করা হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৩৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
-
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে আমদানীকৃত ৭ কোটি ৮৫ লাখ টন পণ্য খালাস করেছেন ব্যবসায়ীরা। নথি অনুযায়ী, এর বাজারমূল্য ৩ লাখ ৩ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, সদ্যসমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে খালাস হওয়া ৭ কোটি ৮৫ লাখ টন পণ্যের বিপরীতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ৪২ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মূসকই (ভ্যাট) আদায় হয়েছে ২১ হাজার ৯৫৮ কোটি টাকা। এছাড়া কাস্টমস ডিউটি (সিডি) ১৪ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকা, রেগুলেটরি ডিউটি (আরডি) ৯৪২ কোটি ৭৬ লাখ, এআইটি (অ্যাডভান্স ইনকাম ট্যাক্স) ৬ হাজার ৪২ কোটি ৪৫ লাখ, সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি (এসডি) ৪ হাজার ৯৮৫ কোটি ১১ লাখ ও এটিভি (অ্যাডভান্স ট্রেড ভ্যাট) আদায় হয়েছে ৪ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। এছাড়া ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য আমদানি না করায় ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৬২ কোটি টাকার জরিমানা আদায় করেছে চট্টগ্রাম কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
এনবিআরের তথ্যমতে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫ শতাংশেরও বেশি রাজস্ব এসেছে ১০টি পণ্য আমদানি থেকে পাওয়া শুল্ক বাবদ। সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণকারী এ ১০ আমদানি পণ্যগুলো হলো— ইস্পাত কাঁচামাল, সিমেন্ট ক্লিংকার, মোটরসাইকেল, পরিশোধিত পাম অয়েল, অপরিশোধিত জ্বালানি তেল, পেট্রোলিয়াম অয়েল, গাড়ি, আপেল ও ফিনিশিং সিরামিকস।
-
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য অনুসারে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ হতে পারে। সরকারের ব্যবসাবান্ধব নীতি ও রফতানি বাণিজ্যে সর্বাত্মক সহায়তা প্রদানের ফলেই ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে সক্ষম হয়েছে। রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্জিত হয়েছে ৪৬ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় রফতানি প্রবৃদ্ধির হার ১৩ দশমিক ৬ ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ বেশি। সরকারের ২০২১ সালের মধ্যে রফতানি ৬ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যে রয়েছে।
-
অর্থবছরের শুরুতে সুখবর রপ্তানি আয়েও, ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩৮৮ কোটি ৭৮ লাখ ডলার আয় করেছে। এই অংক গত বছরের জুলাই মাসের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৫ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যের চেয়ে আয় বেড়েছে ১ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বরাবরের মতো এবারও তৈরি পোশাকের উপর ভর করে রপ্তানি আয়ে এই সাফল্য এসেছে। মোট রপ্তানির ৮৫ দশমিক ১৫ শতাংশই এসেছে এই খাত থেকে। অর্থনীতিবিদ ও রপ্তানিকারকরা বলছেন, শুরুটা ভালোই হয়েছে। তবে এক মাসের তথ্য দিয়ে মূল্যায়ন করা কঠিন। আরও দু-এক মাস গেলে বোঝা যাবে নতুন বছরটা কেমন যাবে।
-
বাংলাদেশে ৯টি হ্যান্ডসেট কারখানা হয়েছে। এর মধ্যে দেশীয় বড়ো ব্র্যান্ড সিম্ফনি ছাড়াও স্যামসাংও ফ্যাক্টরি করেছে। এসব ফ্যাক্টরিতে দেশের চাহিদার অধিকাংশ সেটই উত্পাদন হচ্ছে। এখন সিম্ফনি দেশের চাহিদা মিটিয়ে ২০২২ সাল থেকে রপ্তানি বাজারে যাচ্ছে বলে ইত্তেফাককে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শহীদ। তিনি বলেন, শিগিগরই দেশে সিম্ফনি মোবাইলের আরো দুটি কারখানা উত্পাদনে যাচ্ছে। স্মার্টফোনের পুরোটাই নিজেদের ফ্যাক্টরিতে উত্পাদন করছে সিম্ফনি। ছয় মাসের মধ্যে সিম্ফনির ফিচার ফোনও আর আমদানি করতে হবে না।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1857580879.jpg[/IMG]
করোনাভাইরাস মহামারীতেও বাংলাদেশের রপ্তানি জুন মাসে রপ্তানি দ্বিগুণ বেড়েছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর রোববার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ২৭৮ কোটি ৪৪ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক মে মাসের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ এবং এপ্রিল মাসের চেয়ে সাড়ে পাঁচ গুণ বেশি। কোভিড-১৯ মহামারীর ধাক্কা বাংলাদেশে লাগতে শুরু করে গত মার্চ মাস থেকে, এপ্রিলে রপ্তানি কমে মাত্র ৫২ কোটি ডলারে নেমে এসেছিল, যা ছিল রেমিটেন্সের চেয়েও কম। বিধিনিষেধ শিথিল করে কলকারখানা চালুর পর মে মাসে রপ্তানি বেড়ে ১৪৬ কোটি ৫৩ লাখ ডলারে দাঁড়ায়। অর্থবছরের শেষ মাস জুনে তা আরও বাড়ল। সবমিলিয়ে গোটা ২০১৯-২০ অর্থবছরে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ৩ হাজার ৩৬৭ কোটি ৪০ লাখ (৩৩.৬৭ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে।
-
সাত মাস পর রপ্তানিতে ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনাচলতি মাসের প্রথম দিন ঈদের কারণে কোনো পোশাক রপ্তানি হয়নি। পরদিন ১ কোটি ৯৪ লাখ ডলারের রপ্তানি হয়। তারপর ধীরে ধীরে রপ্তানি বাড়তে থাকে। সর্বোচ্চ ২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয় ১৩ আগস্ট। ২২ আগস্ট সাড়ে ৬ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত জানুয়ারি থেকে পোশাক রপ্তানি নেতিবাচক ধারায় ছিল। সর্বশেষ গত জুলাইয়ে ৩২৪ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১ দশমিক ৯৮ শতাংশ কম।