-
বাংলাদেশের পোশাক খাত
বিশ্ব বাজারে এখনও ভাবমূর্তির সংকট কাটাতে পারেনি দেশের তৈরি পোশাক খাত। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর পাঁচ বছর ধরে চলা সংস্কার প্রক্রিয়ার পরও 'মেড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগ নিয়ে অস্বস্তি কাটেনি আন্তর্জাতিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর। তৈরি পোশাকের বড় বাজার ইউরোপিয় ইউনিয়নের ৭০ ভাগ ক্রেতা প্রতিষ্ঠানই নিজেদের পণ্যে বাংলাদেশের নাম ব্যবহারে অনাগ্রহী। রাজধানীতে এইচএসবিসি ও ইউএনডিপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বিশ্লেষকরা বলেন, ইতিবাচক প্রচারণার অভাবেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে...
-
1 Attachment(s)
এশিয়ার উন্নয়নশীল বেশ কয়েকটি দেশের জন্যই তৈরি পোশাক একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎপাদন ও রফতানি খাত। এশিয়ার অগ্রসরমান অর্থনীতিগুলোর বেশির ভাগেরই ৫০ শতাংশের বেশি রফতানি আয় আসে এ খাত থেকে। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারী রূপ ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাসের কারণে মুখ থুবড়ে পড়েছে এশিয়ার রফতানিমুখী পোশাক খাত।
[ATTACH=CONFIG]10611[/ATTACH]
করোনা পরিস্থিতিতে এশিয়ার পোশাক উৎপাদকদের সামনে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দুটি বিষয়। প্রথমত, এ অঞ্চলে উৎপাদিত তৈরি পোশাকের সিংহভাগ কাঁচামালই আসে চীন থেকে। আর নভেল করোনাভাইরাসের উত্পত্তি এ চীনে। দেশটিতে ভাইরাসটির সংক্রমণ দ্রুত বাড়তে শুরু করলে প্রতিরোধের জন্য লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয় সরকার। এতে চীনে একের পর এক বস্ত্র কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বস্ত্র রফতানিকারক দেশটি থেকে তৈরি পোশাকের কাঁচামাল সরবরাহে এ অচলাবস্থার শুরু গত ফেব্রুয়ারিতে।
আর এখন যখন করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় চীনে কিছু বস্ত্র কারখানা উৎপাদনে ফিরেছে, তখন তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চাহিদা ইস্যু। এশিয়ার তৈরি পোশাকের প্রধান ক্রেতা উন্নত দেশগুলোর রিটেইলাররা, বিশেষ করে ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকা। করোনা হানা দিয়েছে সেখানেও। ভাইরাসটির সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার পর সেসব দেশের সরকার কঠোরভাবে লকডাউন পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। আর এতে বেশির ভাগ রিটেইলার তাদের দোকানগুলো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়।
বিদেশী ক্রেতাদের ব্যবসা সংকোচনের প্রভাব পড়েছে এশিয়ার তৈরি পোশাক উৎপাদন খাতে। অনেক রিটেইলারই এখন তাদের কার্যাদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছে। উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্যের কার্যাদেশ বাতিল করে দিচ্ছে তারা। এমনকি শিপমেন্টের জন্য প্রস্তুত এমন পণ্যও তারা আর নিতে চাইছে না। ফলে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পড়েছে বিপাকে। তারা তাদের কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে।
-
বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) সূত্রে জানা গেছে, নভেল করোনাভাইরাস সংকটের কারণে দেশের শিল্প ও গার্মেন্টস কারখানাগুলোর বিপুল পরিমাণ রফতানি আদেশ বাতিল হয়। নতুন করে পোশাকের কার্যাদেশ না থাকায় এরই মধ্যে অনেক গার্মেন্টসের কাজ প্রায় শূন্য হয়ে পড়েছে। সরকারি নির্দেশনা মেনে ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এরই মধ্যে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব ইপিজেড সাধারণ ছুটির আওতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সব গার্মেন্ট কারখানা বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বিজিএমইএ। ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের সব রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা (ইপিজেড) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধও করেছে বেপজা কর্তৃপক্ষ। এ বন্ধকালীন বা ছুটির সময়ে শ্রমিকদের সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে শ্রমিকদের স্বার্থ বিবেচনায় অনেক কারখানা লে-অফের সুবিধা চাইছে। ইপিজেডের কারখানাগুলো বন্ধ ঘোষণার আগেই অনেক কারখানা লে-অফের অনুমোদনের জন্য আবেদন করেছে। আবেদন বিবেচনায় অনেক কারখানাকে অনুমোদনও দেয়া হয়েছে। তবে যেকোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে বেপজা শ্রমিকদের স্বার্থকে সবার আগে দেখছে।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/386936834.jpg[/IMG]
নভেল করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরু হওয়ার পর বিশ্ব বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসে, যার প্রভাবে একে একে ক্রয়াদেশ হারাতে থাকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত। তবে এ দুর্যোগকালেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে। তবে তা করোনা সংকট শুরুর আগের ক্রয়াদেশের পণ্যের চালান বলে জানিয়েছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। গত ৩ জুন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অধীনস্থ অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের (ওটিইএক্সএ) এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে দেশটিতে পোশাক আমদানি বেড়েছে ২ দশমিক ১৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে পোশাকের মোট আমদানি হয় ২০৭ কোটি ৪৫ লাখ ৩৬ হাজার ডলার। ২০১৯ সালের একই সময়ে আমদানির পরিমাণ ছিল ২০৩ কোটি ১২ লাখ ৮৯ হাজার ডলার। বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানি বাড়লেও চীন, ভারত ও ভিয়েতনাম থেকে আমদানি কমেছে বলে দেখানো হয়েছে ওটিইএক্সএর ওই পরিসংখ্যানে। পোশাক পণ্য আমদানিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান উৎস দেশ চীন। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল—এ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে চীন থেকে পোশাক আমদানি কমেছে ৪৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এছাড়া ভিয়েতনাম থেকে ১ দশমিক ৩ শতাংশ এবং ভারত থেকে ১৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ পোশাক আমদানি কমেছে ওই সময়। ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইন থেকে পোশাক আমদানি কমেছে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৬৬ ও ২৯ দশমিক ২৭ শতাংশ। তবে কম্বোডিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পোশাকের আমদানি ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ বেড়েছে এ সময়।
-
বাংলাদেশের পোশাক খাত বিভিন্ন দিক থেকে বর্তমান পৃথিবীতে চরম হুমকির সম্মুখীন। একদিকে যেমন আমাদের পোশাক শিল্পের বিশ্বব্যাপী প্রচার-প্রসার খুবই সীমিত লেভেলে যার কারণে এখনও ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৭০% ক্রেতাররা ”মেইড ইন বাংলাদেশ “ ট্যাগ ব্যবহারে আপত্তি জানিয়েছে, অপরদিকে বর্তমানে করোনা ভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্ববাজার এমনিতেই মন্দাভাব সেখানে আমাদের রাষ্ট্রীয় কোন বিশেষ ব্যবস্থা নেই যার মাধ্যমে পৃথিবীর অন্যান্য ক্রেতা রাষ্ট্রগুলোকে আকৃষ্ট করতে পারে।