-
ভারতীয় রুপির দরপতন!
গত কয়েক মাস ধরে ভারতের মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের বিপরীতে রুপির মান আশঙ্কাজনকভাবে নীচের দিকে নেমে গেছে। ডলারের বিপরীতে আবারও ৪ শতাংশ কমে গেছে রুপির মান। বর্তমানে প্রতি ডলারের বিপরীতে ৬৮.৭৫ রুপি পাওয়া যাচ্ছে।এ বছর ডলারের বিপরীতে রুপির মান শতকরা ২০ ভাগ কমেছে।যা দেশটির অর্থনীতিতে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) গভর্নর উরজিৎ প্যাটেল এর পদত্যাগে দেশটির মুদ্রা ও শেয়ারবাজারে উল্লেখযোগ্য দরপতন লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করেছেন অর্থনীতিবিদ সুরজিত ভাল্লা। ফলে আগামী দিনগুলোতে কি হয় সেটা এখনি বোঝা যাচ্ছে না।
-
গ্রামীণ দুর্দশায় বিপর্যস্ত কৃষকদের কয়েক দফা আন্দোলন ও মূল্যস্ফীতি নিয়েও উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে গেছে ভারতের অর্থনীতি, যদিও ২০১৮ সালে ভারতের রফতানি বেড়েছে, অন্যদিকে বাণিজ্য ঘাটতির বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া তাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিশাল মন্দঋণ সমস্যা সমাধানে ব্যাংকিং খাতে যেমন বড় রদবদল ঘটিয়েছে, তেমনি বছরের শেষ প্রান্তে খোদ কেন্দ্রীয় ব্যাংকেই বড় পরিবর্তন ঘটেছে। তবে ক্রুড তেলের উচ্চমূল্য এবং ক্রমবর্ধমান অভ্যন্তরীণ চাহিদা দ্রুততার সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি সম্প্রসারিত করে গেছে। ৫৬ মাসের সর্বোচ্চ মাসিক বাণিজ্য ঘাটতি দিয়ে ২০১৮ শুরু করে ভারত। অক্টোবর নাগাদ এ ঘাটতি ১৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বেড়েছে।
-
মে মাসে ভারতের আসন্ন জাতীয় নির্বাচন ঘিরে অনিশ্চয়তা রুপির মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ক্রমাগত মান হারানো রুপি গত বছরের মতো চলতি বছরও ডলারের বিপরীতে আন্ডারপারফর্ম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে রয়টার্সের এক মতামত জরিপ দেখা যায় : এশিয়ায় পিছিয়ে থাকলেও ভারতীয় রুপির মান রেকর্ড নিম্নে নামবে না। যদিও গত বছরের শেষ কয়েক মাসে ডলারের বিপরীতে রুপির মান তীব্র পতন থেকে ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করলেও চলতি বছর এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাংশ মান হারিয়েছে ভারতীয় মুদ্রাটি। যার মধ্যে শুক্রবার ভারত সরকারের অন্তর্বর্তী বাজেট ঘোষণা এবং দেশটির আর্থিক ঘাটতি নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের কারণে ডলারের বিপরীতে রুপি প্রায় ১ শতাংশ মান হারায়।
-
ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই) গতকাল সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করেছে। আশা করা হচ্ছে, এ পদক্ষেপের সুবাদে ব্যাংক ও ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দেয়া ভোক্তা ও গৃহঋণে সুদের পরিমাণ কমে আসবে, যার ফল হিসেবে ঋণগ্রহীতাদের মাসিক কিস্তির বোঝাও কিছুটা হালকা হবে। এছাড়া মুদ্রানীতিমালা নির্ধারণে আগের ‘কঠোর’ মনোভাব থেকে সরে ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়েছে আরবিআই। নির্বাচনকালীন মৌসুমে অনেকটা আকস্মিকভাবেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ সুদের হার হ্রাসের সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জন্য বেশ উৎসাহব্যঞ্জক হয়ে উঠবে।
-
ভারতের গত শুক্রবারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একটি রিপোর্ট দেখা যায়, ২০১৯ সালের শুরুতে ভারতের রফতানি আগের চেয়ে কিছুটা বেড়েছে। একই সঙ্গে আমদানি স্থির থাকায় জানুয়ারিতে বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা কমেছে। জানুয়ারিতে দেশটির রফতানি ৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেড়ে ২ হাজার ৬৩০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে এবং আমদানি মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ বেড়ে ৪ হাজার ১০৯ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। রফতানি কিছুটা বাড়ায় এবং আমদানি স্থির থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি আগের বছরের একই সময়ের ১ হাজার ৫৭০ কোটি ডলার থেকে কমে ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। তবে জানুয়ারিতে বাণিজ্য ঘাটতি আগের মাসের তুলনায় বেড়েছে। আগের মাসে অর্থাৎ গত বছরের ডিসেম্বরে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ১ হাজার ৩০৮ কোটি ডলার।
-
ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৩ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৯ শতাংশের মধ্যে থাকবে বলে পূর্বাভাস করা হয়েছে। গত বছরের এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে অর্থনীতিটি দুই বছরের সর্বোচ্চ ৮ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির দেখা পেলেও বছরের শেষ দিকে উল্লেখযোগ্য পতনের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। আগামীকাল ভারতের জিডিপি পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হবে। যদিও নির্বাচনের আগে মন্থর হয়ে পড়ছে ভারতের অর্থনীতি এবং ইন্দো-পাক টেনশনে ভারতীয় কারেন্সী বর্তমানে মার্কিন ডলারের বিপরীতে 71.51 হয়েছে।
-
ভারতীয় অর্থনীতিতে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক সূচকের অবনতি ঘটায় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এই অর্থনৈতি ক্রমেই নিচের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যেমন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিতে সম্প্রতি গাড়ি বিক্রিতে পতন ও প্রত্যক্ষ কর সংগ্রহে ঘাটতির পর অন্যান্য সূচকের মধ্যে এবার দেশটির গৃহস্থালি সঞ্চয়েও পতন ঘটতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) পরিসংখ্যান অনুসারে, জিডিপির অনুপাতে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ভারতের গৃহস্থালি সঞ্চয় কমে ১৭ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ১৯৯৭-৯৮ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। পারিবারিক সঞ্চয় কমে যাওয়ার প্রভাবে ২০১২-১৮ সালের মধ্যে বিনিয়োগের হার ১০ বেসিস পয়েন্ট হ্রাস পেয়েছে।
-
যুক্তরাষ্ট্রভিত্ িক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান সম্প্রতী যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ২০০টি ম্যানুফ্যাকচারিং কারখানাকে চীন থেকে ভারতে সরিয়ে নেয়ার উপায় খুঁজছে। প্রতিষ্ঠাননটি এই সব আগ্রহী কোম্পানিগুলো ভারতের চলমান সাধারণ নির্বাচন শেষে এ কার্যক্রম শুরু করতে বলে জানিয়েছে এবং এই কোম্পানিগুলোর জন্য চীনের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে ভারতের সামনে সুবর্ণ সুযোগ তৈরী করে দিচ্ছে। ইউএস-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড পার্টনারশিপ ফোরামের (ইউএসআইএসপিএফ) প্রেসিডেন্ট মুকেশ আঘি বলেন, বিনিয়োগের মাধ্যমে কীভাবে ভারতকে চীনের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা যায়, তা নিয়ে আগ্রহী কোম্পানিগুলো তাদের সঙ্গে আলোচনা করছে। এছাড়া আঘি জানান বিনিয়োগ আকর্ষণে ভারতের নতুন সরকারের এজেন্ডা কী হওয়া উচিত, নয়া দিল্লিকে সংস্কার কার্যক্রমের গতি বাড়াতে হবে, নীতি সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় আরো স্বচ্ছতা আনতে হবে এবং আরো বেশি করে সবাইকে যুক্ত করতে হবে।
-
নরেন্দ্র মোদির দ্বিতীয়বার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়া ভারতীয় রুপিকে উজ্জীবিত করেছে এবং এশিয়ার প্রধান কারেন্সীগুলোর মধ্যে ভারতীয় রুপিকে ভালো পারফরম্যান্স করতে সহায়তা করেছে। এটা খানিকটা স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষকরা তবে নির্বাচন পরবর্তীতে বিদেশী মুদ্রা বিনিয়োগকারীরা তেলের মূল্যবৃদ্ধির দিকে পুনরায় নজর দিতে পারেন, ফলে এরই মধ্যে প্রসারিত হওয়া কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ঘাটতি ও সরকারের রেকর্ড ঋণ আরো বাড়তে পারে। যা খুব স্বাভাবিকভাবে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে চাঙ্গা ভাব নিয়ে আসবে।
-
ভার্চুয়াল মুদ্রা হিসেবে পরিচিত সব ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছে ভারত সরকারের একটি প্যানেল। একই সঙ্গে ডিজিটাল মুদ্রাটির যেকোনো লেনদেনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও বিশাল অংকের অর্থ জরিমানারও প্রস্তাব করেছে প্যানেলটি। প্রাথমিকভাবে কেন্দ্রীয় সরকার ক্রিপ্টোকারেন্সি ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের পরিবর্তে ডিজিটাল মুদ্রাটি নিয়ন্ত্রণের পক্ষে ছিল। কিন্তু বেশকিছু নিয়ন্ত্রকের বিরোধিতার মুখে শেষ মুহূর্তে ক্রিপ্টেকারেন্সি ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রস্তাব করা হয়। এক বিবৃতিতে সরকার জানিয়েছে, সরকারি প্যানেল ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি ও খসড়া আইনের রূপরেখা প্রণয়ন করেছে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এ প্রতিবেদন ও খসড়া আইন পর্যালোচনা করে দেখবে।
একই সঙ্গে প্যানেলটি সরকারকে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) মাধ্যমে ভারতে সরকার সমর্থিত ডিজিটাল মুদ্রা, যা ব্যাংক নোটের মতোই কাজ করবে, চালু করার বিষয় বিবেচনা করে দেখার প্রস্তাব দিয়েছে।