হংকংয়ের অর্থনীতি চীনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কেন?

হংকং চীনের জন্য অর্থনীতি উভয়- বাণিজ্য এবং আর্থিক খাতের চাবিকাঠি। ২০১৭-১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি বিদেশি বিনিয়োগ পায়, যার ৯৯ বিলিয়ন ডলার আসে হংকং হয়ে। এর অর্থ মোট অর্থ প্রবাহের ৮০ শতাংশ আসছে হংকং থেকে। হংকংয়ে তিন মাস ধরে যে গণতন্ত্রপন্থী বিক্ষোভ চলছে তার জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক কেন্দ্র এবং খরচ বিহীন বন্দর হিসেবে হংকংয়ের যে মর্যাদা আছে সেটা অপূরণীয় ভাবে ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। বেইজিং আন্তর্জাতিকভাবে তীব্র নেতিবাচক প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়বে। সব পশ্চিমা সরকার চীনের সাথে তাদের সম্পর্ক নতুন করে মূল্যায়ন করবে এবং চীনের অর্থনীতি আর বিশ্বে তাদের যে মর্যাদা সেটার জন্য ভুগতে হতে পারে।

বাণিজ্য ও আর্থিক দুদিক থেকেই হংকং চীনের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭-১৮ সালে চীন ১২৫ বিলিয়ন ডলার সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ পেয়েছে এর মধ্যে ৯৯ বিলিয়ন ডলারই এসেছে হংকংয়ের মাধ্যমে। আইনের শাসন ও স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা চীনে বিনিয়োগে আগ্রহী কোম্পানিগুলোর কাছে হংকংকে নিরাপদ জায়গায় পরিণত করেছে। ২০১৮ সালে ৬০% কোম্পানি শেয়ারবাজারে আইপিও খুলেছে হংকংয়ের শেয়ারবাজারে। যদিও হংকং স্টক মার্কেটের সাথে তীব্র প্রতিযোগিতা হচ্ছে সাংহাইয়ের। কিন্তু ১৯৯৭ সালে ব্রিটিশদের কাছ থেকে চীনাদের শাসনে আসার পর থেকে সবচেয়ে বড় সংকট মোকাবেলা করছে হংকং। বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিলের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র পন্থীদের পরপর নবম সপ্তাহের মত বিক্ষোভের পর তার প্রভাব পড়া শুরু হয়েছে দেশটির অর্থনীতি, পর্যটন আর খুচরা বিক্রি দুটোই দারুণভাবে ক্ষতির শিকার হচ্ছে। তবে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বড় ঝুঁকির বিষয় হল রাজনৈতিক ও কারণ চলমান সংকট মোকাবেলায় হংকং প্রশাসনকে সমর্থনের নামে সরাসরি চীনা হস্তক্ষেপ চলে আসতে পারে। গত দু'দশকে চীন তাদের এই বিশেষ অঞ্চল থেকে দারুণ উপকৃত হয়েছে, যেটি এশিয়ার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কেন্দ্র।

চীন আর যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে চলতি বছরের শুরু থেকেই অর্থনীতির গতি ধরে রাখাত হিমশিম খাচ্ছিল বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্র হংকং। কিন্তু টানা তিন মাসের সরকারবিরোধী বিক্ষোভে আধা স্বায়ত্তশাসিত এই চীনা শহর এখন পৌঁছে গেছে মন্দার প্রান্তে। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কেনাকাটা আর খাবারের জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এই শহরের হোটেল রেস্তোরাঁগুলো এখন অনেকটাই ফাঁকা। ব্যাংকগুলোর আর্থিক হিসাব সতর্ক সংকেত দিচ্ছে। বড় কয়েকটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে বড় একটি ইকুইটি চুক্তি। এই পরিস্থিতিতে হংকংয়ে এ বছর খুচরা বিক্রির পরিমাণ ২০ থেকে ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। বিনিয়োগকারীরা আশপাশের অন্য কোনো এশীয় শহরে ব্যবসা সরিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন। সব মিলিয়ে অর্থনীতির সবগুলো সূচক চাপে পড়ায় গত এক দশকের মধ্যে প্রথমবারের মত অর্থনৈতিক মন্দার মুখোমুখি গতে যাচ্ছে হংকং।

গত তিন মাসের বেশি সময় ধরে হংকংয়ের রাস্তায় পাঁচটি দাবি মেনে নিতে সরকারকে বাধ্য করতে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে, গতকালও গণতন্ত্রকামীরা পুলিশকে বাধা দিতে তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছেন এবং বিক্ষোভকারীরা এবার দেশটির রেলপথকে লক্ষ করে বিক্ষোভে নামার ডাক দিয়েছে। রবিবার দেশটির দুপুর নামার এ বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

হংকংয়ে কয়েক মাস ধরে চলমান বিক্ষোভ ও চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধের চাপে উপর্যুপরি দুই প্রান্তিকে শহরটির অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গভীর মন্দায় পড়েছে এশিয়ার বাণিজ্যিক হাবটি। রফতানি, ভোক্তা ব্যয় ও পর্যটন রাজস্ব কমায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে দেশটির অর্থনীতি ৩ দশমিক ২ শতাংশ সংকুচিত হয়েছে। তৃতীয় প্রান্তিকে অর্থনীতি সংকুচিত হওয়ার বিষয়টি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক হাব এ শহরের সুনামকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। প্রসঙ্গত, আগের প্রান্তিকে তথা জুন পর্যন্ত তিন মাসে শহরটির মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কমেছিল দশমিক ৫ শতাংশ। সাধারণত কোনো অর্থনীতি টানা দুই প্রান্তিক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির দেখা পেলে কৌশলগতভাবে তা মন্দায় পড়েছে বলে ধরা হয়। শ্লথ হয়ে পড়া অর্থনীতি চাঙ্গা করতে শহরটির কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে ২ হাজার কোটি হংকং ডলার বরাদ্দ দিয়েছে। এ অর্থ প্রধানত যোগাযোগ, পর্যটন ও খুচরা খাতে ব্যয় করা হবে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি উপশমে দরকার আরো সহায়ক পদক্ষেপ।