-
ভারতের অর্থনীতির হাল এই মুহূর্তে বেশ নাজুক। গাড়িশিল্পে প্রবল মন্দা। একের পর এক গাড়ি তৈরির কারখানা কর্মী ছাঁটাই করছে। মন্দা ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্প ও কৃষি উৎপাদনেও। গ্রামীণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এতটাই কমে গেছে যে পার্লের মতো বিস্কুটশিল্প, যারা মাত্র পাঁচ রুপিতে এক প্যাকেট বিস্কুট বিক্রি করে, তারা ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাই করেছে। নগদের জোগান কমে যাওয়ায় গৃহনির্মাণ ও অন্যান্য শিল্প মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে। দেশের প্রবৃদ্ধির হার নিম্নগামী। কোষাগার ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে হু হু করে। জনমুখী কর্মসূচি ব্যাহত হচ্ছে। ডলারের তুলনায় রুপির অবমূল্যায়ন হয়েছে ৪ শতাংশের বেশি। বেকারত্ব বাড়ছে। এ অবস্থায় ১ লাখ ৭৬ হাজার কোটি রুপির বাড়তি পাওনা সরকারের কাছে বাড়তি অক্সিজেনের মতো। কিন্তু অর্থনীতির এই মন্দাভাব তাতে কাটানো সম্ভব হবে কি না, জল্পনা শুরু হয়েছে তা নিয়ে।
-
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ভারতের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ‘উল্লেখযোগ্য’ হারে কমিয়েছে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল রেটিংস। গতকাল প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি জানিয়েছে, তারা মনে করছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি হবে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। এর আগে ৭ দশমিক ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল তারা। তবে এসঅ্যান্ডপি এও জানিয়েছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ‘উল্লেখযোগ্য হারে না হলেও’ ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে এবং প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ।
-
বৈশ্বিক অর্থনীতির সাম্প্রতিক শ্লথগতির ফলে তুলনামূলকভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। চলতি অর্থবছরের প্রাথমিক প্রান্তিকগুলোয় ব্যাপক-বিস্তৃত অবনতির পর ২০১৯ সালে ভারতের প্রবৃদ্ধি কমে ৬ শতাংশে দাঁড়াবে বলে পূর্বাভাস করেছে বিশ্বব্যাংক। তবে প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস কমলেও বিপুল সম্ভাবনাসহ ভারত এখনো বিশ্বের দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতি বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্বব্যাংকের এক শীর্ষ অর্থনীতিবিদ। গতকাল ‘সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাস’ শীর্ষক প্রতিবেদনের সর্বশেষ সংস্করণে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, চলতি বছর ভারতের প্রবৃদ্ধি কমলেও ধীরে ধীরে বেড়ে ২০২১ সালে ৬ দশমিক ৯ শতাংশ ও ২০২২ সালে ৭ দশমিক ২ শতাংশে দাঁড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে। ফলপ্রসূ মূল্য গতিশীলতার কারণে ভারত ‘অ্যাকোমোডেটিভ’ অবস্থান ধরে রাখবে এবং এর ফলে ধীরে ধীরে দেশটির প্রবৃদ্ধি ঊর্ধ্বমুখী হবে বলে ধারণা করছে বিশ্বব্যাংক। উল্লেখ্য, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ভারতের প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৮ শতাংশ, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরের ৭ দশমিক ২ শতাংশের চেয়ে কম।
-
ভারতের ক্রমাগত মন্থর হতে থাকা অর্থনীতি চলতি সপ্তাহে মুদ্রানীতি আরো শিথিলের পদক্ষেপ গ্রহণের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। সম্প্রতি প্রকাশিত পরিসংখ্যানে চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতিটির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৪ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসতে দেখা গেছে। এদিকে চলতি সপ্তাহে মুদ্রানীতি নিয়ে বৈঠকে বসতে যাচ্ছে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়া (আরবিআই)। ভারতের মিনিস্ট্রি অব স্ট্যাটিস্টিক অ্যান্ড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের তথ্য অনুসারে, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে ভারতের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এর মধ্য দিয়ে দেশটির প্রবৃদ্ধি ২০১৩ সালের পর প্রথমবার ৫ শতাংশের নিচে নামল।
দেশের অর্থনীতির এ লাগামহীন পতন রোধ করতে এরই মধ্যে চলতি বছর পাঁচ দফায় ১৩৫ বেসিস পয়েন্ট সুদহার কমিয়েছে গভর্নর শক্তিকান্ত দাসের নেতৃত্বাধীন আরবিআই, যা এশিয়ার কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবচেয়ে বেশি সুদহার কর্তন।
এ মুহূর্তে নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের কেন্দ্রে রয়েছে এশিয়ার তৃতীয় বৃহৎ অর্থনীতিটির পুনরুদ্ধার। ফলে গত সপ্তাহের শেষে প্রকাশিত পরিসংখ্যান তাদেরকে প্রবৃদ্ধির জন্য আরো পদক্ষেপ গ্রহণের দিকেই ঠেলে দিয়েছে।
-
1 Attachment(s)
[ATTACH=CONFIG]9708[/ATTACH]
চলতি বছরে দীপ্তি হারিয়েছে ভারতের অর্থনীতি। বছরব্যাপী চলা শ্লথগতি ও ঋণ সংকটের কারণে চাঙ্গা প্রবৃদ্ধির দেশ থেকে আর্থিক অস্থিরতার দেশে পরিণত হয়েছে ভারত। বিশ্বের খুব কম অর্থনীতিই এ রকম উল্টো রথ দেখেছে।
চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে ভারতের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৪ দশমিক ৫০ শতাংশ, যা ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিকের প্রায় অর্ধেক। ভোক্তা আস্থা ২০১৪ সালের পর সর্বনিম্নে দাঁড়িয়েছে। প্রায় ১৩৪ কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত দেশটির জন্য গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার খুব অস্থির। বেকারত্ব হার ৬ দশমিক ১০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা ৪৫ বছরের সর্বোচ্চে।
-
এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত। চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস ও বিদেশী বিনিয়োগের অভাবসহ বিভিন্ন কারণে গত বছর দুঃসময়ের মধ্য দিয়ে গেছে দেশটির অর্থনীতি। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অফিসের (সিএসও) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশটির নমিনাল মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হতে পারে সাড়ে ৭ শতাংশ, যা ২০০৮-০৯ অর্থবছরের পর সর্বনিম্ন। বৈশ্বিক আর্থিক মন্দার কারণে অন্যান্য দেশের মতো ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও এ সময় কমে আসে। এ পরিস্থিতিতে ১ ফেব্রুয়ারি গুরুত্ববহ কেন্দ্রীয় বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন দেশটির অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। এ পরিস্থিতিতে দেশটি ২০২০-২১ অর্থবছরেও বারবার হোঁচট খাবে। বাজেটের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছরের সরকারি ব্যয় চলতি অর্থবছরের সমপরিমাণ রাখা হলেও দেশটির আর্থিক ঘাটতি জিডিপির ৪ দশমিক ৫৭ শতাংশ ছাড়িয়ে যেতে পারে। সারকথা হলো, ভারত সরকার বড় ধরনের তহবিল সংকটে পড়তে যাচ্ছে।
-
এ মুহূর্তে ভারতের অর্থনৈতিক মন্থরতা ‘ফেটে পড়ার পর্যায়ে’ পৌঁছেছে বলে মন্তব্য করেছেন নয়াদিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ফিন্যান্স অ্যান্ড পলিসির অর্থনীতিবিদ এন আর ভানুমূর্তি। ভারতের নির্মাণ খাতের মন্থরগতি থেকে (কৃষির পর দেশটির দ্বিতীয় বৃহৎ কর্মসংস্থান উৎস) দেশটির পতনমুখী অর্থনীতির সবচেয়ে স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মন্থর নির্মাণ খাতের কারণে কেবল নিম্ন আয়ের শ্রমিকরাই নন কয়েক লাখ বাড়ি ক্রেতাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। যারা অর্থনৈতিক বিস্ফোরণের সময় নয়াদিল্লির পাশে দ্রুতবর্ধনশীল নয়ডায় আবাসন প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগ করেছিল। বর্তমানে অসমাপ্ত বহুতল ভবন ও স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকশ প্রকল্পের কারণে বিপাকে রয়েছেন এসব ক্রেতা। অসমাপ্ত বাড়ির বন্ধকের অর্থ পরিশোধে নিজেদের সঞ্চয় শেষ করতে হচ্ছে বহু মধ্যবিত্ত পরিবারকে। পকেটের অর্থ কমায় উচ্চাকাঙ্ক্ষী মধ্যবিত্তের গাড়ি ও রেফ্রিজারেটরের মতো পণ্যের পেছনে ব্যয়ও কমেছে, যা ভোক্তা ব্যয়ের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ভারতের অর্থনীতিকে বড় ধাক্কা দিয়েছে। ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে মন্থর চাহিদা দেখছে গাড়ির শোরুমগুলো। একই সময় ছোট দোকানগুলোর বিক্রি কমছে আর জীবিকা নির্বাহে সংগ্রাম করতে হচ্ছে দিনমজুরদের।
-
ভারতের বিভিন্ন মন্ত্রীর পদত্যাগের কারণে দেখা যাচ্ছে যে ভারতের শেয়ার বাজারের কিছুটা চেঞ্জ দেখা যাচ্ছে আর আমি ব্যক্তিগতভাবে ভারতের বিরুদ্ধে আরও পরে এটি আশা করি তবে ভারতের বাণিজ্য রপ্তানি দুটোই খুব ভাল যাচ্ছে গত মাসের নিউজে দেখলাম যে ভারতের রপ্তানি কিছুটা বেড়েছে এবং আমদানি স্ত্রীর রয়েছে ভারতের দিনদিন সেটাই তো দেখতেছি
-
ভারতের মন্থর অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়িয়েছে এবং বিদেশী বিনিয়োগকারীদের স্থানীয় স্টক ও বন্ড হোল্ডিং কমানোর দিকে ঠেলে দিয়েছে নভেল করোনাভাইরাস মহামারী। এ পরিস্থিতিতে ডলারের বিপরীতে ভারতীয় রুপির বিনিময় রেকর্ড নিম্নে পৌঁছেছে। নভেল করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১ ডলারের বিপরীতে রুপির বিনিময় মূল্য দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৫০ রুপি, যা সর্বকালের সর্বনিম্ন। এদিকে চলতি মাসে মুদ্রাটি ডলারের বিপরীতে প্রায় ৩ দশমিক ১ শতাংশ মূল্য হারিয়েছে। যার ফলে এশিয়ার সবচেয়ে বাজে পারফর্মকারী দ্বিতীয় মুদ্রায় পরিণত হয়েছে রুপি। এদিকে চলতি মাসে ভারতের ইকুইটি বাজার থেকে ২৭০ কোটি ডলার বিনিয়োগ তুলে নিয়েছেন বিদেশী বিনিয়োগকারীরা।
-
1 Attachment(s)
[ATTACH=CONFIG]10579[/ATTACH]
নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণে পুরো বিশ্বের মতো ক্ষতির মুখে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতের অর্থনীতি। কভিড-১৯-এ দেশটির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রায় স্থবির করে ফেলেছে, ঝুঁকি দেখা দিয়েছে সংকোচনের।*রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন বলেন, ‘‘নভেল করোনাভাইরাস প্রেক্ষাপটে স্বাধীনতার পর ভারতের অর্থনীতি সবচেয়ে বড় ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বর্তমান পরিস্থিতি ২০০৮-০৯ অর্থবছরের বৈশ্বিক আর্থিক সংকটের চেয়েও মারাত্মক।’’*তবে *ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ড (ইউবিএস) বলছে, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশে ও আন্তর্জাতিকভাবে লকডাউনসহ যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তাতে ভারতের অর্থনীতিতে মন্দা দেখা যাবে না।*নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চার-পাঁচ সপ্তাহের লকডাউন এবং সাত-আট সপ্তাহের সীমাবদ্ধ যোগাযোগের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের এ স্থবিরতা সেপ্টেম্বর পর্যন্তও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। এরপর হয়তো ধীরে ধীরে ভারতের অর্থনীতিসহ সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে থাকবে। ফলে ১৯৮০ অর্থবছরের পর এ প্রথম হয়তো দেশটিকে ঋণাত্মক জিডিপিও প্রত্যক্ষ করতে হতে পারে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বছরওয়ারি ভারতের অর্থনৈতিক সংকোচন হতে পারে ঋণাত্মক শূন্য দশমিক ২ শতাংশ। তাছাড়া ব্যাপক হারে চাকরি হারানো এবং আয় কমে যাওয়ার কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যয়েও পতন হবে। ফলে আগে থেকেই কমে যাওয়া উপার্জন এবং সংকটে থাকা অর্থনীতির কারণে ভারতের পারিবারিক মূলধনেও চাপ সৃষ্টি করবে।