-
মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের মাত্রা বৃদ্ধির হুমকি ও ব্রেক্সিট ঘিরে তৈরি অনিশ্চয়তা ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থনীতিতে ঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। ইইউর ২০১৯ সালের প্রবৃদ্ধি নিয়ে নিজেদের পূর্বাভাস কমিয়েছে ইসি এবং সংস্থাটি সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, সাম্প্রতিক সময়ে বৈশ্বিক বাণিজ্যে যে শ্লথগতি তৈরি হয়েছে, তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে এ মহাদেশের ওপর। ইসির নতুন পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর ২৮ দেশের ইইউর জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে ১ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছিল সংস্থাটি।
চলতি সপ্তাহে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে ফের আলোচনায় বসতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। কিন্তু দিনকয়েক আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণা পরিস্থিতি বেশ উত্তপ্ত করে তুলেছে। আগামী দিনে পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে জানিয়ে কমিশন সতর্ক করে দিয়ে বলছে, বিশ্বজুড়ে বাণিজ্যযুদ্ধ বৃদ্ধি পেলে ইইউর অর্থনীতি বড় ধাক্কা খেতে পারে।
অন্যদিকে ব্রেক্সিট-সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা ইইউর প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এর ওপর চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের ঝুঁকি আগামী দিনের অর্থনৈতিক শক্তির জন্য হুমকি তৈরি করছে। ইসি বলছে, চুক্তিহীনভাবে বেরিয়ে গেলে ব্রিটেন সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে, তবে সেটি ইইউর ২৭ দেশের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1017857784.jpg[/IMG]
গোটা বিশ্বেই মন্দার চাপে রয়েছে অর্থনীতি। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দার ধাক্কা থাকবে আরও ৫ বছর, কয়েক বছরে কোন খাতে বইবে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির হার, তার আভাস দিল আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডার (আইএমএফ)। মন্দার ধাক্কায় ন্যুব্জ আর্থিক বৃদ্ধির হারের এই শ্লথগতি চলবে আরও ৫বছর, ভবিষ্যদ্বাণী আইএমএফ-এর। তবে আশার কথা একটাই, বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদানের নিরিখে ভারত উঠে আসতে পারে কয়েক ধাপ উপরে। অন্য দিকে তালিকায় নীচের দিকে নামবে চিন, মনে করছে আইএমএফ। অধিকাংশ দেশেই আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখী। কিংবা যে হারে আশা করা গিয়েছিল, তার চেয়ে অনেক কম। চিন-আমেরিকা শুল্ক যুদ্ধের প্রভাব গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই পড়ছে। ব্রেক্সিট থেকে ব্রিটেনের বেরিয়ে আসার প্রভাবে চাপে ইউরোপের অর্থনীতি। সব মিলিয়ে শিল্প-বিনিয়োগে ভাটার টান,আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে ঢিমেতালে।এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের আর্থিক বৃদ্ধির হার কেমন হবে এবং কোন দেশের অবদান তাতে কেমন থাকবে, তা নিয়েই সম্প্রতি একটি সম্ভাব্য নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে আইএমএফ।
সেই সম্ভাব্য নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই মন্দার প্রভাব থাকবে বিশ্বের ৯০ শতাংশ দেশের অর্থনীতিতে। তবে ২০০৮-০৯ সালে যে বিশ্বজুড়ে যে মন্দা দেখা দিয়েছিল, সেই পরিস্থিতি হবে না বলেই মত আইএমএফএর। অর্থনীতি চাপে থাকার অর্থ, আর্থিক বৃদ্ধিও ঝিমিয়ে পড়বে। সে দিকেই দিক নির্দেশ করে আইএমএফ মনে করছে, শুধুমাত্র এ বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালেই আর্থিক বৃদ্ধি কমতে পারে ৩ শতাংশ পর্যন্ত।
সামগ্রিক অর্থনীতির এই চিত্রের পাশাপাশি, মুখ্য দেশগুলির অর্থনীতি এবং বৃদ্ধির হার কেমন হবে, তারও একটি সম্ভাব্য রূপরেখা তৈরি করেছে আইএমএফ। বর্তমানে বিশ্বের জিডিপি বৃদ্ধির হারে আমেরিকার অবদান সবচেয়ে বেশি ২৪.৪ শতাংশ। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চিন। তাদের অবদান ১৬.১ শতাংশ। এর পর তৃতীয় ও চতুর্থ স্থানে জাপান (৫.৯৩) ও জার্মানি (৪.৬৭)। ভারতের (৩.৩৬) স্থান পঞ্চমে। কিন্তু আইএমএফ-এর সম্ভাব্য রূপরেখায় এই স্থানে রদবদল অবশ্যম্ভাবী। চিনের প্রভাব যেমন কমতে পারে, তেমনই ভারত উঠে আসতে পারে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদানও সেই অনুযায়ী বাড়বে। চিন এবং আমেরিকাকে টপকে ভারত উপরে উঠে আসতে পারে বলেও ইঙ্গিত আইএমএফ-এর।
-
বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতি সামলানোর জন্য সুদহার কর্তনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে বিশ্বের শীর্ষ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। বলতে গেলে এখতিয়ারে থাকা প্রায় সব অস্ত্র প্রয়োগ করেছে তারা। এখন নীতিনির্ধারকরা দেখতে চান এতদিন তারা যেসব পদক্ষেপ নিয়েছেন, তা আগামী মাসগুলোয় শ্লথগতি রোধে কতটা কার্যকর হচ্ছে। ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যকার বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে বিশ্ব বাণিজ্যে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, তা সামলাতে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ থেকে শুরু করে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল ও ইউরোজোন থেকে ফিলিপাইন সাম্প্রতিক মাসগুলোয় সুদহার কমিয়েছে। শীর্ষ তিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেড, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ব্যাংক অব জাপান সুদহার আরো কমানোর জলদিতে নেই, বিশেষ করে যেখানে ইউরোপ ও জাপানে এখনই সুদহার ঋণাত্মক।