-
চাঙ্গা ভারতের পর্যটন খাত
বিশ্বে নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয় ২০১৯ সালের শেষ দিন থেকে। এরপর সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে এ তীব্রতা। সে সময় সংক্রমণ ঠেকাতে নেয়া হয় নানা ধরনের সতর্কতা, দেশগুলো বন্ধ করে দেয় নিজ নিজ সীমান্ত। মহামারী শুরু হলে তার ভীষণ প্রভাব পড়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর। বিশেষ করে পর্যটন ব্যবসায় রীতিমতো ধস নামে। চলতি বছর ধীরে ধীরে সংক্রমণ কমতে শুরুর করার পর থেকে আবারো পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ভারতেও পর্যটন খাতে পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে। যদিও এখনো পরিস্থিতি আগের মতো হয়নি, কিন্তু বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর যেন দ্বিগুণ উৎসাহে ঘুরে বেড়াতে শুরু করেছেন ভারতের পর্যটকরা। তাদের এ ঘোরাঘুরির নাম দেয়া হয়েছে রিভেঞ্জ ট্রাভেল। যেন কভিড-১৯-এর ওপর প্রতিশোধ নিতে আগের চেয়ে ঘুরে বেড়ানোর পরিমাণ বাড়িয়েছেন তারা।
বিলাসবহুল হোটেল ও রিসোর্ট চেইনের পরিচালক বিভাস প্রসাদ বলেন, কিছুদিন আগেও আক্ষরিক অর্থে ব্যবসা বন্ধ ছিল আমাদের। সেখান থেকে চাহিদা এক লাফে উঁচুতে উঠে গিয়েছে। ফলে এ খাতের শ্রমবাজার দারুণভাবে সক্ষমতায় ফিরেছে। বিশেষ করে দেশীয় পর্যটকদের মাধ্যমেই এ খাত অনেক এগিয়ে গিয়েছে। ২০২১ সালে ভারতের মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশই ছিল পর্যটন খাতের অবদান। সে বছর অর্থনীতিতে পর্যটন খাত থেকে এসেছিল ১৭ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল ও ট্যুরিজম কাউন্সিলের পূর্বাভাস বলছে, ২০২৮ সাল নাগাদ এর পরিমাণ দাঁড়াবে ৫১ হাজার ২০০ কোটি ডলারে, যা বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ। এ মুহূর্তে ভারতের পর্যটন খাতে ১৩ কোটি ৭০ লাখ মানুষ কর্মরত।
মহামারীর প্রভাবে ভারতে বিদেশী পর্যটকের পরিমাণ কমেছে। ২০২১ সালে মাত্র ১৫ লাখ ৪০ হাজার বিদেশী পর্যটক ভারত ভ্রমণ করেছেন বলে দেশটির পর্যটন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০১৯ সালে যা ছিল ১ কোটি ৯৩ লাখ। তবে ধীরে হলেও বাড়ছে পর্যটকের সংখ্যা। আগামী বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে অন্তত ২১ লাখ বিদেশী ভারত ভ্রমণ করবেন বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। কেবল বিদেশী নয়, দেশী পর্যটকের সংখ্যাও মহামারীর কারণে তলানিতে নেমে গিয়েছিল। ২০১৯ সালে যেখানে ২৩০ কোটি ভারতীয় দেশের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করেছেন, ২০২১ সালে সে সংখ্যা নেমে এসেছিল ৬৭ কোটি ৭০ লাখে। যদিও চলতি বছরের অভ্যন্তরীণ ভ্রমণপিপাসুদের পরিমাণ এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে খাতসংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে পর্যটকের সংখ্যা।
বিমানবন্দর পরিষেবা সংস্থা এনকাম হসপিটালিটির প্রধান নির্বাহী বিকাশ শর্মা বলেন, পর্যটন খাত আবারো নিজের পায়ে দাঁড়াতে শুরু করেছে। আমরা একটি শক্তিশালী পুনরুদ্ধারের সাক্ষী হচ্ছি। সাধারণ মানুষ এখন নতুন নতুন দর্শনীয় স্থান খুঁজতে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ছেন।
ভারতের অভ্যন্তরীণ পর্যটন বেড়ে যাওয়ার পেছনে বেশকিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্বের বেশকিছু দেশে ভিসা পাওয়া নিয়ে জটিলতা। পাশাপাশি দেশের বাইরে ভ্রমণ ব্যয় বেড়ে যাওয়াও বড় কারণ। বাইরের দেশে ঘুরতে যাওয়ার নানা ঝক্কির কথা ভেবে অনেকেই ভারতের ভেতরেই ভ্রমণ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এ সুযোগে ব্যবসা বাড়ছে স্থানীয় পর্যটনসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর। হোটেল-রিসোর্টগুলো ব্যবসায় ফিরতে শুরু করেছে। এমনকি আগামী বছর মহামারীর আগের সময়ের চেয়েও ভালো ব্যবসার প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/725510356.jpg[/IMG]