-
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় চীনের দিকে তাকিয়ে আছেন বৈশ্বিক নীতিনির্ধারকরা। ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক কর্মপরিকল্পনা ও নীতির বিষয়ে দেশটির পরবর্তী পদক্ষেপের মুখাপেক্ষী হয়ে রয়েছে বিশ্বের বহু কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও দেশ। করোনাভাইরাসের কারণে আন্তর্জাতিক রুটে ৩০ ভাগের মত যাত্রী পরিবহন কমে গেছে। এয়ারলাইন্সগুলোর হিসেবে পর্যটন মৌসুম হওয়া সত্ত্বেও ব্যাংকক, কাঠমান্ডু ও দিল্লী রুটে যাত্রী সংখ্যা নেমে এসেছে অর্ধেকে। বড় আকারের ধাক্কা লেগেছে কার্গো বিমানে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে। এছাড়াও অ্যাপলের আইফোন সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠান বা অ্যাসেম্বলার ফক্সকন ও পেগাত্রন মধ্য জানুয়ারি থেকে বন্ধ রয়েছে। আগামী মার্চ পর্যন্ত বছরের প্রথম প্রান্তিকে চীন থেকে স্মার্টফোনের সরবরাহ ৪০ লাখ কমবে। মিকি অ্যান্ড মিনি মাউসসহ চীনে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব থিম পার্ক রয়েছে, সেগুলোও এখন বিরান পড়ে আছে। থিম পার্ক বন্ধ রাখার কারণে তাদের পরিচালন আয় ২৮ কোটি মার্কিন ডলারের মতো কমতে পারে।
-
বিশ্বজুড়ে চলছে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম। কভিডজনিত বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় স্বাভাবিক হচ্ছে ব্যবসায়িক কার্যক্রম। জীবনযাপন অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় তীব্র চাহিদার মুখোমুখি হয়েছে উৎপাদন খাত। এটি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরো অঞ্চলের কারখানাগুলোয় চাহিদাকে নতুন উচ্চতায় ঠেলে দিয়েছে। উৎপাদন খাতে মে মাসের রেকর্ড এপ্রিলের বৃদ্ধিকেও ছাড়িয়ে গেছে। আর এটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারকে গতিশীল করে তুলেছে। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারগুলো নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ও কাঁচামাল সরবরাহ কম হওয়ায় আগামী মাসগুলোয় উৎপাদন খাতের প্রবৃদ্ধি থমকে যেতে পারে। এছাড়া টিকাদান কার্যক্রমে অসমতার কারণে পুনরুদ্ধার নিয়েও শঙ্কা রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে দ্রুত টিকাদান কার্যক্রম পরিচালনা না করলে চলতি বছরের শেষ দিকে বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারটি ধীর হয়ে যেতে পারে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সতর্ক করেছে, ভাইরাসটির রূপান্তরগুলো বিশেষত উন্নয়নশীল দেশগুলোয় ছড়িয়ে পড়তে দেয়া হলে বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি খুব সহজেই হ্রাস পেতে পারে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1011847069.jpg[/IMG]
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/756360466.jpg[/IMG]
বিশ্বব্যাপী দ্রুতগতিতে চলছে কভিড-১৯ প্রতিরোধী টিকাদান কার্যক্রম। বিভিন্ন দেশে ধাপে ধাপে শিথিল করা হচ্ছে কভিডজনিত বিধিনিষেধ। ফলে চলতি বছরের শুরু থেকেই বিশ্ব অর্থনীতির বেশির ভাগ সূচকে ঊর্ধ্বগতি দেখা যায়। এর মধ্যেই বিশ্ব অর্থনীতি প্রাক-মহামারীর স্তরকে ছাড়িয়ে গেছে বলে জানিয়েছে বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইএইচএস মার্কিট।ব্যবসায়ে ওপর মাসভিত্তিক জরিপ পরিচালনা করা সংস্থাটি চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৬ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছে। এমনটা ঘটলে প্রায় ৫০ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধির রেকর্ড সৃষ্টি হবে।এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, বিশ্ব অর্থনীতি ২০২১ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলকে পৌঁছেছে। জিডিপির এ প্রবৃদ্ধি ২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে প্রকৃত জিডিপির শীর্ষকে ছাড়িয়ে গেছে।গত বছরের শেষ দিকেই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতি কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাব কাটিয়ে উঠেছে। এক্ষেত্রে এ অঞ্চলের বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের স্থিতিস্থাপকতা বড় ভূমিকা পালন করেছে।আইএইচএস মার্কিটের অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেছেন, মে মাসে মার্কিন প্রকৃত জিডিপি নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তারা পূর্বাভাস দিয়েছেন, আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্য তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রাক-মহামারীর পর্যায়ে ফিরবে। এছাড়া বছরের শেষ নাগাদ ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার হবে।আইএইচএস মার্কিটের বৈশ্বিক অর্থনীতি বিভাগের নির্বাহী পরিচালক সারা জনসন বলেন, কভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার সম্পূর্ণ হয়েছে। বর্তমানে অর্থনীতি আরো ভালো অবস্থানে যাওয়ার পথে রয়েছে। প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) বৈশ্বিক প্রকৃত জিডিপি ১ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। তবে পুরো বছরে প্রবৃদ্ধির হার ৬ থেকে ৭ শতাংশে উন্নীত হবে।২০২১ সালে আইএইচএস মার্কিটের বৈশ্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস গত এপ্রিলে ঘোষণা দেয়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাসের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে আইএমএফ বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের ক্ষেত্রে অসমতার ওপর জোর দিয়েছিল। সংস্থাটি জানিয়েছে, অনেক দেশ ২০২২ কিংবা ২০২৩ সালের আগে প্রাক-মহামারীর পর্যায়ে ফিরবে না।
-
করোনাভাইরাসের হুমকি ঠেকাতে বিদেশে দলগত সফরে চীনের নিষেধাজ্ঞায় বড় আকারের ধাক্কা খেতে পারে থাইল্যান্ডের অর্থনীতি। থাইল্যান্ডের সরকারি উপাত্তে দেখা গেছে, গত বছর থাইল্যান্ডে ১ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ব্যয় করেছিলেন চীনের হলিডেমেকাররা, যাদের বেশির ভাগই দলগতভাবে সফরে এসেছিলেন। মোট বিদেশী পর্যটকদের এক-চতুর্থাংশই এসেছিলেন চীন থেকে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিলের বরাতে জানা গেছে, থাইল্যান্ডের জিডিপিতে ২১ শতাংশ অবদান ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের। খবর ব্লুমবার্গ।থাই মুদ্রার অবমূল্যায়নের ফলে এরই মধ্যে দেশটির পর্যটন ও রফতানি বেশ চাপের মধ্যে রয়েছে। বার্ষিক বাজেটে বিশৃঙ্খলা দেশটির প্রবৃদ্ধির পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে দেখা দিয়েছে।আন্তর্জাত ক ঋণমান নির্ধারণকারী সংস্থা ফিচ রেটিংস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চীন থেকে ছড়িয়ে পড়া উহান ভাইরাস নামে পরিচিত করোনাভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব তীব্রভাবে বাড়তে থাকলে এশিয়ার সেবা খাতের কার্যক্রম, বিশেষ করে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলো সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। এশিয়ার সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও হংকংয়ের মতো অর্থনীতিগুলো এ ধরনের ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে।অর্থনীতি চাঙ্গায় কয়েক মাসের ব্যবধানে ১ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা দিয়েছে থাইল্যান্ড সরকার। ২০১৯ সালে পাঁচ বছরের শ্লথগতির প্রবৃদ্ধিতে ছিল দেশটি।অর্থনীতিবি ও বিশ্লেষকরা মনে করছেন, করোনাভাইরাস দ্রুত সময়ে দুর্বল হয়ে পড়লেও এই লক্ষ্য পূরণ করা কঠিন হয়ে যাবে।
-
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1900442208.jpg[/IMG]
নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে খাদ্যপণ্যের চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেও চলতি বছর খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক বাণিজ্য স্বাভাবিক থাকবে। এক প্রতিবেদনে এমন পূর্বাভাস দিয়েছে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। সংস্থাটির ‘ফুড আউটলুক বাইঅ্যানুয়াল রিপোর্টে’ বলা হয়, কভিডকালে খাদ্যপণ্যের বাণিজ্য নতুন উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় অন্যান্য পণ্যের তুলনায় কৃষিপণ্যের বাণিজ্য সবচেয়ে বেশি ত্বরান্বিত হয়েছিল। এ বছর চাহিদা ও সরবরাহ নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকলেও স্থিতিশীল থাকবে বাণিজ্য। এএফওর প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২১ সালে খাদ্যপণ্যের বৈশ্বিক আমদানি বিল দাঁড়াবে ১ দশমিক ৭২ ট্রিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ বেশি। সংস্থাটি বলছে, মূল্যবৃদ্ধি খাদ্যপণ্য আমদানিতে উচ্চব্যয়ের আশঙ্কা বাড়াচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে খাদ্যসংকটে থাকা দেশগুলো। আমদানি ব্যয় বাড়লে এসব দেশে খাদ্য সরবরাহ আরো সংকুচিত হতে পারে।
-
বছরের শুরুতে কভিড-১৯ মহামারীর বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে পুনরুদ্ধার হচ্ছিল এশীয় অর্থনীতিগুলো। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন পণ্যের তুমুল চাহিদা রফতানিনির্ভর এ দেশগুলোকে আশা দেখাচ্ছিল। তবে বছরের মাঝামাঝি এসে বাধার মুখে পড়েছে পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। কাঁচামালের ব্যয় বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান কভিডের সংক্রমণের মতো বিষয়গুলো গত মাসে এ অঞ্চলের উৎপাদন কার্যক্রমে আঘাত হানে। রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যদিও জুলাইয়ে রফতানি পাওয়ারহাউজ খ্যাত জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার উৎপাদন কার্যক্রম বেড়েছে। তবে সংস্থাগুলো সরবরাহ চেইন সংক্রান্ত ব্যাঘাত ও কাঁচামালের ঘাটতিতে ভুগেছে। আর এতে সংস্থাগুলোর ব্যয়ও বেড়ে গেছে। চাহিদা কমে যাওয়ায় এক বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জুলাইয়ে চীনের কারখানা কার্যক্রমের প্রবৃদ্ধি দ্রুত হ্রাস পেয়েছে। অর্থনৈতিক গবেষণা পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের সিনিয়র চীনা অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড বলেন, সরবরাহ চেইনে ব্যাঘাত একটি সীমাবদ্ধতা হিসেবে রয়ে গেছে। তবে পিএমআই সূচকে দেখা যায়, চাহিদার পরিমাণও কমছে। পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি শিল্প ও নির্মাণ কার্যক্রমকে সংকুচিত করেছে। এদিকে পুনরায় সংক্রমণ বৃদ্ধি এবং কভিডজনিত বিধিনিষেধের কারণে জুলাইয়ে ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়ায় কারখানা কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। বেসরকারি জরিপের ফলাফলে এমনটা দেখা গেছে।
এ জরিপগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামারীজনিত বাধার বিষয়টি তুলে ধরা হয়। ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এশিয়ার চলতি বছরের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে দিয়েছে। এইচএসবিসির এশিয়ান ইকোনমিক রিসার্চের সহপ্রধান ফ্রেডরিক নিউম্যান বলেন, আগামী মাসগুলোতে কারখানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার হলেও ঝুঁকি থাকবে। কারণ প্রবৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্তের এ প্রভাবগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়। চীনের মার্কিট ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) জুলাইয়ে ৫০ দশমিক ৩ পয়েন্টে নেমে এসেছে। যেখানে জুনে এ সূচক ছিল ৫১ দশমিক ৩ পয়েন্ট। জুলাইয়ের সূচক গত ১৫ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন ছিল। উৎপাদন কার্যক্রমে ক্রমবর্ধমান ব্যয় বিশ্বের উৎপাদন হাবে ঝুঁকি তৈরি করেছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/2058923124.jpg[/IMG]