বৈশ্বিক উৎপাদনপ্রবাহ ও অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বিভিন্ন শিল্প খাতে ‘বিশ্বের কারখানা’ হিসেবে পরিচিত চীন। চান্দ্রনববর্ষের ছুটি ও নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে বহু বৈশ্বিক কোম্পানির কারখানা। বন্ধ থাকা বহু কারখানা স্থানীয় সময় আজ খোলার কথা থাকলেও এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা কাটছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী কারখানাগুলো পুনরায় খোলা না গেলে পণ্য উৎপাদন নিয়ে মারাত্মক সংকটের মধ্যে পড়বে প্রধান প্রধান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

এরই মধ্যে চীন থেকে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশের সরবরাহ না থকায় দক্ষিণ কোরিয়ায় উৎপাদন বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি হুন্দাই। একইভাবে চীনে উৎপাদন বন্ধ রেখেছে ফক্সওয়াগন ও বিএমডব্লিউ। এছাড়া উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকির কথা জানিয়েছে টেসলা ও টয়োটা। খবর বিবিসি ও সিএনএন বিজনেস।

কয়েক দশক ধরেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও জাপানি গাড়ি নির্মাতা কোম্পানির জন্য চীন ‘প্রতিশ্রুত ভূমির’ ভূূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু দেশটিতে নভেল করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে কোম্পানিগুলোর উৎপাদন ও বিক্রি। চীনের দেশজ কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারিত্ব চুক্তির পাশাপাশি দেশটিতে বড় পরিসরে কারখানা স্থাপনে প্রচুর বিনিয়োগ করেছে ফক্সওয়াগন, টয়োটা, ডাইমলার, জেনারেল মোটরস (জিএম), রেনোঁ, হোন্ডা ও হুন্দাইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের ফলেই চীনে এখন গাড়ি উৎপাদন হচ্ছে অন্য যেকোনো দেশের থেকে বেশি; পাশাপাশি দেশটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গাড়ির বাজারও।

গত মাসে চান্দ্রনববর্ষ উপলক্ষে চীনে গাড়ি তৈরির কারখানাগুলো যখন বন্ধ করা হয়, তখনই শিল্প খাতটি বেশ চাপের মধ্যে ছিল। টানা দুই বছর পতনমুখী ছিল বৈশ্বিক গাড়ি বিক্রির বাজার। এরই মধ্যে টানা তৃতীয় বছরের মতো এ অচলাবস্থা চলবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় বন্ধ কারখানাগুলো শিগগিরই না খুললে সংকট আরো বাড়বে। বৈশ্বিক বিক্রিতে আরো গভীর মন্দার মধ্যে পড়বে কোম্পানিগুলো।

বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে চীনে ‘বিচ্ছিন্ন’ অবস্থায় রয়েছে প্রায় ছয় কোটি মানুষ। একই সঙ্গে ক্রমে ছড়িয়ে পড়তে থাকা এ ভাইরাসের কারণে বহু সম্ভাব্য ক্রেতা ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। এ অবস্থায় সংক্রমণের ঝুঁকি পুরোপুরি না কমলে ক্রেতারা গাড়ি কিনবেন না বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছেন এস অ্যান্ড পি গ্লোবাল রেটিংসের বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, কারখানা বন্ধ থাকা আরো দীর্ঘায়িত হলে চলমান মন্দা থেকে উত্তরণ গাড়ি শিল্পের জন্য আরো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। মূলত করোনাভাইরাসের সংক্রমণে চীনে প্রথম প্রান্তিকে গাড়ি উৎপাদন অন্তত ১৫ শতাংশ কমে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বণিক বার্তা