করোনাভাইরাসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রণোদনা প্যাকেজের বিলে স্বাক্ষর করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুক্রবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভস বিলটি পাস হওয়ার পর তিনি এতে স্বাক্ষর করেন। এর দুদিন আগে উচ্চকক্ষ সিনেটেও বিলটি পাস হয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করায় বিলটি এখন আইনে পরিণত হয়েছে। খবর বিবিসি ও রয়টার্স।

ট্রাম্প যে প্রণোদনা প্যাকেজের বিলে স্বাক্ষর করেছেন, তা ২ লাখ ২০ হাজার কোটি ডলারের। দেশটির ইতিহাসে এর আগে কখনো এত বড় অংকের প্রণোদনা দেয়া হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। দেশটিতে কভিড-১৯ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে, যা অন্য যেকোনো দেশের চেয়ে বেশি। এরই মধ্যে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১ হাজার ৭০০ জনের বেশি মানুষ। শুধু জনস্বাস্থ্যই নয়, করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশটির অর্থনীতিও। চাকরি হারাচ্ছেন লাখ লাখ মানুষ। বুধবার দেশটিতে বেকারত্ব ভাতার জন্য আবেদনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৩ লাখ, যা মার্কিন ইতিহাসে সর্বোচ্চ। দেশের অর্থনীতি ও এসব কর্মহীন মানুষদের সুরক্ষা দিতেই রেকর্ড পরিমাণ প্রণোদনা দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।

প্রণোদনা বিলটি ছিল ক্রস-পার্টি বিল। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের বিবদমান দুই রাজনৈতিক পরাশক্তি রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক—উভয় পার্টির প্রস্তাবনার সমন্বয় করেই বিলটি তৈরি করা হয়েছে। ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব ছিল সম্প্রসারিত কর্মী সুরক্ষা প্যাকেজের। আর রিপাবলিকানরা চেয়েছিল সংকটের মধ্যে থাকা মার্কিন শিল্প খাতকে টিকিয়ে রাখার জন্য ৫০ হাজার কোটি ডলারের রেসকিউ ফান্ড। নতুন প্রণোদনা প্যাকেজে উভয় দলের চাওয়াই পূরণ হচ্ছে। কর্মহীনরা যেন এ দুর্যোগের মুহূর্তে তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারেন, সেজন্য তারা ভাতা পাবেন। উল্লেখযোগ্যসংখ্য মার্কিনি একার জন্য ১ হাজার ২০০ ডলার ও বিবাহিত দম্পতিরা ২ হাজার ৪০০ ডলারের চেক পাবেন। এদিকে স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য ১০ হাজার কোটি ডলারের আপৎকালীন তহবিলের দাবি ছিল, পূরণ হচ্ছে তা-ও। কিন্তু জ্বালানি শিল্প ও ক্রুজ কোম্পানিগুলোর জন্য নতুন প্যাকেজে কোনো বরাদ্দ রাখা হয়নি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ প্রণোদনাকে আগের যেকোনো প্যাকেজের দ্বিগুণ বলে দাবি করেছেন। ট্রাম্প বলেন, ‘এ প্রণোদনা মার্কিন পরিবার, কর্মী ও ব্যবসা খাতকে বিপদ থেকে উদ্ধার করবে।’ জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে ঐকমত্যের ভিত্তিতে কাজ করার জন্য তিনি উভয় রাজনৈতিক দলকেই ধন্যবাদ জানান। তার ভাষায়, ‘দুই পার্টির মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু সেগুলোকে একপাশে রেখে এক হয়ে কাজ করার জন্য উভয়কেই ধন্যবাদ।’ ট্রাম্পের মতে, এর মাধ্যমে উভয় পার্টি ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতিরই বাস্তবায়ন করেছে।

বণিক বার্তা