বিশ্ব অর্থনীতিতে নভেল করোনাভাইরাসের নেতিবাচক প্রভাব এরই মধ্যে পড়তে শুরু করেছে। মহামারীটির কারণে বৈশ্বিক জিডিপি সংকোচনের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। চাহিদা ও সরবরাহ ব্যবস্থার সংকটে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে উৎপাদনমুখী করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর। একই অবস্থা আকাশসেবা ও পর্যটন খাতেও। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সবচেয়ে বাজে মন্দা দেখার শঙ্কায় রয়েছে বিশ্ব অর্থনীতি। আর স্থবির অর্থনীতিতে বড় ধরনের সংকটে পড়বে বৈশ্বিক কর্মসংস্থান।

কর্মসংস্থানের সংকট অবশ্য এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। ব্যয় সংকোচনের জন্য ধুঁকতে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মী ছাঁটাইয়ের নীতি নিয়ে এগোচ্ছে। এর কারণে চাকরি হারাচ্ছে লাখ লাখ মানুষ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) সতর্ক করে বলেছে, করোনার প্রকোপ এখনই ঠেকানো না গেলে বিশ্বজুড়ে কাজ হারাবে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ।

করোনার কারণে কর্মসংস্থান কতটা হুমকিতে রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকালেই তা পরিষ্কার হবে। টেলিগ্রাফের একটি প্রতিবেদন বলছে, মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে দেশটিতে বেকারত্ব ভাতার আবেদন জমা পড়েছে প্রায় এক কোটি। এর মধ্যে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এক সপ্তাহেই আবেদন করেছেন ৬৬ লাখ মার্কিনি। অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, লকডাউন পরিস্থিতি দীর্ঘস্থায়ী হলে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই কর্মসংস্থান কমবে প্রায় দুই কোটি।

আরেকটি তুলনামূলক পরিসংখ্যান দেয়া যাক। মার্কিন ব্যুরো অব লেবার স্ট্যাটিস্টিকসের তথ্য অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ছিল ৩ দশমিক ৫ শতাংশ, যা ছিল ৫০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। সেখান থেকে মার্চে সাত লাখের বেশি মার্কিনি চাকরি হারানোর কারণে দেশটিতে বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। অর্থাৎ করোনার ধাক্কায় মাত্র এক মাসেই যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্ব বেড়েছে প্রায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট। ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস বলছে, দেশটিতে কয়েক মাসের মধ্যেই বেকারত্বের হার ১৬ শতাংশে উন্নীত হবে, যা গত শতাব্দীর ত্রিশের দশকের পর সর্বোচ্চ। গোল্ডম্যান স্যাকসের পূর্বাভাসও প্রায় একই কথা বলছে। তাদের আশঙ্কা, শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ১৫ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াবে। অবশ্য অর্থনীতি করোনার ধাক্কা সামাল দিতে পারলে এ হার ধীরে ধীরে কমবে।

শুধু যে যুক্তরাষ্ট্রই কর্মসংস্থান হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে, তা নয়। জেপিমরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, চলতি বছরের মাঝামাঝি নাগাদ উন্নত দেশগুলোয় বেকারত্বের হার ২ দশমিক ৭ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে যেতে পারে। এ সংকট যে দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে, সে বিষয়েও সতর্ক করেছেন তারা। জেপিমরগ্যানের পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০২১ সালের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার দাঁড়াবে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ। আর ইউরো অঞ্চলের ক্ষেত্রে এ হার হবে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ।

বণিক বার্তা