প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকনের জন্য তারা ছুটে যেতে চান ঘরের বাইরে। তাদের জন্য রয়েছে অসাধারণ এক জায়গা ঢাকার খুব কাছাকাছি। অতি সহজে ও অনায়াসে আপনি বেড়াতে পারেন ঈশা খাঁর স্বপ্নের নগরী ‘সোনারগাঁয়ে'। এখানে অনেক কিছু দেখার আছে; যা যে কাউকে আকর্ষণ করবে। শুধু ভ্রমণ নয়, এর সাথে সাথে আয়োজন করতে পারেন বনভোজনেরও। ভ্রমণ ও বনভোজন একসাথে দুটোই হয়ে গেল। চলে আসুন আজই। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য অবলোকন করুন। মহামারি বিস্তার রোধে চলমাম লকডাউনে দেশের সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ। এ মুহূর্তে ভ্রমণকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। তারপরও লোকজন সোনারগাঁওয়ে বেড়াতে আসছে।করোনার সংক্রমণ কমে গেলে ঘরে বসে থাকার একঘেয়েমিতা কাটাতে আপনি সোনারগাঁয়ে বেড়াতে আসতে পারেন।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/640491207.jpg[/IMG]
এখানে এলে কোথায় যাবেন, কী কী দেখবেন একটু জেনে নিন।
বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর
সোনারগাঁয়ে বেড়াতে গেলে প্রথমেই আপনি যা দেখবেন তা হলো আবহমান গ্রামবাংলার লোক সংস্কৃতির ধারাকে পুনরুজ্জীবন, সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য গড়ে ওঠা বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন; যা সোনারগাঁ জাদুঘর নামে পরিচিত। আপনি বাসে কিংবা প্রাইভেটকারে সোনারগাঁয়ে এসে প্রথমে মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা আসতে হবে। পরে যদি বাসে আসেন তাহলে রিকশায় চড়ে আপনাকে সোনারগাঁ জাদুঘরে আসতে হবে। এখানে এলে আপনার প্রথম নজর কাড়বে দাঁড়িয়ে থাকা প্রায় ১০০ বছরের প্রাচীন এক অট্টালিকা ভবন। এই ভবনটি পুরনো বড় সর্দার বাড়ি খ্যাত। বড় সর্দার বাড়িটি আরও আকর্ষণ করতে সংস্কার করেছে বাংলাদেশের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার ইয়াংওয়ান করপোরেশন। বড় সর্দার বাড়িটি জাদুঘরকে আকর্ষণ বাড়িয়ে তুলেছে। ভবনের বাহিরে দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রাচীন স্থাপত্য ভাস্কর্য দুটি ঘোড়া; যা সোনারগাঁ জাদুঘরের কথা বললেই এই দুই ঘোড়া দেখলেই সবাই অনায়াসে চিনতে পারে।
আপনি জাদুঘরে প্রবেশ করেই আরও দেখতে পাবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের তৈরি গরুর গাড়ির ভার্স্কয, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভার্স্কয ও শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের আবক্ষ ভার্স্কয; যা দেখেই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এখানে এলেই আপনি ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন স্মৃতি জাদুঘর ও বড় সর্দার বাড়ি ভবনের গ্যালারি। বড় সরদার বাড়ি গ্যালারি ও জয়নুল আবেদীন স্মৃতি জাদুঘরের গ্যালারিতে অনেক কিছু ঘুরে ঘুরে দেখতে পাবেন। গ্যালারিগুলোতে কাঠ খোদাই, কারুশিল্প, পটচিত্র ও মুখোশ, আদিবাসী জীবনভিত্তিক নিদর্শন, গ্রামীণ লোক জীবনের পরিবেশ, তামা কাসা পিতলের নিদর্শনে লোকজ বাদ্যযন্ত্র ও পোড়ামাটির নিদর্শন, লোকজ অলংকারসহ অনেক কিছুই রয়েছে। জাদুঘরের অভ্যন্তরে আরও অনেক কিছুই আপনি ইচ্ছেমতো প্রাণ খুলে ঘুরে ঘুরে দেখতে পারেন। এখানে রয়েছে লাইব্রেরি, ডকুমেন্টেশন সেন্টার, ক্যান্টিন, সেমিনার হল, সোনারতরী মঞ্চ, গ্রামীণ উদ্যান, হরেক রকম বৃক্ষ, মনোরম লেক, লেকের মাঝে ঘুরে বেড়ানোর জন্য নৌবিহার, মৎস্য শিকারের ব্যবস্থা, স্থায়ী মনোরম প্রকৃতি অপরূপা সেতু, পঙ্খীরাজ নৌকা। এছাড়া আপনি আরো একটি আকর্ষণীয় এলাকা দেখতে পাবেন জাদুঘরের পশ্চিম প্রান্তে। বিশাল এলাকাজুড়ে তৈরি করা হয়েছে কারুশিল্প গ্রাম। এখানে বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনের তৈরি হয়েছে মানোরম ঘর। এ ঘরগুলোতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অজানা অচেনা অথচ দক্ষ কারুশিল্পীরা বাঁশ বেত, কাঠ খোদাই, মাটি, জামদানি, নকশিকাঁথা, পাট শিল্প, ঝিনুক,কামার, শঙ্খ শিল্প, রেশম শিল্প, একতারা ইত্যাদি উৎপাদন করছেন। এখানে কারূপণ্য প্রদর্শন ও বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। আপনি আপনার পছন্দের কারূপণ্য কিনতে পারেন। ভ্রমণও হলো আর কেনাকাটাও সারা হলো। এ সোনারগাঁ জাদুঘরে আসলেন আর জানলেন না জাদুঘরটি কবে প্রতিষ্ঠিত হলো। আর কে প্রতিষ্ঠিত করল। ১৯৭৫ সালের ১২ মার্চ শিল্পচার্য জয়নুল আবেদীন প্রতিষ্ঠা করেন লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন (সোনারগাঁ জাদুঘর)। প্রথমে এটি ঐতিহাসিক পানাম নগরীর একটি পুরনো বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত হয়। পরে ১৯৮১ সালে ১৫০ বিঘা আয়তনের কমপ্লেক্সে এ দেশের সাধারণ মানুষের শৈল্পিক কর্মকাণ্ডের পরিচয়কে তুলে ধরতে শিল্পী জয়নুল আবেদীন এই জাদুঘর গড়ে তোলার প্রয়াস নেন। লোক ও কারুশিল্প জাদুঘর সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে বুধবার ও বৃহস্পতিবার। অন্যান্য দিন সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। জাদুঘরে প্রবেশ ফি দুটি ভবনের গ্যালারিসহ ৩০ টাকা।

পানাম নগরী
জাদুঘর থেকে বেরিয়ে ঠিক উত্তর দিকে গেলেই আপনি দেখতে পাবেন ঐতিহাসিক পানাম নগরী। এখানে রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন স্থাপত্যকলা ও শিল্পের অনুপম নিদর্শনে ভরপুর। রাস্তার দুইপাশে শত শত বছরের পুরনো অট্টালিকা দাঁড়িয়ে আছে। আপনি পানামে এলেই মন যেন অন্যরকম অনুভব হবে। পানামের অট্টালিকা আপনাকে স্বাগত জানাবে। পানামে এলেই আপনি দেখতে পাবেন পানামের চারদিকে পরিখা বেষ্টিত দুই দিকে ফটকসমৃদ্ধ ইমারতরাজী শোভিত নাচঘর, নহবতখানা, দরবার কক্ষ। পানামের এক পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পঙ্খীরাজ খাল। একটু উত্তর দিকে দেখতে পাবেন পঙ্খীরাজ সেতু (পানাম সেতু) ও নীলকুঠি। ঈশা খাঁর সময়কালে এই নগরী বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য ছিল। সোনারগাঁওয়ে রাজদণ্ড বা রাজকার্য পরিচালিত হতো এই পানাম নগরী থেকেই। এ নগরীই যে প্রাচীন বাংলার রাজা-বাদশাদের বাসস্থান ছিল তার প্রমাণ এই অঞ্চলের স্থাপত্য নিদর্শনগুলোর মধ্যেই পাওয়া যায়। আর এ কারণে পানাম গড়ে উঠেছিল বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্যের সমন্বয়ে; যা বর্তমান প্রজন্মের কাছে ইতিহাসের স্বাক্ষর স্বরূপ। এ নগরীতে আরও রয়েছে- খাজাঞ্চিখানা, ঠাকুর ঘর, গুপ্তপথ, মঠ, মন্দির, পুরানো লোক কারুশিল্প জাদুঘর ভবন,পোদ্দার বাড়ি, চারশ' বছরের প্রাচীন টাকশাল বাড়ি, বিনোদন পিকনিক স্পট, টুরিস্ট হোম এবং প্রাচীন বিদ্যাপীঠ সোনারগাঁ জি আর ইনস্টিটিউশন। সম্প্রতি পানাম নগর প্রত্নতাত্ত্বিক অধিদপ্তর আধুনিক পর্যটন নগরীর জন্য কাজ করছে। সোনারগাঁয়ে ভ্রমণে এলে আপনি পানামে অনায়াসে ঘুরে যেতে পারেন। পানামের বাইপাস সড়কের পাশে রয়েছে মনোরম লেক। এ লেকে নৌকায় চড়ে খুব আনন্দে বেড়াতে পারবেন আপনি। জাদুঘর থেকে পানামে রিকশা ভাড়া নেবে ১০-১৫ টাকা। পানাম নগরের প্রবেশ ফি ১৫ টাকা।