[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/466101986.jpg[/IMG]
গত সপ্তাহে কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান। এর কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই আফগানরা ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলনের চেষ্টা করে। তৈরি হয় ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘ সারি। যদিও তালেবান ক্ষমতা দখলের পর পরই বন্ধ হয়ে যায় ব্যাংকসহ আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো। স্থগিত হয়ে যায় দেশের বাইরে থাকা আফগানদের পরিবারের জন্য অর্থ পাঠানো। একদিকে ক্রমে দাম বাড়ছে বিভিন্ন পণ্যের, অন্যদিকে ফুরিয়ে আসছে দেশটির নাগরিকদের হাতে থাকা নগদ অর্থও। ফলে অর্থনৈতিকভাবে এক বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মুখোমুখি দেশটির নাগরিকরা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শহরগুলোর এটিএম খালি এবং ব্যাংক ও কাবুলের প্রধান আর্থিক বিনিময় প্রতিষ্ঠান সারাই শাহজাদা এখনো বন্ধ রয়েছে। সব মিলিয়ে এক সপ্তাহ আগে তালেবান ক্ষমতা দখলের পর দেশটি একের পর এক অর্থনৈতিক ধাক্কার মুখোমুখি হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে থাকা আফগানিস্তান কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৯০০ কোটি ডলারের রিজার্ভে প্রবেশাধিকার পায়নি তালেবান। পাশাপাশি পূর্বের সরকার ভেঙে যাওয়ার কারণে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের দেয়া এসডিআরও আটকে গেছে। ফলে এমন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ডলারের সরবরাহ থেকেও বাইরে রয়েছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এমন পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির মুখোমুখি হচ্ছে সাধারণ আফগানরা। পাশাপাশি কমে গেছে আফগানির মূল্যমান এবং দেশটির নাগরিকরা নগদ অর্থের সংকটে পড়তে শুরু করেছে।
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বন্ধ হয়ে গেছে। সাবেক সরকারের পতনের সময় দেশটির নাগরিকরা ব্যাংকে থাকা সঞ্চয় তুলে নিতে ব্যাংকগুলোতে ভিড় করেন। এরই মধ্যে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন সংকটে জর্জরিত থাকা দেশটিতে বিপুল মূল্যস্ফীতি ও বহুবিধ জটিলতা বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করছেন। গত সপ্তাহে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া দেশটির সাবেক কেন্দ্রীয় ব্যাংকার আজমল আহমদিও মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি নিয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি শিগগিরই দুই অংকে পৌঁছাতে পারে। দেশটিতে চলমান সংকটের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওভারসিজ ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের গবেষক গ্রায়েম স্মিথ বলেন, কাবুলে ডলার দিয়ে নিয়মিতভাবে এবং কখনো কখনো সাপ্তাহিকভাবে দেশটির মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঠেকানো হয়েছে। এখন যদি তালেবানরা শিগগিরই নগদ অর্থ না পায়, তবে মুদ্রার অবমূল্যায়নের ঝুঁকি রয়েছে। এটি সাধারণ মানুষের জন্য কাবুলের রাস্তায় রুটি কেনা কঠিন করে তুলবে। সেন্টার ফর গ্লোবাল ডেভেলপমেন্টের সিনিয়র ফেলো জাস্টিন সান্দেফুর বলেন, স্বল্পমেয়াদে দেশটিতে বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আপনি স্থানীয় মুদ্রা ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা ও আর্থিক সংকটের দিকে তাকালে সাধারণ মানুষের কষ্ট দেখতে পাবেন। দেশটির অর্থনীতিতে গত সপ্তাহে ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন ও মানিগ্রামের কার্যক্রম স্থগিতের সিদ্ধান্তেরও গভীর প্রভাব ফেলবে। কারণ দেশটির অনেক পরিবার প্রবাসী আয়ের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বব্যাংকের মতে, প্রবাসী আয় আফগান জিডিপির ৪ শতাংশের সমান, যা বছরে ৮০ কোটি ডলার।
নগদ অর্থের ঘাটতি দেশটির অর্থনীতিতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলতে পারে। এক্ষেত্রে তালেবান যদি অর্থনীতিকে দাঁড় করানোর রাস্তা খুঁজে পায়, তাহলে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নত হওয়ার সুযোগ আছে। এরই মধ্যে শহরগুলোর বাসিন্দারা বাসা ভাড়া পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে এবং কেউ কেউ খাদ্য ও জ্বালানি না পাওয়ার অভিযোগ করেছে।
হিয়ার আফগান উইমেনের এক সদস্য টুইট করেছেন, আপাতত আমি আমার সন্তানের জন্য খাবার চাই। আমরা আজ মিষ্টি চা দিয়ে রুটি খেয়েছি। গ্যাস খুব ব্যয়বহুল, সব ব্যাংক বন্ধ, কাবুলের দোকানগুলোতে খাদ্যসামগ্রীর অভাব, সিম রিচার্জের জায়গা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না এবং আমরা আমাদের জীবন নিয়ে শঙ্কার মধ্যে রয়েছি।