অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ইউরোপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (ইসিবি) সুদহার সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য ১৪ মাসে ১০ দফায় সুদহার বাড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ইসিবির সর্বশেষ ঘোষিত সুদহার ৪ শতাংশ। তবে সহসা এটি আর না বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে। সুদহার বাড়ানোর পাশাপাশি ইসিবি আগামী দিনগুলোয় মূল্যস্ফীতি বাড়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছে। মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রা ২ শতাংশে নিয়ে আসাটা প্রত্যাশার চেয়ে বেশি কঠিন হবে বলে মনে করছে ইসিবি। তার জন্য সময় লাগবে। অন্যদিকে সুদহার ক্রমাগত ঊর্ধ্বমুখী থাকায় মন্থর হয়ে আসছে শিল্পোৎপাদন ও বিনিয়োগ কার্যক্রম। চাপ পড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও। আগামী দিনগুলোয় প্রবৃদ্ধিতে ধীরগতি থাকবে বলে মনে করছে ইসিবি। ইসিবির নীতিনির্ধারকরা বর্তমানে একটা টানাপড়েনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন। মূল্যস্ফীতির সূচক লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে এখনো আশঙ্কাজনক মাত্রায় বেশি। পাশাপাশি রয়েছে ঋণসংক্রান্ত ব্যয় বেড়ে যাওয়া এবং চীনের অর্থনৈতিক মন্থরতার প্রভাব। সব মিলিয়ে হিমশিম খাচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর অর্থনীতি। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/213226898.jpg[/IMG]
ইসিবি মনে করেছে, দ্রুত ইউরোজোনের অর্থনীতি প্রত্যাশিত গতি লাভ করবে। ব্যাংকটির ভাষ্যানুযায়ী, ‘*বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় ইসিবি মনে করছে, সুদহার একটা প্রত্যাশিত সীমারেখোয় পৌঁছেছে। সুদহার এ সীমার মধ্যেই কিছু সময় ধরে রাখা হলে তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার পথে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করবে।’ চলতি বছরের জুনে ইসিবি পূর্বাভাস দিয়েছিল, ২০২৩ সালের দিকে ইউরোজোনের মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসবে। ২০২৪ সালে এটি হবে ৩ দশমিক ২ এবং ২০২৫ সালে ২ দশমিক ১ শতাংশ। সর্বশেষ দশমিক ২৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৪ শতাংশে উন্নীত করা হয় সুদহার। ১৯৯৯ সালে ইউরো মুদ্রা চালু হওয়ার পর এ সুদহার সর্বোচ্চ।
২০২২ সালের জুলাই থেকে ইসিবি সুদহার বাড়ানো শুরু করে। সে সময়ে সুদহার ছিল সর্বনিম্ন। অবশ্য ইসিবির প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টিন লাগার্দে পরবর্তী সময়ে সুদহার বাড়ানোর কথা একেবারে নাকচ করে দেননি। শুধু জানিয়েছেন, সুদহার বর্তমান পর্যায়ে স্থির রাখা হবে বেশকিছু দিন। এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘*আমরা মনোযোগ সরাতে চাচ্ছি। সামনে অগ্রসর হতে চাচ্ছি। সুদহার কতদিন এ পর্যায়ে রাখা হবে, তা ঠিক বলা যাচ্ছে না। কারণ আমরা ঠিক জোর দিয়ে বলতে পারছি না যে সুদহার বাড়ানোর এটাই শেষ ধাপ।’
ইউরোজোনের জন্য বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অর্থনৈতিক সংকোচন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এ অঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো স্থবিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমে এরই মধ্যে সংকোচন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। গত কয়েক বছর টানা সুদহার বাড়ার ঘটনা ঋণ গ্রহণকে আরো কঠিন করে তুলেছে। ইসিবির পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রভাব ফেলবে বিদ্যমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। অনেক ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী মনে করেছিলেন, চলতি মাসেই সুদহার কমানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে ইসিবির পক্ষ থেকে। তাদের অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। যদিও কোনো কোনো ইসিবি সদস্য সুদহার বৃদ্ধির বিরোধী ছিল, তবে সিদ্ধান্ত এসেছে সিংহভাগের ঐকমত্যের ভিত্তিতে। বিষয়টি উল্লেখ করে ক্রিস্টিন লাগার্দে বলেন, ‘*আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বেশির ভাগ সদস্য এ ব্যাপারে একমত হয়েছে।’