[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/4729928.jpg[/IMG]
মার্কিন শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলো সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলো। সে ঊর্ধ্বমুখী ধারায় কিছুটা স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে গতকাল এশিয়ার শেয়ারবাজারের প্রধান সূচকগুলোয়ও দেখা গেছে মিশ্র প্রবণতা। ব্যাংক অব জাপানের (বিওজে) জুলাইয়ে নীতিনির্ধারণী সভার বিবরণী প্রকাশ হয়েছে গতকাল। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বিবরণীতে ভবিষ্যৎ মুদ্রানীতি সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দিয়েছে জাপানের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেখানে বলা হয়েছে, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মূল্যস্তর উন্নত হলে সুদহার বাড়াতে পারবে বিওজে। সাম্প্রতিক নিম্নমুখী ধারার পর জাপানের প্রধান সূচক নিক্কেই ২২৫ আবার বাড়তে শুরু করেছে। গতকাল সূচকটি দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে।
এদিকে চীনের মূল ভূখণ্ডের সাংহাই কম্পোজিট সূচক দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচক বেড়েছে দশমিক ৪ শতাংশ। সম্মিলিতভাবে চীনের ব্লু চিপ সূচকগুলো বেড়েছে ৭ শতাংশ। এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো। খাতটি আট সপ্তাহ ধরে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা বজায় রেখেছে। এবারই প্রথম এত দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বমুখিতা দেখাচ্ছে বাজারটি।
গত বুধবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে গাড়ির আমদানির ওপর শুল্ক ১৫ শতাংশ নামিয়ে আনে যুক্তরাষ্ট্র। অন্যদিকে দক্ষিণ কোরিয়ার যানবাহনের ওপর এখনো ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। এর আগে জাপানের গাড়ি থেকেও শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশে বাস্তবায়ন করছে যুক্তরাষ্ট্র। এ পরিস্থিতিতে দক্ষিণ কোরিয়ার গাড়ি শিল্পে উচ্চ প্রতিযোগিতামূলক মার্কিন বাজার নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গতকাল দশমিক ২ শতাংশ পতনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার কসপি সূচক।
অস্ট্রেলিয়ার এসঅ্যান্ডপি এএসএক্স ২০০ সূচক দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে। ভারতের বিএসই সেনসেক্স ও তাইওয়ানের তাইএক্স সূচক কমেছে যথাক্রমে দশমিক ২ ও দশমিক ৭ শতাংশ।
আগের দিন বুধবার মার্কিন পুঁজিবাজার কিছুটা পতনের মুখে পড়েছে। এখানকার প্রধান সূচকগুলো রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছানোর পর বিনিয়োগকারীরা মুনাফা তুলে নেয়ার দিকে ঝুঁকেছে, যার প্রভাব দেখা যাচ্ছে বাজারে। গত বুধবার দশমিক ৩ শতাংশ নিম্নমুখী ধারায় লেনদেন শেষ করে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক। এর মধ্য দিয়ে পরপর দুদিন সূচকটির পতন দেখা গেল। অন্যদিকে ডাও জোন্স ও নাসডাক সূচক কমেছে যথাক্রমে দশমিক ৪ ও দশমিক ৩ শতাংশ।
ওয়াল স্ট্রিটের সব সূচক এখনো সাম্প্রতিক ইতিহাসে সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। গত এপ্রিলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুল্ক ঘোষণার পর এসব সূচক সর্বনিম্ন স্তরে পৌঁছেছিল। তবে বিনিয়োগকারীরা আশাবাদী যে ট্রাম্প সৃষ্ট শুল্কবিবাদ বৈশ্বিক বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে না এবং ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) সুদহার কয়েক দফা কমাতে পারে। গত ১৭ সেপ্টেম্বর সুদহার কর্তনের পর এমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল।
তবে সান ফ্রান্সিসকো ফেডের প্রেসিডেন্ট মেরি ডালি বলছেন, ভবিষ্যতে সুদহার আরো কমানো প্রয়োজন হতে পারে। তবে সে সময় এখনো নির্দিষ্ট নয়। অন্যদিকে ফেড চেয়ার জেরোম পাওয়েল সতর্ক সুরে বলেছেন, সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করা হবে না।
আগামী মাসে সুদহার কমাবে ফেড, বাজার জরিপে এমন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে ৯২ শতাংশ। আগে ভাবা হয়েছিল এ দফা সুদহার কর্তন হবে ১২৫ বেসিস পয়েন্ট, এখন সে প্রত্যাশা ১০০ বেসিস পয়েন্টে নেমে এসেছে। এছাড়া বিনিয়োগকারীদের নজরে রয়েছে শিগগিরই প্রকাশ হতে যাওয়া মার্কিনদের ব্যক্তিগত ভোগব্যয় প্রতিবেদন, দ্বিতীয় প্রান্তিকের (এপ্রিল-জুন) চূড়ান্ত জিডিপি প্রতিবেদন এবং সরকারের সম্ভাব্য শাটডাউনের দিকে।
এরই মধ্যে মার্কিন শেয়ারবাজারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের একাংশে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। কারণ এ প্রবণতা বাজারে বড় ধরনের বাবল তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ফেড যদি আগামী মাসগুলোয় প্রত্যাশা অনুযায়ী সুদহার না কমায় শেয়ারবাজারে তা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে।
কম্পিউটার চিপ ও ডাটা স্টোরেজ খাতের মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানি মাইক্রন টেকনোলজি জানিয়েছে, সর্বশেষ প্রান্তিকে তারা বিশ্লেষকদের পূর্বাভাসের তুলনায় বেশি মুনাফা ও আয় করেছে। তা সত্ত্বেও কোম্পানির শেয়ারদর ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। অথচ চলতি বছরের শুরু থেকে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছিল ৯৭ দশমিক ৭ শতাংশ।
এদিকে মার্কিন খনি শিল্পের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের ফ্রিপোর্ট-ম্যাকমোরানের শেয়ারদর কমেছে ১৭ শতাংশ। কোম্পানিটি জানিয়েছে, চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) তামা বিক্রি পূর্বাভাসের তুলনায় ৪ শতাংশ কম হতে পারে এবং স্বর্ণ বিক্রিও কমতে পারে প্রায় ৬ শতাংশ।
মার্কিন সরকার কোম্পানিতে অংশীদারত্ব নেয়ার কথা বিবেচনা করছে এ খবর প্রকাশের পর লিথিয়াম আমেরিকাসের শেয়ারদর বেড়েছে ৯৫ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া আগস্টে যুক্তরাষ্ট্রে নতুন বাড়ি বিক্রি পূর্বাভাস ছাড়িয়ে যাওয়ার খবরে নির্মাণ খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেড়েছে।
বন্ড ও মুদ্রা বাজারে মার্কিন ১০ বছরের ট্রেজারি নোটের রিটার্ন প্রায় স্থির ছিল গতকাল। ডলার সূচক দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে, বিনিময় হারে ইয়েনের তুলনায় শক্তিশালী হয়েছে মার্কিন ডলার। ইয়েনের তুলনায় সর্বোচ্চে পৌঁছেছে সুইস ফ্রাঁ এবং ইউরো এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।