একবার বন্ধুদের সাথে গিয়েছিলাম বুফে খেতে। এমনিতেই কাকরা, পুডিং এগুলো আমার অনেক পছন্দের। আর বুফে তে ১০১ আইটেমের মধ্যে এই ২টিও ছিল। তারমানে আনলিমিটেড কাকরা এবং পুডিং। বুফেতে গিয়ে একটি আজব জিনিস লক্ষ্য করলাম, বেশিরভাগ মানুষের টার্গেট হল ১০১টি আইটেমের সবগুলোই যথাসম্ভব বেশি করে খাওয়া। আমরা গিয়েছিলাম রোজার সময়। তাই সাধারন আইটেমগুলোর সাথে ইফতারের আইটেমও ছিল। ছোলা-ই ছিল প্রায় ১০ রকমের। অনেকে দেখলাম ১০ রকম ছোলাই টেস্ট করে দেখছে। আবার কেউ কেউ ২-৩ রকম পিয়াজু ৪-৫টা করে নিয়ে বসে আছে। এখানে উল্লেখ্য হল, যেখানে খেতে গিয়ে আপনি আনলিমিটেড বিফ, চিকেন, চিংড়ি, বিরানি, কাবাব পাচ্ছেন, সেখানে ১০ রকম ছোলা খেয়ে পেট ভরানো হাস্যকর। আমার বেশিরভাগ বন্ধুদেরই বুফে খাবার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। এক বন্ধু তো রীতিমত বুফেতে কিভাবে খেয়ে টাকা উশুল করতে হয় সেই আর্টিকেল পড়ে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। যদিও সে টাকা উশুল করতে পারেনি। :((
আমি যখন নতুন ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করি, তখন একজনের কাছ থেকে $৫ লিবারটি রিসার্ভ ধার করে টেস্ট ডিপোজিট করেছিলাম। একদমই নতুন ছিলাম বিধায় একটা ভয় কাজ করতো। মনে হত একটু ভুল করলেই তো লস হয়ে যাবে। আর তখন তো এই $৫ এর মূল্যও অনেক বেশি ছিল। তাই খুব বুঝে শুনে ট্রেড দিতাম। স্ট্রাটেজি ছিল হেইকেন আশি যখন সবুজ ক্যানডেল দেখাবে, তখন বাই দিব। আর যখন লাল রঙের ক্যানডেল আসবে, তখন সেল দিব। অনেক জায়গায় পড়েছিলাম মানি ম্যানেজমেন্টের গুরুত্ব। তাই এই বিষয়গুলো মেনে চলার প্রতি প্রথম থেকেই আগ্রহ কাজ করতো। ট্রেডিং পদ্ধতি খুবই সাধারন ছিল, খুব বেশি তখন বুঝতামও না। ইন্ডিকেটর সিগন্যাল দিলেই সে অনুযায়ী ট্রেড দিয়ে ৫০ পিপস টেক প্রফিট এবং ৫০ পিপস স্টপ লস দিয়েই বসে থাকতাম।
সে সময় একটি সুবিধা ছিল। সুবিধা কি অসুবিধা তা বলা মুশকিল। তখন আমার বাসার ব্রডব্যান্ড কানেকশন প্রায়ই চলে যেত। ঝড়-বৃষ্টি হলেও নেট চলে যেত। তখনও ওয়াইম্যাক্সগুলো ততটা নেটওয়ার্ক সম্প্রসারন করেনি এদিকে। তাই ইচ্ছা হলেই যে টেক প্রফিট বা স্টপ লস হিট করার আগে ট্রেড নিজে থেকেই ক্লোজ করে দিব, তার সুযোগ সবসময় পাওয়া যেত না। কারণ ট্রেড দেয়ার পর যে ম্যানুয়ালি ক্লোজ করতে পারবো তার নিশ্চয়তা ছিল কম। এমনও হয়েছিল যে বৃহস্পতিবার ট্রেড দিয়েছি। নেট চলে গেছে, আসলো শনিবার। এখন যদি স্টপ লস দেয়া না থাকে, তবে শুক্রবারের হাই ভোল্টেজ নিউজে শহীদ হয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকতো। তার ওপর বিদ্যুৎ যাওয়ার সমস্যা তো ছিলই। অ্যান্ড্রয়েড বা আইফোনের জন্য মেটাট্রেডারের মোবাইল ভার্সন বের হয়নি তখনও। তাই ট্রেড করতে হত টেক প্রফিট বা স্টপ লসের ওপর ভিত্তি করে। এখন আমরা অনেকেই একটি কাজ করি যে স্টপ লস দেই না এই ভেবে যে, কম্পিউটারের সামনেই তো থাকবো। স্টপ লস দিয়ে কিইবা হবে। তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে এগুলো মানতে হত।
আমার প্রথম দিকে সাকসেস রেট ভালই ছিল। তখন নতুন ছিলাম এবং প্রতি ট্রেডে রিস্ক নিতাম ১০%. প্রতি পিপ ভ্যালু ১ সেন্ট করে। ২ সপ্তাহের মধ্যেই ব্যালেন্স দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছিল। $৫ থেকে $১০. মানি ম্যানেজমেন্ট করেছিলাম খুব ভালভাবে, যদিও ১০% মোটেও নিরাপদ মানি ম্যানেজমেন্ট পদ্ধতি নয়। কিন্তু তখন বুঝতে পারতাম না। যাইহোক যেহুতু ব্যালেন্স ডাবল, লট সাইজও ডাবল হল। ব্যালেন্স যখন বেড়ে $১৪ হল, তখন আমি প্রতি পিপসে ২ সেন্ট ভ্যালু অনুযায়ী ট্রেড দিতাম। একদিন এক নিউজ সাইটে এন. এফ. পি নিউজ সম্পর্কে পড়লাম। ভাবলাম সবাই নিউজ ট্রেড করছে, আমি কি এক স্ট্রাটেজি নিয়ে পড়ে আছি। আজ নিউজ ট্রেড করতেই হবে। ট্রেড দেয়ার সময় মনে হল আজ একটু বড় লটেই ট্রেড দেই। লাভ বেশি হলে পড়ে ক্যাপিটাল বেড়ে যাবে। তখন ১০% রিস্ক নিয়ে ট্রেড করলেও তো প্রফিট তুলনামূলক বেশি হবে। সেই আবনা অনুযায়ী ২ সেন্ট থেকে সরে এসে, ৫০ সেন্ট প্রতি পিপ ভ্যালু ধরে একটি ট্রেড দিয়ে বসলাম। ২ মিনিট সময়ও সম্ভবত লাগেনি অ্যাকাউন্ট শূন্য হতে নিউজটি রিলিজ হওয়ার পর। যখনই আমি আমার স্ট্রাটেজি থেকে সরে এসে বেশি বুঝতে গেলাম, তখনই আমার অ্যাকাউন্ট শূন্য হয়ে গেলো।
কেন ফরেক্সে শুরুতে সবাই অনেক প্রফিট করে
আপনি যখন খাবার জন্য ২টি আইটেম পাবেন, স্বভাবতই আপনি ২টিই তৃপ্তি নিয়ে খাবেন। কিন্তু যখন আপনার সামনে ১০১টি আইটেম নিয়ে বলবে যত খুশি খা (!!!), তখনই শুরু হবে আসল বিপদ। আপনি বিভ্রান্তিতে পড়বেন যে কোনটা রেখে কোনটা খাবো? দেখা যাবে অর্ধেক বার্গার খেলেন, তো একটি পর ওটা রেখে পুডিং খাচ্ছেন। আবার ওটা শেষ না করেই ভাবছেন কাবাবটা একটু চেখে দেখি।
ফরেক্স ট্রেডিংয়ের খেত্রেও আমাদের ঠিক একই সমস্যা হয়। প্রথমে আমরা নতুন থাকি। তাই আমরা জানিও কম। হয়তোবা কেউ আমাদেরকে ২-১টি নির্দিষ্ট রুলস বা স্ট্রাটেজি শিখিয়ে দেয় আর আমরা অন্ধভাবে সেটাই মেনে চলি। টেক প্রফিট, স্টপ লস এগুলো ঠিকভাবে দেই কারণ আমাদেরকে সেভাবেই বলা হয়েছে। তাই দেখা যায় ফরেক্সে শুরুতে যারা এভাবে নিয়ম মেনে ট্রেড করেন, তারা ভালো প্রফিট করতে পারেন। অবশ্য সবাই প্রথম থেকেই নিয়ম মানে না, লোভী ট্রেডার থাকেই। কিছুদিন গেলেই আমরা অনেক রকম স্ট্রাটেজি শিখি। আমাদের কাছে ১০১ রকম অপশন চলে আসে। আমরা তখন আর ১টি নির্দিষ্ট স্ট্রাটেজি মেনে চলি না। আজ এক স্ট্রাটেজি অনুসরণ করি তো কাল আরেক। দেখা যায় ট্রেড এন্ট্রি করছি ফিবোনাচ্চি দেখে, আর ট্রেড এক্সিট করছি আরেক ইন্ডিকেটর দেখে। ফরেক্স মার্কেটে টিকে থাকার একটি মূল বিষয় হল নির্দিষ্ট কিছু একটি অনুসরণ করা, সেটা ভালো হোক আর খারাপ হোক। আপনি যদি একটি স্ট্রাটেজিকে দীর্ঘসময় ধরে পরীক্ষা নাই করেন, তবে কিভাবে বুঝবেন সেটা ভালো না খারাপ? ২-৩ দিনের রেজাল্ট দেখে কিছুই বোঝা যায় না। আমরা যখন নতুন থাকি, তখন বাধ্য হয়েই সেটা করি, কিন্তু পুরনো হয়ে গেলে আমরা অনেক কিছু শিখে ফেলি, আর সবকিছু মাথায় এমনভাবে গোলমাল পাকায় যে আর আমরা লক্ষ্যে স্থির থাকতে পারি না।
আপনার ১০১ রকম স্ট্রাটেজির মধ্যে ঘোরাঘুরি করার অভ্যাস থাকে, তবে আগে হোক পড়ে হোক আপনার অ্যাকাউন্ট শূন্য হবেই। তাই প্রথমে সব স্ট্রাটেজির মধ্যে থেকে কোনটি নিয়ে ট্রেড করতে চান সেগুলো নির্বাচন করুন। টেস্ট করুন, তারপর সেটাকে নিয়ে দীর্ঘসময় ট্রেড করুন। রিস্ক কম নিন। স্ট্রাটেজি কাজ না করলে প্রয়োজনে যথেষ্ট পরিমাণ পরীক্ষা করার পর নতুন স্ট্রাটেজি নিয়ে টেস্ট করুন। ডেমো বা রিয়েলে অল্প মানি নিয়ে টেস্ট করুন। প্রায় সব স্ট্রাটেজি দিয়েই স্বল্প পরিমাণ লাভ নিয়মিত করা যায়। ফরেক্স ট্রেডিং শুরু করার সময় আমাদের যে ধরণের রুলস মেনে চলার মানসিকতা থাকে, তা বজায় রাখতে পারলে পরবর্তী সময়ের ট্রেডিংয়ে টিকে থাকা এবং প্রফিট করা সহজ হয়।
বোনাস - বুফে খাবার স্পেশাল টিপসঃ সব আইটেমের মধ্যে থেকে নির্দিষ্ট অল্প কোনগুলো তৃপ্তি নিয়ে খেতে চান তা নির্বাচন করুন। পানি খুব বেশি খাবেন না। কিছু মানুষ সব আইটেম যত বেশি সম্ভব খাওয়া যায় তাই খেতে চায়। তারা কখনও পূর্ণ তৃপ্তি পায় না। আপনার কাছে যেগুলো খেতে ভালো লাগে সেগুলো খাবেন। সবগুলো খেতে হবে এমন কোন কথা নেই। বুফেতে সব আইটেম বেশি খাওয়াটাই সার্থকতা নয়। আপনার কাছে যেগুলো প্রিয়, সেগুলো তৃপ্তি নিয়ে আপনার ইচ্ছামত খাওয়াটাই বড় সার্থকতা।