কভিড-১৯ মহামারীজনিত বিধ্বস্ত অবস্থা থেকে আগেভাগে পুনরুদ্ধার শুরু হওয়া দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষে আছে চীন। গত বছরের মাঝামাঝি থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। শিল্প উৎপাদন ও রফতানিতে কয়েক দশকের মধ্যে রেকর্ড সৃষ্টি করে দেশটি। তবে অর্থনীতির আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ গ্রাহকব্যয়ে এখনো পিছিয়ে রয়েছে চীন। ফলে দেশটির অর্থনীতি অসম এক পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/884333945.jpg[/IMG]
গত মাসে রফতানি ও আবাসন খাত চাঙ্গা থাকলেও পূর্বাভাসের চেয়ে পিছিয়ে আছে খুচরা বিক্রি। সুতরাং বছরের প্রথম প্রন্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) পর এপ্রিলেও চীনের পুনরুদ্ধার ভারসাম্যহীন অবস্থায় রয়েছে। গত বছরের তুলনায় এপ্রিলে শিল্প উৎপাদন ৯ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে, যেখানে ১০ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। পাশাপাশি দেশটির খুচরা বিক্রি ১৭ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়েছে। ২৫ শতাংশ বৃদ্ধির পূর্বাভাসের তুলনায় এ খাতের পুনরুদ্ধার ধীর অবস্থায় রয়েছে। পূর্বাভাসের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বছরের প্রথম চার মাসে স্থিত সম্পদ বিনিয়োগ ১৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়েছে। এছাড়া এ সময়ে দেশটির বেকারত্বের হার ৫ দশমিক ১ শতাংশ ছিল। এ তথ্যগুলো ইঙ্গিত দিচ্ছে, চীন বিশ্বজুড়ে প্রবৃদ্ধির চালক এবং পণ্যগুলো চাহিদার উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। নীতিনির্ধারকদের প্রণোদনা কমিয়ে আনা এবং গ্রাহকরা ব্যয় করতে সতর্ক থাকার পরও অর্থনৈতিক ব্যাপ্তি এরই মধ্যে শক্ত অবস্থানে পৌঁছেছে। সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান পিনপয়েন্ট অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের প্রধান অর্থনীতিবিদ ঝিওয়ে জাং বলেন, প্রথম প্রান্তিকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সম্ভবত শীর্ষে উঠেছিল। আমরা আশংকা করছি, আগামী মাসগুলোয় দেশটির প্রবৃদ্ধি ধীর হবে। তিনি বলেন, চীনে নতুন সংক্রমণ বৃদ্ধি নিয়ে নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে এবং শক্তিশালী এ আর্থিক নীতি ধরে রাখতে হবে।
কভিডের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে চীনের শিল্প খাত খুলে দেয়া হয়েছিল। এজন্য গত বছরের এপ্রিলের তুলনায় এ চিত্র কিছুটা অসামঞ্জস্য দেখাতে পারে। তবে দুই বছরের গড়ের ভিত্তিতে দেখলে প্রকৃত চিত্র দেখা সম্ভব। এক্ষেত্রে প্রথম প্রান্তিকের চেয়ে শিল্প উৎপাদন স্থিতিশীল ছিল। আর স্থিত সম্পদ বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ২ দশমিক ৯ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এদিকে দুই বছরের গড়ের ভিত্তিতে খুচরা বিক্রি মার্চে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির তুলনায় এপ্রিলে ৪ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়েছে। পাশাপাশি পণ্য গ্রহণ ও ক্যাটারিং পরিষেবা উভয়ই দুর্বল হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগ ব্যাংকিং সংস্থা এইচএসবিসি হোল্ডিংস পিএলসির এশীয় অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ফ্রেডরিক নিউম্যান বলেন, দুর্বল আয় বৃদ্ধির কারণে চীনা পরিবারগুলো এখনো তাদের স্বাভাবিক ব্যয় পুনরায় শুরু করতে পারেনি। আগামী মাসগুলোয়ও যদি পরিবারগুলো তাদের ব্যয় বাড়িয়ে তুলতে ব্যর্থ হয়, তবে কর্তৃপক্ষ তারল্য ও বিনিয়োগ ব্যয়ে ছাড় দিতে বাধ্য হতে পারে। এর মাধ্যমে তারা গ্রাহকব্যয় বৃদ্ধি করতে চেষ্টা করবেন।
জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো এক বিবৃতিতে বলেছে, চীনের অর্থনীতি এপ্রিলে আরো দৃঢ় পর্যায়ে স্থিতিশীল হয়েছে। বিশ্বজুড়ে এটি মহামারী ও অসম পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখিও হয়েছে। সম্প্রতি দেশটির শীর্ষস্থানীয় নেতারা এ পুনরুদ্ধারকে ভারসাম্যহীন ও অস্থির হিসেবে বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তারা অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে আরো প্রচেষ্টার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে চাহিদা পুনরুদ্ধারের পরিপ্রেক্ষিতে চীনের শিল্প উৎপাদন শক্তিশালী থেকে গেছে। পাশাপাশি প্রণোদনা ও টিকাদান কার্যক্রম রফতানি বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। পরিবেশ দূষণ কমাতে ইস্পাত ও কয়লার মতো খাতে উৎপাদন কমিয়ে আনতে কাঁচামালের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় কিছু ক্ষেত্রে শিল্প উৎপাদন বাধাপ্রাপ্ত হয়েছিল।
শি জিনপিংয়ের সরকার নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন না করেই ধীরে ধীরে মুদ্রানীতি পরিবর্তন এবং আর্থিক প্রণোদনা কমিয়ে আনছে। সাম্প্রতিক তথ্যে এপ্রিলে ক্রেডিটের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য মন্দা দেখা যাচ্ছে। এজন্য গত সোমবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক ব্যবস্থায় নগদ অর্থের জোগান দেয়া হয়েছে।