ফরেক্স বা স্পট মার্কেট হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা কেনা বেচার স্থান। ফরেক্স হল দুনিয়ার বৃহত্তম ফিনান্সিয়াল মার্কেট।ফরেক্স মার্কেট হচ্ছে ট্রেডারদের মার্কেট। যেখানে মার্কেট সপ্তাহে ৫ দিন খোলা থাকে। এখানে সেকেন্ডে হাফ বিলিয়ন ডলার লেনদেন হয়ে যায় কিন্তু রেট বেশী উঠানামা করে না। এই মার্কেটে প্রতিদিন ৪ ট্রিলিয়ন ডলার লেনদেন হয় ,যা সব স্টক মার্কেটের চেয়েও ১০ বা ১৫ গুন বেশী।
এখন আসি ফরেক্স মার্কেটে কি ট্রেড করা হয় সেই বিষয়ে। ফরেক্স মার্কেটে সোজাকথায় মুদ্রা ট্রেড করা হয়। উদহারণসরুপ, আমেরিকার কারেন্সি হছে ডলার, ব্রিটেনের কারেন্সি হচ্ছে পাউন্ড। ফরেক্স মার্কেট এ আপনি ডলার বিক্রয় করে পাউন্ড অথবা পাউন্ড বিক্রয় করে ডলার কিনতে পারেন। ডলার অথবা পাউন্ড ব্যাতিতও আর বিভিন্ন দেশের কারেন্সি আছে যা ফরেক্স মার্কেট এ আপনি ক্রয়-বিক্রয় করতে পারেন।
মেজর কারেন্সিঃ
কারেন্সি চিহ্নের প্রথম তিন অক্ষর ঐ দেশের নাম নির্দেশ করে। যেমনঃ jpy দিয়ে জাপানের নাম বোঝানো হয়েছে। এই কারেন্সি গুলো কে মেজর কারেন্সি বলা হয়েছে কারন এইগুলো সবচেয়ে বেশী ট্রেড হয়। আপনারা দেশের নাম দেখেই বুঝতে পারছেন কেন তারা মেজর।এছাড়া প্রত্যেক কারন্সির নিকনেম আছে। এগুলো গুরুত্বপূর্ণ না।
মেজর ক্রস পেয়ারঃ
যেসব কারন্সি পেয়ার বেশী ট্রেড হয় সেইগুলোই মেজর কারেন্সি পেয়ার। যেহেতু ডলার দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশী ট্রেড হয় তাই ক্রস পেয়ারের একপাশে ডলার থাকবে।
এইসব কারেন্সি পেয়ারের মধ্যে EURO/USD,USD/JPY,GBP/USD,USD/CHF,AUD/USD সবচেয়ে বেশী ট্রেড হয়।
এখানে পেয়ার নামকরণ বুঝতে কিছু সমস্যা হতে পারে। যেমনঃ স্টারলিং-ইয়েন ক্রসকে আমরা ইয়েন ক্রস বলে থাকি। কিন্তু একে তো ইয়েন/ স্টারলিং বলা যেত ! এর কারন অনেক আগে থেকেই শক্তিশালী কারেন্সির বিপরীতে দুর্বল কারেন্সি লেখা হয়ে থাকে। ইয়েনের চেয়ে স্টারলিং শক্তিশালী তাই ইয়েন আগে লেখা হয়। এখানে প্রথম কারন্সিকে বলা হয় বেস কারন্সি এবং শেষ কারেন্সিকে বলা হয় কাউণ্টার কারেন্সি। এছাড়াও গোল্ড ট্রেডিং আমাদের দেশে জনপ্রিয়।
এই কারন্সিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ট্রেড হয় EUR/USD।

এই কারেন্সি গুলার মধ্যে ৭৫ ভাগ ট্রেডার ট্রেড করে থাকে ।সুতরাং কারেন্সিগুলার রাজা বলা যেতে পারে। এবং আইএমএফ মতে সারা বিশ্বের ৬২ ভাগ ফরেন রিজার্ভ আছে US Dollar। কারন বেশিরভাগ ব্যবসায়িক কারেন্সি বিনিময় ডলারে হয়ে থাকে।
ট্রেডিং সেশানঃ
ফরেক্স মার্কেট সপ্তাহের ৫ দিন সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত খোলা থাকে। ফরেক্স ট্রেডিং সেশান চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
১। এশিয়ান সেশানঃ সকাল ৬টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চালু থাকে।(বাংলাদেশ সময়)
২। অস্ট্রেলিয়ান সেশানঃ রাত ৩টা থেকে দুপুর ১২ টা পর্যন্ত চালু থাকে।
৩। লন্ডন সেশানঃদুপুর ১টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত চালু থাকে
৪। আমেরিকান সেশানঃ সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ৩ টা পর্যন্ত চালু থাকে।
ফরেক্স মার্কেটে কিভাবে ট্রেড করবেনঃ
শেয়ার মার্কেটের নিয়ম হচ্ছে যেকোনো শেয়ারের মূল্য সে দেশের মুদ্রার বিপরীতে নির্ধারিত হবে। যেমন, আমাদের দেশের শেয়ার মার্কেটে কোনো শেয়ারের মূল্য টাকায় নির্ধারিত হয়। ফরেক্স মার্কেটে এভাবে নির্ধারিত হয় না। এজন্য ফরেক্স মার্কেটে কারেন্সি পেয়ার ব্যবহার করা হয়।
যেমনঃ EUR/USD (ইউরো/ইউএসডি) একটি কারেন্সি পেয়ার। বর্তমানে 1 EUR/USD = 1.3120 . এর মানে হচ্ছে ১ ইউরো দিয়ে আপনি ১.৩১২০ ডলার পাবেন।অর্থাৎ আপনি যদি ১ ইউরো কে ডলারে বদলাতে চান তবে আপনি ১.৩১২০$ পাবেন। ফরেক্স মার্কেটে কোন কারেন্সি পেয়ার হচ্ছে দুইটা কারেন্সির অনুপাত। কারন্সি পেয়ারের মুভমেন্ট দশমিকের পরে ৩ আর ৪ নাম্বার ঘরেই বেশি হয় তাই একে স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ৫ ডিজিট ট্রেড হয়ে থাকে।
তেমনি 1 AUD/USD = 1.0180 , এর মানে হচ্ছে ১ অস্ট্রেলিয়ান ডলার দিয়ে আপনি ১.০১৮০ আমেরিকান ডলার পাবেন।
1 GBP/USD = 1.6150 , এর মানে হচ্ছে ১ পাউন্ড দিয়ে আপনি ১.৬১৫০ আমেরিকান ডলার পাবেন।
এখন ফরেক্স মার্কেটে ট্রেড করবেন কিভাবে ? আমাদের দেশে শেয়ার মার্কেট দিয়েই বলি । আমরা ডিএসি তে এবিব্যাঙ্ক কিনলাম ৫০ টাকা রেটে ১ লট ।এই রেট যখন ৫৫ পর্যন্ত যাবে তখন আমরা বিক্রি করব। ফরেক্স মার্কেটেও একই রকম। আপনি ইউরো/ডলার রেট আছে ১.৩২০০,আপনি এই রেটে ১ লট কিনলেন। তারপর যখন রেট ১.৩২৫০ পর্যন্ত যাবে তখন বিক্রি করে দিলেন। এভাবে আপনি কারেন্সি ক্রয় বিক্রয় করতে পারবেন।