পরিবেশে সর্বোচ্চ গুরুত্ববিমানবন্দ থেকে কুড়িল, নদ্দা, বাড্ডা ছুঁয়ে কমলাপুর পর্যন্ত ছুটবে দেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। এই অংশের দৈর্ঘ্য হবে ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার। সব ঠিক থাকলে ডিপো নির্মাণের কাজ শুরু হবে আগামী জুন মাসে। এবার প্রকল্প এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব থাকবে পরিবেশের ওপর। যথাসম্ভব রোধ করা হবে শব্দ ও বায়ুদূষণ। ব্যবহার করা হবে না কোনো জীবাশ্ম জ্বালানি। নির্মাণকাজ কমলাপুর থেকেই শুরু হবে বলে জানায় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)।ডিএমট িসিএল সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট নিরসন, পরিবেশ উন্নয়নে অত্যাধুনিক গণপরিবহন হিসেবে ছয়টি মেট্রোরেলের সমন্বয়ে গঠিত ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি (ডিএমটিসিএল)। এর আওতায় মোট ১২৯ দশমিক ৯০১ কিলোমিটার মেট্রোরেল নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে উড়াল ৬৮ দশমিক ৭২৯ কিলোমিটার এবং পাতাল ৬১ দশমিক ১৭২ কিলোমিটার। দীর্ঘ রুটে ১০৫টি স্টেশন থাকবে। এর মধ্যে উড়াল ৫২টি ও পাতাল ৫৩টি। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1621382299.jpg[/IMG]
এমআরটি লাইন-১এটি বাংলাদেশের প্রথম পাতাল মেট্রোরেল। এর মোট দৈর্ঘ্য ৩১ দশমিক ২৪১ কিলোমিটার। এটি দুটি অংশে বিভক্ত। অংশ দুটি হলো- বিমানবন্দর রুট (বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর) এবং পূর্বাচল রুট (নতুনবাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো)। বিমানবন্দর রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৮৭২ কিলোমিটার এবং মোট পাতাল স্টেশন সংখ্যা ১২টি। পূর্বাচল রুটের মোট দৈর্ঘ্য ১১ দশমিক ৩৬৯ কিলোমিটার। সম্পূর্ণ অংশ উড়াল এবং মোট স্টেশন সংখ্যা ৯টি। নতুনবাজার ও নদ্দা স্টেশন বিমানবন্দর বুটের অংশ হিসেবে পাতাল নির্মিত হবে। নতুনবাজার স্টেশনে ইন্টারচেঞ্জ থাকবে। এই ইন্টারচেঞ্জ ব্যবহার করে বিমানবন্দর রুট থেকে পূর্বাচল রুটে এবং পূর্বাচল রুট থেকে বিমানবন্দর রুটে যাওয়া যাবে। উভয় রুটের বিস্তারিত স্ট্যাডি সার্ভে ও বেসিক নকশা সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে ডিটেইলড নকশার কাজ চলমান। ডিটেইল্ড নকশা অগ্রগতি শতভাগ। নির্মাণকাজের সব দরপত্র দলিল প্রস্তুত কার্যক্রমের অগ্রগতি ৮৬ শতাংশ। এমআরটি-১ এর ডিপো ও ডিপো অ্যাক্সেস করিডোর নির্মাণের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ উপজেলার পিতলগঞ্জ ও ব্রাহ্মণখালী মৌজায় ৯২ দশমিক ৯৭২৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে।এমআরটি রুট-১ এর অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক (সিভিল, ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানিং অ্যান্ড ইউটিলিটি) মো. মাহবুব উল আলম জাগো নিউজকে বলেন, দেশের প্রথম পাতাল রেল নির্মাণকাজ শুরুর শেষ প্রান্তে চলে এসেছি। চলতি বছরের জুন মাসে কমলাপুর থেকে নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে আশা করছি। ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে পাতাল মেট্রোরেলের খননকাজ শুরু করতে পারবো। এই লক্ষ্যে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। পাতাল মেট্রোরেল নির্মাণের আগে যেসব কাজ করতে হয় তার সবই শেষ পর্যায়ে।ডিএমটিসি ল জানায়, নির্মাণকাজ তত্ত্বাবধানের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি ৭০ শতাংশ। ডিপোর ভূমি উন্নয়ন সংক্রান্ত প্যাকেজের কারিগরি দরপত্র মূল্যায়ন প্রতিবেদনের ওপর গত ২০ ফেব্রুয়ারি জাইকা সম্মতি দিয়েছে। ডিপোর ভূমি উন্নয়নের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ কার্যক্রমের অগ্রগতি ৮০ শতাংশ।
এমআরটি-১ প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর ও নতুনবাজার থেকে পূর্বাচল পর্যন্ত মোট ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার পথে মেট্রোরেল নির্মিত হবে। এ প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৫৬১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাপান সরকার দেবে ৩৯ হাজার ৪৫০ কোট, বাকি ১৩ হাজার ১১১ কোটি টাকা আসবে সরকারি তহবিল থেকে।রুটহযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর-খিলক্ষেত-কুড়িল-যমুনা ফিউচার পার্ক-বাড্ডা-রামপুরা-মালিবাগ-রাজারবাগ-কমলাপুর এবং কুড়িল থেকে কাঞ্চন সেতুর পশ্চিম পাশ পর্যন্ত।প্রস্তাব ত স্টেশনবিমানবন্দর, খিলক্ষেত, কুড়িল, যমুনা ফিউচার পার্ক, নতুনবাজার, বাড্ডা, হাতিরঝিল, রামপুরা, মালিবাগ, রাজারবাগ, কমলাপুর ও কুড়িল, বসুন্ধরা, মাস্তুল, পূর্বাচল পশ্চিম, পূর্বাচল সেন্টার, পূর্বাচল টার্মিনাল।ডিএমটি িএল জানায়, মেট্রোরেল সম্পূর্ণ বিদ্যুৎচালিত বিধায় কোনো ধরনের জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানি ব্যবহৃত হবে না। ফলে বায়ুদূষণ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। মেট্রোরেল অল্প সময়ে অধিক সংখ্যায় যাত্রী পরিবহন করবে বিধায় ছোট ছোট যানবাহনের ব্যবহার বহুল সংখ্যায় কমে জীবাশ্ম ও তরল জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস পাবে। এতে বায়ুদূষণ উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে যাবে। মেট্রোরেলের রেলওয়ে ট্র্যাকের নিচে মাস স্প্রিং সিস্টেম (এমসিসি) থাকবে। কন্সট্রাকশন উইলডিডি রেল ব্যবহার করা হবে। উড়াল মেট্রোরেলের ভায়াডাক্টের উভয় পাশে শব্দ প্রতিবন্ধক দেওয়াল থাকবে এবং পাতাল মেট্রোরেলের টানেল সংলগ্ন মাটি শব্দ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। ফলে মেট্রোরেলে শব্দ ও কম্পন দূষণ মাত্রা মানদণ্ড সীমার অনেক নিচে থাকবে। সার্বিকভাবে পরিবেশ দূষণে নেতিবাচক কোনো প্রভাব ফেলবে না, বরং পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে।প্রকল্প ব্যবস্থাপক (এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড হেলথ সেফটি) মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রথম পাতাল মেট্রোরেলের খননকাজ শুরু হবে সহসাই। আমরা পরিবেশগত বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি। যাতে খনন, ধুলোবালি ও নির্মাণকাজ করতে গিয়ে স্থানীয়রা দুর্ভোগে না পড়েন। আমরা স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলেছি। আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে যাতে বায়ুদূষণ না হয়। বর্তমানে ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা কত, প্রকল্পের কাজ শুরুর পরে কত হবে- বিষয়গুলো নিয়ে নানা ধরনের ছক কষছি। আমাদের একটাই উদ্দেশ্য থাকবে, প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে স্থানীয়রা যাতে দুর্ভোগে না পড়েন এবং ঢাকার বায়ুমান যেন ঠিক থাকে।উত্তরা দিয়াবাড়ি থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ২১ দশমিক ২৬ কিলোমিটার উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণকাজ চলমান। প্রকল্প এলাকার বাসিন্দারা ধুলাসহ নানা ধরনের দুর্ভোগে পড়েছেন। এমন কোনো সমস্যা সৃষ্টি হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, এমআরটি-৬ এর দায়িত্বে আমি নেই। তবে আমি বলতে পারি এমআরটি-১ প্রকল্পে ১৬ কিলোমিটারের বেশি পাতাল মেট্রো। সুতরাং এখানে সমস্যা হবে না। যেখানে উড়াল মেট্রোরেল নির্মাণ হবে সেই অংশেও জনবসতি কম। তারপরও পরিবেশ ও মানুষের প্রতিবন্ধকতা যেন না হয় সে বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। প্রকল্পের কারণে ধুলোবালি, দূষণ ও মানুষের স্বাস্থ্যগত দিক যাতে ঠিক থাকে সে বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে।’