ফরেন এক্সচেঞ্জ মার্কেট বিশ্বজুড়ে অনেক পরিমানে নতুন ট্রেডারদের আকর্ষিত করে আর দারুন সুযোগসুবিধা প্রদান করে এবং আসলেই অর্জনযোগ্য সুবিধা।
১. ফরেক্স সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা নিয়ে নিন
প্রথমত, কারেন্সি মার্কেট সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা থাকা এবং মাইক্রোইকনোমিক ভেরিয়েবল যা মার্কেটে ওঠানামা করায় সেসম্পর্কে ধারনা থাকাটা প্রয়োজন। মানুষ সফল ট্রেডার হয় এই জেনে যে কীভাবে দীর্ঘ সময় ধরে সফল থাকতে। ফরেক্স ট্রেডে অভিজ্ঞতা হয় চর্চা, জ্ঞান এবং মানুষের কারেন্সি মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞানের ওপর। নিশ্চয়ই সবার সর্বশেষ লক্ষ্য হচ্ছে লাভজনক হওয়া। কিন্তু সেখান পর্যন্ত পৌছাতে, সবার আগে নতুনদের শিখতে হবে।
২. অর্জনের মতো ট্রেডের লক্ষ্য নির্ধারণ করা
[ফরেক্স] সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা পাওয়ার পরে বাস্তবসম্মত ট্রেডের লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা বাধ্যতামূলক। একবার নির্ধারণ করে নিলে যে আপনি ট্রেডিং থেকে কি চান, আপনি পদ্ধতি অনুসারে নিজের ট্রেডিং ক্যারিয়ারের জন্য একটি সময়সীমা এবং কাজের পরিকল্পনা নির্ধারণ করে নিতে পারেন। লক্ষ্য যদি পরিষ্কার থাকে তাহলে প্রচেষ্টা কম করাটা সহজ হয়ে যাবে সেই ক্ষেত্রে যেখানে রিস্ক / রিটার্ন অ্যানালিসিস লাভজনক ফলাফলকে নিশ্চয়তা প্রদান করে না।
৩. স্বচ্ছ স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করুন
পরবর্তী আবশ্যক ধাপ হচ্ছে ট্রেডিং স্ট্রাটেজি নির্ধারণ করা যেটা আপনার জন্য কাজ করবে, যা আপনার জন্য মানানসই। এটা ব্যাপার না যে আপনি একজন [টেকনিক্যাল ট্রেডার], নাকি [ফান্ডামেন্টাল ট্রেডার], নাকি দুটি মিলিয়ে একটি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে এমন স্ট্রাটেজি থাকা যারজন্য সারাদিন এবং রাত কাজ করার প্রয়োজন হয় না। সেই স্ট্রাটেজির কোন মানে হয় যা দিয়ে আপনি অনেক অর্থ অর্জন করছেন কিন্তু আপনাকে সারাদিন চার্টের সামনে বসে থাকতে হবে? এটা নিশ্চিত করবেন যে আপনি এমন কিছু খুঁজে বের করছেন যা আপনার কাজে আসে, যা আপনার স্টাইল এবং মানুষ ও ট্রেডার হিসেবে আপনার জন্য মানানসই।
৪. ভালো ফরেক্স ব্রোকার বেছে নেয়া
সারাদিনব্যাপী মার্কেটকে মনিটর করার মতো সময় আপনার কাছে যদি না থেকে থাকে, তাহলে আপনি নিজস্ব ঝুঁকি পরিচালনা করতে পারেন এবং সম্ভাব্য লাভ সংরক্ষন করতে পারেন স্টপ লস এবং টেক প্রফিট অর্ডারের মাধ্যমে, যা আপনাকে আপনার নির্ধারিত প্রাইসে মার্কেট থেকে বের করে দেবে। ট্রেইলিং স্টপ বিশেষভাবে অনেক সহায়ক কারন সেটা মার্কেট মুভমেন্টের সাথেসাথে নির্দিষ্ট দূরত্বে আপনার পজিশনকে ট্রাক করবে, যা আপনাকে নিজের লাভ বাঁচাতে সাহায্য করবে যদি মার্কেট আপনার বিপরীতে যায়।
৫. কখনো নিজের সম্পূর্ণ অর্থ দিয়ে ঝুঁকি নেবেন না
রিস্ক কীভাবে ম্যানেজ করতে হবে তা জানুন। আপনার ডিপোজিট হচ্ছে আপনার চালিকাশক্তি, আর আপনি যদি তা হারান, তাহলে আপনি ব্যাবসা থেকে বের হয়ে যাবেন। এজন্য পরিস্থিতি যাই হোক না কেন আপনার কখনো নিজের ডিপোজিটের ৫% এরবেশী ঝুঁকি নেয়া উচিত নয়। প্রত্যেক ট্রেড নেয়ার আগে নিজের মানি ম্যানেজমেন্ট রেশিও অথবা রিস্ক/রিওয়ার্ড রেশিওর কথা সবসময় মনে রাখবেন। কোন ট্রেডে যদি ১০০ পিপ মুভের সম্ভাবনা থাকে আর আপনি যদি তাতে ৩০ পিপ স্টপ দিয়ে প্রারম্ভ করে থাকেন, তাহলে মানি ম্যানেজমেন্ট রেশিও হচ্ছে ১০০/৩০ অথবা ৩.৩ থেকে ১ পজিটিভ। মানি ম্যানেজমেন্ট রেশিও যতোবেশী হবে আপনি ততোভালো করবেন। সবাই লাসের সম্মুখীন হয়, এটা হবেই। এমনকি ৫০% সফলতার হার দিয়ে এবং সঠিক মানি ম্যানেজমেন্ট রেশিওর মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্টকে বাড়াতে পারেন।
৬. আবেগকে নিয়ন্ত্রন করা
নতুন ট্রেডারদের ব্যাপারে একটি জিনিস সত্য যে তারা আবেগী হয়ে যায়। তারা কোন কোন ট্রেডের ব্যাপারে এতোই নিশ্চিত হয়ে যায় যে তারা "সবকিছু" তাতে লাগিয়ে দেয় আর সঠিক ঝুঁকি নিয়ন্ত্রন করার কথা ভুলে যায়। আবেগী ট্রেডাররা অর্থকে নিজেদের সুরক্ষা-এবং-শক্তি-দাতা হিসেবে মনে করে, আর যখন তারা অর্থ হারায়, তারা প্রায়ই বেপরোয়া এবং ভ্রান্ত হয়ে যায়। নতুনরা প্রায়ই ব্যার্থতা আসলে অচল হয়ে যায় নিজেদের লস বাড়িয়ে এবং ট্রেড থেকে দ্রুত বের হয়ে যেয়ে আর পরবর্তীটির দিকে এগিয়ে যায়। যখন ট্রেড করবেন তখন আবেগের বশে যেন না পড়েন, সেজন্য অল্প পরিমান অর্থ নিয়ে ট্রেডিং শুরু করুন। আর তারপর, আপনি আপনার ট্রেডের জন্য অর্থের পরিমান বাড়াতে পারেন, নিজের সুবিধা অনুযায়ী ধীরেধীরে তা করতে পারেন।
৭. মাসিক ভিত্তিতে নিজের পারফর্মেন্স নির্ণয় করুন
প্রতি মাসের অথবা বছরের শেষে নিজের ট্রেডের দক্ষতা পরিমাপ করুন। নিজের ট্রেডের সফলতা অথবা ব্যার্থতাকে একটি ট্রেড দিয়ে বিচার করবেন না। আপনাকে নিজেকে দীর্ঘ সময়ের ব্যাবধানে প্রমান করতে হবে। প্রতিবার যখন আপনি কোন ট্রেড ক্লোজ করবেন তখন শেষ ফলাফল হিসেবে তা ধরে নেবেন না। কয়েকটি ট্রেড করুন, আর তারপর ফলাফল অ্যানালাইজ করুন। একটি লাভ হওয়া স্ট্রাটেজি হয়তো প্রতিমাসে আপনাকে পরপর -১৫ পিপের ১০টি লস দিতে পারে, আর একটি +৩০০ পিপের লাভ দিতে পারে, আর এক বছর এই স্ট্রাটেজি ব্যাবহার করলে তা +২০০০ পিপ মোট লাভ দিতে পারে। কিন্তু আপনি যদি খারাপ দিনগুলোতে তার বিচার করে থাকেন, তাহলে আপনি হয়তো খুব তাড়াতাড়ি হার মেনে ফেলবেন।
৮. নির্ভরযোগ্য ফরেক্স ব্রোকার বেছে নিন
সঠিক ব্রোকার বেছে নেয়াটা হচ্ছে সংগ্রামের অর্ধেক। এটা নির্বাচনের ক্ষেত্রে অধিক আঁচ করা অসম্ভব। তাই, আপনাকে যে বিষয়ে মনোনিবেশ করতে হবেঃ
- সময় নিয়ে রিভিউ এবং সুপারিশগুলো যাচাই করে দেখবেন। - এটা নিশ্চিত করবেন যে ব্রোকার আপনি বেছে নিচ্ছে সেটা বিশ্বস্ত এবং আপনার ট্রেডের বৈশিষ্ট্যের সাথে খাপ খায়। - মনে রাখবেন, একটি কপট এবং অনির্ভর ব্রোকার আপনার সম্পূর্ণ অর্জনকে নষ্ট করে দিতে পারে। আর এটাও গুরুত্বপূর্ণ যে আপনার দক্ষতার লেভেল এবং ট্রেডের লক্ষ্য যেন ব্রোকার যা অফার করছে তারসাথে খাপ খায়। - ব্রোকার কোন ধরনের ক্লায়েন্ট প্রোফাইল অর্জনের প্রচেষ্টায় রয়েছে? - তাদের ট্রেডিং সফটওয়্যার কি আপনার প্রত্যাশার জন্য মানানসই? - তাদের কাস্টমার সার্ভিস কতোটা কার্যকর? - ব্রোকারের সাথে যোগাযোগের আগেই এই সব জিনিস ভালোভাবে তদন্ত করতে হবে।
৯. ট্রেডিং জার্নাল রাখুন ও অ্যানালাইজ করুন
ভালোভাবে ট্রেডের জন্য সবচেয়ে কার্যকরী উপদেশের মধ্যে একটি হচ্ছে শুধু ট্রেডিং জার্নাল রাখা নয়, বড়ং তা পড়া এবং তার ওপর কাজ করা। ট্রেডিং জার্নাল উদ্দেশ্য হচ্ছে নিজের ট্রেডিং সিস্টেমের ওপর আস্থা তৈরি করা। আপনি যখন আস্থার সাথে ট্রেড করবেন তখন আপনি নিরপেক্ষভাবে ট্রেড করতে সক্ষম হবেন। নিজের ট্রেডের সেটআপ, এন্ট্রির সময়ের আবেগ, পরিচালনা, এবং ট্রেড এক্সিট করা, মার্কেটের কার্যকলাপের সঙ্গত হওয়া, এবং লাভ/লসের বিস্তারিত নোট রাখলে আপনি এটা চিনহিত করতে পারবেন যে কোন জিনিসগুলো আপনার জন্য কাজ করছে আর কোন জিনিসগুলো কাজ করছে না।
১০. উচ্চ টাইমফ্রেম ব্যাবহার করুন
নিজের ট্রেডের উন্নয়ন করার জন্য আরেকটি জিনিস যা যেকোনো ট্রেডার করতে পারে তা হচ্ছে বেশী প্রচেষ্টা না করে ট্রেড করা আর ছোট টাইমফ্রেম থেকে সুইচ করে বড় টাইমফ্রেমে সুইচ করা। অনেক ট্রেডারদের এই ভুল ধারনা রয়েছে যে ছোট টাইমফ্রেমে বেশী সুযোগ পাওয়া যাবে এবং বেশী আয় করা যাবে। কিন্তু বাস্তবতা একেবারেই তার বিপরীত। "উচ্চ টাইম ফ্রেম" দিয়ে, আমরা এখানে ৪ ঘণ্টা এবং তারবেশী টাইমফ্রেমের কথা বোঝাতে চাচ্ছি, ৪ ঘণ্টার নিচের যেকোনো চার্টকে "ছোট টাইম ফ্রেম" হিসেবে ধরা হয়, বেশী অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য ১ ঘণ্টার চার্ট উপকারী হতে পারে যা দিয়ে তারা তাদের এন্ট্রি অথবা এক্সিট সূক্ষ্ম করতে পারে, কিন্তু এটা তখনও ছোট টাইম ফ্রেম হিসেবে গণ্য হবে এবং নতুন ট্রেডারদের এটা এড়ালে ভালো হবে।
১১. সর্বদা উন্নতিসাধন করবেন
সকল ট্রেডারদের শেষ কিন্তু অন্তত নয় গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ হচ্ছে যে ট্রেডে সর্বদা উন্নতিসাধনের প্রচেষ্টা করবেন এবং নিজেকে সর্বদা স্ব-শিক্ষিত করবেন। মনে রাখবেন কেউই সফল হয়ে জন্ম নেয়না, বড়ং শিক্ষা এবং চর্চা এদুটোই [ফরেক্স ট্রেডিং] এ উচ্চ লাভের দিকে নিয়ে যায়।