[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/833546500.jpeg[/IMG]
খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রকে সাজানো হয়েছে নতুন রূপে। তৈরি করা হয়েছে নন্দকানন নামের এই স্থাপনা। ঝুলন্ত সেতু, গোলচত্বর, নয়নাভিরাম হাঁটাপথ আর পাহাড়ে ধাপ কেটে তৈরি করা সিঁড়ি নিয়ে নতুন সাজে সেজেছে খাগড়াছড়ির আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্র। একসময় আলুটিলার একমাত্র আকর্ষণ ছিল একটি প্রাকৃতিক গুহা। কিন্তু এখন গুহা দেখতে আসা পর্যটকেরা শান্ত সমাহিত পাহাড়ের রূপও উপভোগ করতে পারবেন। উঁচু পাহাড়ের বেদিতে দাঁড়িয়ে দেখতে পারবেন খাগড়াছড়ি শহরের বিস্তার।
খাগড়াছড়ি শহর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি সড়কের পাশে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের পাদদেশে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের অবস্থান। ২০০ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত এই পর্যটনকেন্দ্রের তোরণ তৈরি করা হয়েছে নতুন করে। বৌদ্ধ স্থাপত্যে গড়া দৃষ্টিনন্দন তোরণ পার হলেই দুই পাহাড় নিয়ে গড়ে ওঠা পর্যটনকেন্দ্র।
দুই পাহাড়কে যুক্ত করতে তৈরি করা হয়েছে ১৮৪ ফুট দীর্ঘ লোহার ঝুলন্ত সেতু (কেব্*ল ব্রিজ)। এই সেতুতে আছে কাচের ব্যালকনি। পাহাড়ের বাঁ দিকে সড়ক ধরে গেলেই দেখা মিলবে প্রাকৃতিক গুহা ও ভিউ পয়েন্টের। আর ডান দিকের সড়ক ধরে এগোলেই দুই গজ দূরে নতুনভাবে তৈরি করা হয়েছে ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া, আড্ডা দেওয়ার স্থান নন্দনকানন। কুঞ্জছায়া আর নন্দনকাননের সাদা গোলচত্বর আর বসার বেঞ্চ প্রকৃতির কোলে তন্ময় হতে দর্শকদের হাতছানি দেবে। গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে দেখা যাবে খাগড়াছড়ি শহর। ৩৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের প্রাকৃতিক গুহা এখনো এই পর্যটনকেন্দ্রের প্রধান আকর্ষণ। গুহা থেকে বেরিয়ে সেতু পার হয়ে নান্দনিক সিঁড়ি বেয়ে দর্শনার্থীরা আসবেন নন্দনকানন ও কুঞ্জছায়ায়। এর পাশেই পাহাড়ে খাঁজ কেটে তৈরি করা হচ্ছে ৭০০ আসনবিশিষ্ট অ্যাম্ফিথিয়েটার। এ ছাড়া চারতলাবিশিষ্ট একটি রেস্টহাউসও নির্মাণাধীন রয়েছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্র জানায়, পর্যটনকেন্দ্রের সৌন্দর্য বাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাসের উদ্যোগে পর্যটন মন্ত্রণালয় ও জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে আলুটিলার উন্নয়নকাজ চলছে। প্রথমে ২০২০ সালে ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় ভিউ পয়েন্ট কুঞ্জছায়া। এরপর তৈরি করা হয়েছে তোরণসহ নানা স্থাপনা। এই কেন্দ্রে ৮৫ লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়েছে ঝুলন্ত সেতু। আর ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে অ্যাম্ফিথিয়েটারে কাজ চলছে। এ ছাড়া কোটি টাকা ব্যয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে চারতলার একটি গেস্টহাউসের কাজও এগিয়ে যাচ্ছে।
গত শনিবার আলুটিলায় গেলে কথা হয় পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আদনান মাসুদ খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, তিন বছর আগে সহকর্মীদের নিয়ে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে এসেছিলেন। সেই সময় গুহা ছাড়া কিছুই ভালো লাগেনি। এবার এসে কারুকার্যময় তোরণ দেখেই মুগ্ধ হয়েছেন। পাহাড়ের মাঝে ঝুলন্ত সেতুর কাচের ব্যালকনি থেকে পাখির চোখে শহর দেখার অভিজ্ঞতা সারা জীবন মনে থাকবে। নতুন রূপে সাজানোর পর আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রে বেড়েছে পর্যটকও। কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক কোকোনাথ ত্রিপুরা বলেন, বর্তমানে প্রতিদিন ৪০০–৫০০ পর্যটক আসছেন এই কেন্দ্রে।
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক প্রতাপ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, পর্যটকদের কথা মাথায় রেখে আগামী এক বছরের মধ্যে আলুটিলা পর্যটনকেন্দ্রের পাশাপাশি রিছাং ঝরনা ও মানিকছড়ি ডিসি পার্ককে নতুন রূপে সাজানো হবে।