জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার বন্ধের বিষয়ে একমত হয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী দেশগুলোর মন্ত্রীরা। তবে এর জন্য কোনো নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের জের ধরে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল সংকটের পরিস্থিতিতে এমন ঘোষণা দেয়া হয়েছে। মন্ত্রীরা বলেছেন, প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় চেষ্টার কমতি রাখা যাবে না। সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণকারী জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা। জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়াবহ প্রভাব এড়াতে কয়লার ব্যবহার সর্বনিম্ন করা প্রয়োজন বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। সম্প্রতি জার্মানির রাজধানী বার্লিনে জি৭ জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শেষ তিনদিনে কয়লাভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার বন্ধে অঙ্গীকারবদ্ধ হয় ধনী দেশগুলো। ২০৩০ সালের মধ্যে জ্বালানি হিসেবে কয়লার ব্যবহার বন্ধের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না বলে জানিয়েছে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র।
মূলত ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি সংকটের সূত্রপাত হয়। এ সংকট কাটিয়ে উঠতেই জি৭ জোটের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধের জের ধরে রাশিয়ার বিকল্প হিসেবে অন্য দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি করছে রুশবিরোধী দেশগুলো। একই সঙ্গে দেশগুলো রুশ জ্বালানিনির্ভরতা কমানোর পাশাপাশি চাহিদা মেটাতে কয়লার ব্যবহার বাড়িয়েছে। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1157430133.jpg[/IMG]
বিদ্যুৎ খাতগুলোকে কার্বনমুক্ত করার বিষয়ে ২০৩৫ সালের সময়সীমা নির্ধারণ করেছে জি৭ জোট। এছাড়া জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পের জন্য অর্থায়ন এ বছরই বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জোটটি। যেসব বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ আটকে রাখার কোনো প্রযুক্তি ব্যবহার হয় না, সেসব ক্ষেত্রেই এটি প্রযোজ্য। পাশাপাশি সড়কেও কার্বন নিঃসরণ রোধের জন্য ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। এর জন্য শূন্য কার্বন নির্গমনকারী হালকা ওজনের গাড়ি বিক্রি বাড়ানোর দাবি উঠেছে। এ প্রতিশ্রুতির কতটা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হয়েছে দেশগুলো এ বিষয়ে আগামী বছর থেকে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। গত বছর কপ২৬ জলবায়ু সামিটে জাপান বাদে জি৭ জোটভুক্ত দেশগুলো কার্বন রোধকারী প্রকল্পে অর্থায়ন না করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। পরিবেশ নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলো জানিয়েছে, সবচেয়ে বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি প্রকল্পগুলোর অর্থায়নের দেশ জাপান। এ অঙ্গীকারে জাপানও শামিল হলে বড় ধরনের পরিবর্তন হবে। ২০১৮ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত এসব প্রকল্পের জন্য গড়ে ১ হাজার ৯০ কোটি ডলার দিয়েছে দেশটি। অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের তথ্য বলছে, এর মধ্যে অধিকাংশই ব্যয় হয়েছে জ্বালানি তেল ও গ্যাস খাতে।
এ বিষয়ে অয়েল চেঞ্জ ইন্টারন্যাশনালের এশিয়া প্রকল্প ব্যবস্থাপক সুজান ওং বলেন, জাপান যদি এ প্রতিশ্রুতি যথাযথ পালন করতে সক্ষম হয়, তবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে সরে যাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব জ্বালানিতে এক বছরে ১ হাজার ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ হবে। এতে করে এশীয় দেশসহ সমগ্র বিশ্বই উদ্বুদ্ধ হবে। এদিকে প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়েও অঙ্গীকারবদ্ধ হয়েছে জি৭ জোট।