[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1707176901.jpg[/IMG]
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তার রাজনৈতিক এজেন্ডা নতুন করে নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে অর্থনীতির ওপর বেশ গুরুতর প্রভাব পড়তে পারে। দেশটির অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়, সেই সঙ্গে বাড়ছে মূল্যস্ফীতি। আবার শিল্প খাতগুলোয়ও ধর্মঘটসহ নানা অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে মজুরি কাঠামোসহ রাজনৈতিক নানা বিষয় নিয়ে সরকার যেসব পরিকল্পনা করছে, তা বাস্তবায়ন করা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। জ্বালানি, বিশেষ করে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশটির পরিবারগুলোর সামগ্রিক খরচ বেড়ে গিয়েছে। এতে অর্থনীতি অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে। এ সপ্তাহেই নতুন পরিসংখ্যান বের হবে, যেখানে দেখা যেতে পারে যে সরকারের দেয়া নানা প্রণোদনাও জীবনযাপনের ব্যয়ের সঙ্গে পেরে উঠছে না। অন্যদিকে, ব্যাংক অব ইংল্যান্ড সুদের হার বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। যাতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ নেয়ার পরিমাণে লাগাম টানা যায়।
নিজের রাজনৈতিক পরিচয়ের ওপর যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে তা ঠিক করতে এবং মন্দা মোকাবেলায় বরিস জনসন বলছেন, অর্থনীতি পুনর্গঠনের ওপর সামগ্রিক বিষয় নিয়ে তিনি শিগগিরই ভাষণ দেবেন। চলতি গ্রীষ্মে দেশের বিভিন্ন স্থানের শিল্প-কারখানাগুলোয় বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা বরিস জনসনের জন্য বড় দুশ্চিন্তার বিষয়। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার মান কমছে। কিছু খাতে কর্মী সংকটও দেখা দিয়েছে। মজুরি নিয়ে তর্ক-বিতর্কও অনিবার্য হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় রেল খাতের কর্মীরা সঠিক মজুরি কাঠামো ও চাকরির নিরাপত্তা চান। তা আদায়ে তিনদিনের জাতীয় ধর্মঘটের পরিকল্পনা করছেন। যদি সেটি বাস্তবায়ন হয় তাহলে তা হবে ১৯৮৯ সালের পর সবচেয়ে বড় কর্মবিরতি।
এখন পর্যন্ত ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী এ দ্বন্দ্ব মোকাবেলার চেষ্টা করছেন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, বড় মজুরি চুক্তি করা হলে তা ১৯৭০ সালের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে, যেখানে সুদের হার হয়তো আরো বাড়াতে হবে। অন্যদিকে যখন জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, ঠিক তখন আরো ৯০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছেন বরিস জনসন। কিন্তু সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করার কাজ শুরু হলে কেবল রেলওয়ে নয় শিল্প খাতের আরো অনেক প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই ধর্মঘটে যাবেন। মূল্যস্ফীতির ধাক্কা লেগেছে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবা খাতেও। এনএইচএসের নার্সদের মজুরি কাঠামোয়ও পরিবর্তন আনার পরিকল্পনা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি খাতের কর্মীদের সরকারের এসব সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। যারা জাতীয় মজুরি কাঠামোর মধ্যে রয়েছেন, তাদের মধ্যে লাখো কর্মী কভিড-১৯ মহামারীকালে সম্মুখসারির যোদ্ধা হিসেবে কাজ করেছেন। তাদের অন্যদের চেয়ে কম বেতন বেড়েছে। একটি পরিসংখ্যান বলছে, বেসরকারি খাতে বেতন বৃদ্ধির হার যেখানে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে সরকারি খাতে তা মাত্র ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর অর্থ হলো চিকিৎসক, শিক্ষক, পুলিশসহ সরকারি কর্মীরা উচ্চমূল্যস্ফীতির এ সময়ে জীবনযাত্রা ঠিক রাখতে সবচেয়ে বেশি হিমশিম খেয়েছেন।
অন্যদিকে, ব্যাংকার, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মীসহ যারা শহরে বাস করেন তাদের মজুরিতে বেশ বড় উল্লম্ফন হয়েছে। ফলে এ মুহূর্তে ব্রিটেনে কর্মীদের মধ্যে বেশ বড় ধরনের অসামঞ্জস্য তৈরি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি জাতীয় পরিসরে রেলের কর্মীরা কর্মবিরতিতে চলে যান, তাহলে এটি অর্থনীতির ওপর বেশ বড় প্রভাব ফেলবে। দ্য সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চের হিসাব অনুযায়ী, তিনদিনের ধর্মঘটে ৯ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড সমপরিমাণ ক্ষতি হতে পারে। সব মিলিয়ে পরিস্থিতি এমন দাঁড়াবে যে প্রধানমন্ত্রীকে হয়তো তার পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হবে।