আগলে রাখা বিটকয়েন বেচে দিতে বাধ্য হচ্ছেন মাইনাররা। ক্রিপ্টো বাজারে চলতি ধস, ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎ খরচ আর প্রতিযোগিতা বাড়ায় মুনাফার চিন্তা ছেড়ে জমিয়ে রাখা ক্রিপ্টো মুদ্রা বেচে নগদ অর্থ তুলে নিচ্ছেন তারা। অর্থনীতি ও বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান ম্যাকরোহাইভের গবেষকদের বরাত দিয়ে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ৭ জুনের পর থেকে ক্রিপ্টো এক্সেচেঞ্জে মাইনারদের বিটকয়েন পাঠানোর হার লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে। ‘এক্সচেঞ্জগুলোতে মাইনাররা যে তাদের ক্রিপ্টো মুদ্রা তরলীকরণ করছেন’ তার স্পষ্ট ইঙ্গিত এটি– মন্তব্য গবেষকদের। বিটকয়েনের বাজার মূল্য ৪৫ শতাংশ হ্রাস পাওয়ার সঙ্গে তাল মিলিয়েই যেন ক্রিপ্টো খাতে বহুল পরিচিত মাইনারদের অনেকেই মে মাসে তাদের অর্জিত বিটকয়েনের পুরোটাই বিক্রি করে দিয়েছেন বলে জানিয়েছে বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান অ্যারকেন রিসার্চ।
এ প্রসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষক জারান মেলেরাড বলেন, “মাইনিংয়ের মুনাফা কমতে থাকায় বিক্রির হার তাদের মে মাসের আউটপুটের একশ শতাংশেরও বেশি বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন মাইনাররা। জুন মাসে পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। অর্থাৎ, তারা সম্ভবত আরও বেশি বিক্রি করছেন।” বিটকয়েন মাইনাররা ব্লকচেইনের লেনদেন যাচাই করে টোকেন কামাতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কম্পিউটার নেটওয়ার্ক পরিচালনা করেন। ক্রিপ্টো মুদ্রা জমিয়ে রাখার জন্য আলাদা পরিচিতি আছে মাইনারদের। ক্রিপ্টো খাতের ডেটা বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কয়েনমেট্রিক্সের তথ্য বলছে, অন্তত আট লাখ বিটকয়েন নিজেদের কাছে জমিয়ে রেখেছিলেন মাইনাররা।
ক্রিপ্টো মাইনিং খাত লক্ষ্যণীয় হারে বেড়েছে ২০২১ সালে। একই সময়ে বিটকয়েনের বাজার দর বেড়েছিল প্রায় চারগুণ। কিন্তু এতে বিপত্তিও বেড়েছে। বিটকয়েনের মাইনিং প্রক্রিয়ার কাঠামো এমনভাবে সাজানো যে মাইনারদের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাইনিং প্রক্রিয়া আরও কঠিন হতে থাকে। ফলে মুনাফা অর্জনও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এ প্রসঙ্গে বিটকয়েন মাইনিং ফার্ম ব্লকওয়্যার সলিউশনস-এর বিশ্লেষক জো বারনেট বলেন, “গত ছয় মাসে হ্যাশ রেট এবং মাইনিংয়ের প্রতিবন্ধকতা আরও বাড়লেও দাম কমেছে বিটকয়েনের। বিদ্যমান মাইনারদের জন্য উভয়ই নেতিবাচক।” বিদ্যুৎ খরচ বাড়তে থাকার কারণেও বিপাকে পড়েছেন বলে উঠে এসেছে রয়টার্সের প্রতিবেদনে। ‘কেমব্রিজ বিটকয়েন ইলেকট্রিসিটি ইনডেক্স’ অনুযায়ী ফিলিপিন্সের এক বছরের বিদ্যুৎ চাহিদার চেয়েও বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয় বিটকয়েন মাইনিংয়ে। প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে মাইনিং করে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিটফার্মস, রায়ট ব্লকচেইন এবং কোর সায়েন্টিফিক-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো ঘোষণা দিয়েই বিটকয়েন বিক্রি করছে। এর মধ্যে বিটফার্মসের প্রধান নির্বাহী নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন যে তার প্রতিষ্ঠান আর প্রতিদিনকার মাইনিং থেকে বিটকয়েন নিজেদের কাছে জমা রাখছে না। এর মধ্যে শেয়ার বাজারে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে জানিয়েছে রয়টার্স। বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বিটকয়েনের মূল্য ৫৩ শতাংশ কমলেও, ‘ভালকিরি বিটকয়েন মাইনার্স ইটিএফ’-এর দাম কমেছে ৫৯ শতাংশ। বিটফার্মসের মতো কিছু প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়ে মাইনিং চালু রাখার এবং ব্যয়বহুল যন্ত্রাংশের দাম মেটানোর চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিচ্ছেন মাইনাররা ?
বিদ্যুৎ চাহিদা বেশি এবং পুরনো এমন মাইনিং কম্পিউটারের মালিক এবং ঋণ নেওয়ার সুযোগ নেই এমন মাইনাররাই বেশি বিপাকে পড়েছেন বলে জানিয়েছে রয়টার্স। অন্যদিকে, ব্লকচেইন বাজার বিশ্লেষক গ্লাসনোডের তথ্য বলছে, জুন মাসের শেষ সপ্তাহে এসে বিটকয়েন মাইনিং দুই দশমিক ৩৫ শতাংশ সহজ হয়েছে। বেশ কিছু মাইনার তাদের মাইনিং নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিয়েছেন বলে ইঙ্গিত মিলছে এই ঘটনা থেকে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/164144652.jpg[/IMG]