দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দিন শেষে রিজার্ভ নেমে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৯৭৭ কোটি বা ৩৯ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলারে। বাংলাদেশ গত সপ্তাহে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নকে (এসিইউ) ১ দশমিক ৯৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের আমদানি পেমেন্ট নিষ্পত্তি করেছে। এতে প্রায় দুই বছর পর দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। আঞ্চলিক লেনদেনের জন্য আমদানি লেনদেন নিষ্পত্তি করে এসিইউ। বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলংকা এসিইউর সদস্য। আমদানির অর্থ ব্যাংকগুলো নিয়মিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা করে। দুই মাস পরপর এসিইউকে বিল পরিশোধ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
রফতানি ও রেমিট্যান্স প্রবাহের তুলনায় আমদানি ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় কয়েক মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ কমছে। যদিও এর আগে রিজার্ভের পরিমাণ ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী ছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের জুন শেষে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ১৫ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলার। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা রিজার্ভ গত বছরের আগস্টে প্রথমবারের মতো ৪৮ দশমিক শূন্য ৬ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। চলতি বছরের শুরুতে রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪৬ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরের শেষ দিন রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪১ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন ডলার। আমদানি বেড়ে যাওয়া ও প্রবাসী আয় কমার কারণে দেশে ডলারের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে ডলারের বিপরীতে পতন হচ্ছে টাকার মান। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করেছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা দরে। মুদ্রাবাজার স্বাভাবিক রাখতে ৩০ জুন শেষ হওয়া ২০২১-২২ অর্থবছরে রিজার্ভ থেকে ৭৬২ কোটি ১০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বিপরীতে বাজার থেকে ৭০ হাজার কোটি টাকার মতো তুলে নেয়া হয়েছে। ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু এর পর থেকে বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়, যা এখন পর্যন্ত অব্যাহত। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1508000323.jpg[/IMG]
২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের মূল্য একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দু-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ৮৫ টাকা ছাড়ায়। এ বছরের ৯ জানুয়ারি এটি বেড়ে ৮৬ টাকায় পৌঁছে। এরপর ২২ মার্চ পর্যন্ত এ দরেই স্থির ছিল। পরে গত ২৩ মার্চ আন্তঃব্যাংকে আরো ২০ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় দাঁড়ায়। ২৭ এপ্রিল আরো ২৫ পয়সা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা। ১০ মে বাড়ে আরো ২৫ পয়সা। ১৬ মে বাড়ে ৮০ পয়সা। গত ৩১ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারে ৮৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এরপর ৪ জুন ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা। ৫ জুন হয় ৯১ টাকা ৫০ পয়সা। ৬ জুন দাঁড়ায় ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা। ৭ জুন ডলারের দাম গিয়ে ঠেকে ৯২ টাকায়। এরপর ৮ জুন নেমে ৯১ টাকা ৫০ পয়সা হয়। ৯ জুন আবার ৯২ টাকা হয়। ১৩ জুন ৯২ টাকা ৫০ পয়সা ও ২৩ জুন হয় ৯২ টাকা ৯৫ পয়সা। এখন আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ঠেকেছে ৯৩ টাকা ৪৫ পয়সা।