বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার চাপ পড়েছে টাকার বিনিময় মূল্যের ওপর। রিজার্ভে চাপ কমাতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে। এর পরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজিভাব। বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে আরও একটি পদক্ষেপ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এবার দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রবাসী, বিদেশে বসবাসরত দ্বৈত-নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশি ও বিদেশি কোম্পানির খোলা বৈদেশিক মুদ্রা আমানত অ্যাকাউন্টের সুদহারের সীমা তুলে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এখন থেকে বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা নীতি বিভাগ থেকে এ-সংক্রান্ত একটি সার্কুলার জারি করে বিদেশি মুদ্রা লেনদেনকারী সব ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের জানিয়ে দেয়া হয়েছে। আমদানি অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় বাজারে ডলারের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বিদেশি মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ কমে ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতিতে ডলারের জোগান বাড়াতে গত বৃহস্পতিবার এক দিনে তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। সিদ্ধান্তগুলো ছিলো - দেশের ব্যাংকগুলো এখন তাদের আমদানির খরচ মেটাতে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট থেকে ঋণ নিতে পারবে। প্রথমবারের মতো এই সুযোগ দেয়া হয়েছে। আমদানি ঋণপত্র বা এলসি খোলার ২৪ ঘণ্টা আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে জানাতে হবে এবং রপ্তানিকারকের রিটেনশন বা প্রত্যাবাসন কোটা (ইআরকিউ) হিসাবে জমা করা বিদেশি মুদ্রার ৫০ শতাংশ অনতিবিলম্বে নগদায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে এই কোটার হিসাবে নতুন করে জমা রাখার হার অর্ধেক করা হয়। বেশ কিছুদিন ধরে চলা ডলারের অস্থির বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে বিলাসবহুল এবং অপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির লাগাম টেনে ধরতে সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটার পর একটা পদক্ষেপ নিয়েই চলেছে। এর পরও কিছুতেই বাগে আসছে না ডলারের তেজিভাব। আমদানি ব্যয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি ও প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স কমে যাওয়ায় দেশে ডলারের এই সংকট দেখা দিয়েছে। রপ্তানি আয় বাড়লেও তা ডলারের সংকট মেটাতে পারছে না। ফলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ডলারের দাম। এ জন্য রিজার্ভ থেকে ডলার ছেড়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রতিনিয়ত দামও বাড়াচ্ছে, দুর্বল হচ্ছে টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংক যে দামে ডলার বিক্রি করছে, বাজারে তার চেয়ে ৪/৫ টাকা বেশি দরে কেনাবেচা হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকদের বেশি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে।কার্বমার্ক ট বা খোলাবাজারে ডলারের দর ফের ১০০ টাকা ছাড়িয়েয়েছে। রোববার প্রতি ডলারের জন্য ১০০ টাকা ২০ পয়সা খরচ করতে হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতেই বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে দেশের ব্যাংকগুলোতে প্রবাসী, বিদেশে থাকা বাংলাদেশি নাগরিক ও বিদেশি কোম্পানির খোলা বৈদেশিক মুদ্রা আমানত অ্যাকাউন্টের সুদহার সীমা তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর ফলে এখন থেকে বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহে ব্যাংকগুলো নিজেরাই সুদহার নির্ধারণ করতে পারবে। নতুন এ সিদ্ধান্তের আগে এনএফসিডি (নন-রেসিডেন্ট ফরেন কারেন্সি ডিপোজিট) নীতিমালা অনুযায়ী, এনএফসিডি আমানতের সুদহার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইউরো মুদ্রার স্বীকৃত সুদহারের বেশি দিতে পারে না দেশি কোনো ব্যাংক। সাধারণত এ সুদহার ১ থেকে দেড় শতাংশে ওঠানামা করে। বেশি সুদ দিয়ে হলেও ডলার সংগ্রহের জন্য রোববার সার্কুলারের মাধ্যমে এ সীমা তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। প্রবাসী বাংলাদেশি, বিদেশে বসবাসরত দ্বৈত-নাগরিকত্ব থাকা বাংলাদেশি, বিদেশে নিবন্ধিত বিদেশি কোম্পানির কাছ থেকে এনএফসিডি অ্যাকাউন্টে বিদেশি মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ করতে পারে ব্যাংক। নতুন এই সিদ্ধান্তের ফলে ব্যাংকগুলো এখন বেশি সুদহার দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রায় আমানত সংগ্রহ করতে পারবে। এতে ব্যাংকগুলোতে ডলারের সরবরাহ বাড়বে; রিজার্ভের ওপর চাপ কমবে বলে বলে আশা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এই নির্দেশনা বিদেশি নাগরিক, ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও শতভাগ বিদেশি মালিকানার শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নেওয়া এনএফসিডি অ্যাকাউন্টের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। দেশের ব্যাংকগুলো ১, ৩, ৬ ও ১২ মাস মেয়াদে বিদেশি মুদ্রায় এনএফসিডি হিসাবে মেয়াদী আমানত সংগ্রহ করতে পারে। এনএফসিডি হিসাব পরিচালনা করতে হলে প্রবাসী ও বিদেশে বসবাসরত ব্যক্তিদের বেলায় ন্যূনতম এক হাজার ডলার সমপরিমাণের বিদেশি মুদ্রা ও অন্যান্যদের বেলায় ২৫ হাজার ডলার জমা রাখতে হয়। বিদেশি মিশনে কর্মরত বা প্রেষণে যাওয়া কর্মকর্তারাও এ ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে পারেন।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1915269319.jpg[/IMG]