চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে প্রবৃদ্ধির চাকা সচল করতে অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে চীন। চলতি বছরের দ্বিতীয়ার্ধে অবকাঠামো খাতে ১ ট্রিলিয়ন ইউয়ান অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিকল্পনা নীতিনির্ধারকদের। ২০০৮-০৯-এর অর্থনৈতিক সংকটের পর অবকাঠামো খাতে এ রকম বড় অংকের বিনিয়োগ বৃদ্ধি দেখেনি বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটি। ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকের পর চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে শ্লথগতির প্রবৃদ্ধি দেখেছে চীন। অল্পের জন্য সংকোচন এড়িয়েছে চীন। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। সাংহাই, কুনশানসহ চীনে কয়েক মাসের লকডাউনে দেশটির শিল্পোৎপাদন ও ভোক্তা ব্যয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার প্রভাব পড়েছে সরবরাহ চেইন ও বৈশ্বিক অর্থনীতিতে। বৈশ্বিক অর্থনীতির পুনরুদ্ধারে চীনের অর্থনীতির চাঙ্গা হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মানছেন বিশেষজ্ঞরা।
সাম্প্রতিক এক জরিপের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, জুনে চীনব্যাপী বেকারত্ব হার ছিল ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত মে মাসের ৫ দশমিক ৯ শতাংশের চেয়ে অবশ্য কিছুটা উন্নত হয়েছে। কিন্তু তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বেকারত্ব হার রেকর্ড ১৯ দশমিক ৩ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। চাকরি হারানোর কারণে অনেক অভিবাসী শ্রমিক শহর ছেড়ে দিয়েছেন। চীনের অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে তৃতীয় প্রান্তিক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, গত শুক্রবারের মন্ত্রিসভার বৈঠকে কর্মসংস্থান স্থিতিশীল করা ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের ওপর জোর দেয়া হয়েছে। চলতি বছরে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে চীন। অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে চীনের বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকার প্রথমার্ধে রেকর্ড হারে বিশেষ বন্ড এসপিবি মুদ্রণ করেছে। এদিকে গত জুনে ৮০ হাজার কোটি ইউয়ান ব্যাংকঋণ অনুমোদন করেছে বেইজিং। ২০০৮-০৯-এর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের সময় অবকাঠামো খাতে ৪ ট্রিলিয়ন ইউয়ান বিনিয়োগ করেছিল চীন। কিন্তু বর্তমানে সেরকম লাভজনক অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নেই বেইজিংয়ের। এমনটা মনে করছেন সাংহাই জাম্বু কনসাল্টিংয়ের চেয়ারম্যান ঝ্যাং লিয়াও। তবে কিছু ডিজিটাল অবকাঠামো যেমন ফাইভজি বেজ স্টেশন ও ডাটা সেন্টারের মতো প্রকল্প দীর্ঘমেয়াদে চীনের উপকারে আসবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া পানি সংরক্ষণাগার এবং বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পও রয়েছে নতুন অবকাঠামো প্রকল্পের আওতায়। নগর গ্যাস সরবরাহ প্রকল্পগুলো পুরনো ধাঁচের পাইপলাইন নেটওয়ার্কের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
চলতি বছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৪৮টি বিনিয়োগ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে দ্য ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিফর্ম কমিশন (এনডিআরসি)। এতে ব্যয় হয়েছে ৬৫ হাজার ৪২০ কোটি ইউয়ান। ২০২১ সালের পুরো বিনিয়োগের ৮০ শতাংশেরও বেশি। এদিকে বিভিন্ন অবকাঠামো ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে জুনের মধ্যেই বার্ষিক এসপিবি কোটা প্রায় অতিক্রম করে ফেলেছে বিভিন্ন প্রদেশের স্থানীয় সরকার। চীনের অর্থ মন্ত্রণালয়ের বরাতে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত স্থানীয় সরকার প্রায় ৩ দশমিক ৪১ ট্রিলিয়ান ইউয়ান নতুন মুদ্রা এনেছে, যা বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার ৯৩ শতাংশের সমান। গত শুক্রবার চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) উপাত্তে দেখা গেছে, ২০২২ সালের প্রথম ছয় মাসে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানির মতো ইউটিলিটি খাতে বিনিয়োগ বছরওয়ারি বেড়েছে ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। প্রথমার্ধে বেশ ঝক্কি-ঝামেলার মধ্য দিয়ে গিয়েছে চীনের অর্থনীতি। দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়া হলেও সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। বিশ্বের শীর্ষ এ শিল্পোৎপাদন হাবটির বড় সমস্যা হচ্ছে এর জিরো কভিড পলিসি। দ্বিতীয়ার্ধেও স্থানীয় ব্যবসা, কর্মসংস্থান ও ভোক্তা ব্যয়ে নেতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে এ নীতি। কিন্তু প্রবৃদ্ধি চাঙ্গায় পুরনো পথেই হাঁটছে চীন। বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নেয়ার মাধ্যমে অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে চাচ্ছে তারা।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/447355581.jpg[/IMG]