আফ্রিকার দেশ জিম্বাবুয়ে ভয়াবহ মূল্যস্ফীতির মুখোমুখি হয়েছে। চলতি বছরের জুনে যেখানে মূল্যস্ফীতি ছিল ১৯১ শতাংশ, জুলাইয়ে এসে তা ২৫৭ শতাংশে পৌঁছেছে। দ্রুত বর্ধনশীল এ মূল্যস্ফীতি দেশটির সাধারণ মানুষকে চরম সংকটের মুখে ঠেলে দিয়েছে। একদিকে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে, অন্যদিকে কমছে মুদ্রার মান। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে তীব্র পানি সংকট। রাজধানী হারারের বেশির ভাগ মানুষকে এখন নিজের পানির ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হচ্ছে। স্থানীয়দের দিন শুরু হয় সারা দিনের জন্য পানির ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে। এ অবস্থায় স্বর্ণমুদ্রা প্রচলনের মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের আশা করছে দেশটির সরকার। খবর এপি।
হারারের মাভুকু শহরতলিকে রাতভর নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন জেফরি কার্লোস। নিজের দায়িত্ব পালন শেষে দ্রুত বাড়িতে ফিরে যান তিনি। সেখানে স্ত্রীকে পানি সংগ্রহে সহায়তা করেন তিনি। হারারের ২৪ লাখ বাসিন্দার জন্য পানি সংগ্রহ করা ভীষণ কষ্টের হয়ে গিয়েছে। কারণ বাড়িতে থাকা পানির লাইনে কোনো পানি আসে না। এক্ষেত্রে কার্লোস বেশ ভাগ্যবান। কারণ তিনি যে বাড়িটি ভাড়া নিয়েছেন সেখানে একটি পানির কূপ আছে। যেখান থেকে পানি উত্তোলন করে আশপাশের প্রতিবেশীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন তিনি।
কার্লোস বলেন, পানির এ কূপ এখন তার জন্য স্বর্ণের মতো মূল্যবান। যেদিন ভাগ্য ভালো থাকে সেটির ১২ বালতি পানি বিক্রি করতে পারেন। প্রতি বালতি পানি বিক্রি হয় ২ ডলারে। ১২ বালতি পানি বিক্রির অর্থ দিয়ে তিন সন্তানের জন্য খাবার কিনতে পারেন কার্লোস দম্পতি। ক্রমবর্ধমান দ্রব্যমূল্য এবং কমতে থাকা মুদ্রার মান জিম্বাবুয়ের বহু মানুষকে একেবারে খাদের কিনারে নিয়ে গিয়েছে। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের এ দেশ ২০০৮ সালেও মূল্যস্ফীতিতে রেকর্ড দেখেছিল। সে সময় জিম্বাবুয়ের মূল্যস্ফীতি পৌঁছেছিল ৫০০ কোটি শতাংশে। এবারো সেই একই ধরনের আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সেই সময়ের মতো অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত অবস্থা যেন এবার না হয় সে লক্ষ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট এমারসন এমানাঙ্গাগোয়া। এর মধ্যে রয়েছে আইনি ব্যবস্থাপনার মধ্যে স্বর্ণমুদ্রার প্রচলন করা। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্য রিজার্ভ ব্যাংক অব জিম্বাবুয়ে বলছে, ২২ ক্যারেট মানের স্বর্ণের ১ আউন্স ওজনের মুদ্রাটির মূল্য আন্তর্জাতিক বাজার অনুযায়ী নির্ধারিত হবে, যা দেশের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এবং জাতীয় মুদ্রা ব্যবস্থাপনা স্থিতিশীল করতে সহায়তা করবে।
প্রতিটি মুদ্রার গড় মূল্য ধরা হবে ২ হাজার ডলার বা এর চেয়ে কিছুটা কম। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এ মুদ্রা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, যা দিন শেষে সাধারণ মানুষকেই উপকার করবে। আগামী নভেম্বর থেকে সীমিতভাবে স্বর্ণমুদ্রা প্রচলনের পরিকল্পনা রয়েছে। যে কেউ চাইলে সঞ্চয়ের জন্য এ মুদ্রা কিনে রাখতে পারবে।
তবে স্বর্ণমুদ্রার ঝলকানি সাধারণ নাগরিকদের জন্য দেখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ তারা প্রতিদিনের জীবন টেনে নিতেই যথেষ্ট পরিশ্রম করছে। বিশেষ করে কার্লোসের মতো মানুষ, যাদের জন্য তিন বেলার খাবার জোগাড় করাই কঠিন, তাদের জন্য স্বর্ণমুদ্রা কিনে জমানো বিলাসিতারও চূড়ান্ত।
একই ধরনের মত দিয়েছেন দেশটির অর্থনীতির অধ্যাপক গিফট মুগানো। তিনি বলেন, স্বর্ণমুদ্রা জমানোর যে স্কিম তা মূলত ধনীদের জন্য। যেখানে অসংখ্য নাগরিক প্রতিদিনকার খাদ্যের ব্যবস্থাই করতে পারছে না, সেখানে স্বর্ণমুদ্রা তাদের কতটুকু উপকার করতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/209558508.jpg[/IMG]