[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/85842445.jpg[/IMG]
চীনের শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমে সংকোচন অব্যাহত রয়েছে। আগস্টে টানা দ্বিতীয় মাসের মতো দেশটির এ খাতের কার্যক্রম সংকুচিত হয়েছে। কভিডজনিত স্থবিরতা কাটিয়ে পুনরুদ্ধারের সময়ে আবারো প্রতিবন্ধকতায় পড়েছে খাতটি। নতুন করে সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত বিধিনেষেধ, এক দশকের মধ্যে তীব্র দাবদাহ এবং ঋণে জর্জরিত রিয়েল এস্টেট খাতে ভঙ্গুর অবস্থার কারণে ধীর হয়ে পড়েছে শিল্পোৎপাদন খাত। এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। খবর রয়টার্স।
গতকাল ন্যাশনাল ব্যুরো অব স্ট্যাটিসটিকস (এনবিএস) জানিয়েছে, সরকারি ম্যানুফ্যাকচারিং পারচেজিং ম্যানেজারস ইনডেক্স (পিএমআই) আগস্টে ৪৯ দশমিক ৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। জুলাইয়েও এ সূচক ৪৯ পয়েন্টে ছিল। যদিও গত মাসে এ খাতের পিএমআই বিশ্লেষকদের পূর্বাভাস ৪৯ দশমিক ২ পয়েন্টের চেয়ে বেশি ছিল। ৫০ পয়েন্টের নিচে পিএমআই ওই খাতের সংকোচন এবং এর উপরে প্রসারিত হওয়ার চিত্র তুলে ধরে।
জরিপটিতে উঠে এসেছে, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেখা মন্থর প্রবৃদ্ধি থেকে বেরিয়ে আসতে হিমশিম খাচ্ছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ইউক্রেন যুদ্ধ বৈশ্বিক চাহিদায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। অর্থনীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের চীনা অর্থনীতিবিদ জুলিয়ান ইভান্স-প্রিচার্ড একটি নোটে বলেন, সরকারি পিএমআই অর্থনীতির গতিকে ধীর করে দিয়েছে। কারণ লকডাউনের প্রভাব কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে অর্থনীতি পুনরায় ধাক্কা খেয়েছে এবং রিয়েল এস্টেট খাতের মন্দা আরো গভীর হয়েছে। এ অবস্থায় আগামী মাসগুলোতেও চীনা অর্থনীতি অনিশ্চয়তায় পড়বে বলেও মনে করেন তিনি।
অস্ট্রেলিয়াভিত্ত ক আর্থিক পরিষেবা প্রতিষ্ঠান এএনজেডের গ্রেটার চায়না অঞ্চলের অর্থনীতিবিদ রেমন্ড ইয়োং চাহিদা দুর্বল হওয়ায় চলতি বছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) বৃদ্ধির পূর্বাভাস ৪ থেকে ৩ শতাংশে নামিয়ে এনেছেন। তিনি মনে করেন, আগামী অক্টোবরে কমিউনিস্ট পার্টির কংগ্রেসের আগে কঠোর কভিডজনিত বিধিনিষেধ অব্যাহত থাকবে। সুতরাং শিল্পোৎপাদন কার্যক্রমে ব্যাঘাত অব্যাহত থাকবে।
এদিকে আগস্টে শিল্পোৎপাদনের উপসূচক অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে জ্বালানি সংকটের কারণে এ খাতের প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত রয়েছে। এ সময়ে নতুন ক্রয়াদেশের উপসূচক দশমিক ৭ পয়েন্ট বেড়েছে। যখন নতুন রফতানি ক্রয়াদেশ আগের মাসের ৪৭ দশমিক ৪ পয়েন্ট থেকে ৪৮ দশমিক ১ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। এটি পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতির পথে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে ছোট নির্মাতারা বড় প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি কভিডজনিত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। ছোট প্রতিষ্ঠানের পিএমআই দশমিক ৩ পয়েন্ট কমেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, আগস্টে নতুন সংক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে আরোপিত কঠোর বিধিনিষেধের মাধ্যমে বোঝা যায় যে বেইজিংয়ের জিরো কভিড নীতি শিথিল করার কোনো পরিকল্পনা নেই। ইভান্স-প্রিচার্ডের মতে, বর্তমানে চীনের ৪১টি শহর কভিড প্রাদুর্ভাবের মধ্যে রয়েছে। শহরগুলো চীনা জিডিপিতে ৩২ শতাংশ অবদান রাখে। বিস্তৃত এ প্রাদুর্ভাব গত এপ্রিলের পর সর্বোচ্চ।
চলতি গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে চীনের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলজুড়ে স্বাভাবিক মাত্রার অর্ধেক বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ অবস্থায় পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। সরকার জানিয়েছে, পানির অভাবে ও উচ্চ তাপমাত্রার কারণে মধ্য ও উত্তর চীনজুড়ে কয়েক হাজার হেক্টর জমির ফসল শুকিয়ে গিয়েছে। সিচুয়ান প্রোভিনসিয়াল ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিকস অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজির মতে, সিচুয়ানে জলবিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহূত জলাশয়গুলোর পানির স্তর চলতি মাসে অর্ধেকের মতো কমে গিয়েছে। এসব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে উঠতে সরকার এরই মধ্যে প্রণোদনার ঘোষণা দিয়েছে।
তীব্র দাবদাহের কারণে কিছু অঞ্চলে নির্মাণকাজও স্থগিত করা হয়েছিল। ফলে আগস্টে শিল্পোৎপাদন খাতের বাইরের পিএমআই আগের মাসের ৫৩ দশমিক ৮ থেকে কমে ৫২ দশমিক ৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া উৎপাদন ও পরিষেবা খাত মিলিয়ে সামগ্রিক পিএমআই ৫২ দশমিক ৫ থেকে ৫১ দশমিক ৭ পয়েন্টে নেমেছে।