বিশ্বের বৃহত্তম ভ্রমণ ও পর্যটন বাজারে পরিণত হবে চীন। ২০৩২ সালের মধ্যে চীনের জিডিপিতে বার্ষিক ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গত বছর পূর্ব এশিয়ার দেশটির অবস্থান ছিল দ্বিতীয়তে। ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিসি) এ প্রাক্কলন দিয়েছে। ২০২১ সালে বিশ্বের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে শক্তিশালী ভ্রমণ ও পর্যটন বাজার হিসেবে অবস্থান ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র। মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অবদান নিয়ে এ হিসাব করা হয়। ডব্লিউটিসি ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট শীর্ষক প্রতিবেদনে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র আগামী এক দশকের মধ্যে শীর্ষস্থান হারাতে পারে।
২০৩২ সালের মধ্যে চীনের জিডিপিতে বার্ষিক এ খাতের অবদান ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হতে পারে। এটি ২০২১ সালে ৮১ হাজার ৪৩০ কোটি ডলার থেকে কয়েক গুণ বেশি। কভিডজনিত বিপর্যয় কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশটি। করোনা সংক্রমণ বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন সময় লকডাউন আরোপ করলেও চীনের অভ্যন্তরীণ পর্যটন খাতে চাঙ্গা ভাব দেখা দিয়েছে।
এদিকে ২০২১ সালে মার্কিন জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে ২০১৯ সালে এ খাতের অবদান ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার কোটি ডলার। কভিডজনিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা সত্ত্বেও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধির মাধ্যমে শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি। আগামী বছরগুলোয় খাতটির আকার বাড়তে থাকবে। ২০৩২ সাল নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে এ খাতের অবদান ২ লাখ ৬৬ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছনোর পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। তবে এ সময়ে দেশটি ভ্রমণ ও পর্যটন বাজারে দ্বিতীয় অবস্থান অর্থাৎ চীনের পেছনে পড়ে যাবে।
পর্যটন সংস্থাটি জানিয়েছে, ২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পরে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ভ্রমণ ও পর্যটন বাজার ছিল জার্মানি, জাপান, ইতালি, ভারত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, যুক্তরাজ্য ও স্পেন। পূর্বাভাস অনুযায়ী ২০৩২ সালের মধ্যে তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশ অপরিবর্তিত থাকলেও অবস্থান পাল্টাবে। সে সময় শীর্ষ ১০ দেশের তালিকা হবে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, মেক্সিকো, ইতালি ও স্পেন। সামগ্রিকভাবে ২০২২-৩২ সালের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপিতে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতের অবদান বার্ষিক গড়ে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস ২ দশমিক ৭ শতাংশের দ্বিগুণেরও বেশি। এ সময়ে খাতটি ১২ কোটি ৬০ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
ডব্লিউটিসির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী জুলিয়া সিম্পসন বলেন, কভিডজনিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাব সত্ত্বেও ভ্রমণ ও পর্যটন খাত স্থিতিশীল রয়েছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এ খাতে পুনরুদ্ধার অব্যাহত থাকবে। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া বিশ্বজুড়ে মানুষ আবারো ভ্রমণ করছে। পাশাপাশি আমরা ব্যবসায়িক ভ্রমণেও পুনরুদ্ধার দেখতে পাচ্ছি। আগামী ১০ বছরে ভ্রমণ ও পর্যটন খাতে প্রবৃদ্ধির হার বিশ্ব অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাবে।
ডব্লিউটিসি প্রাক্কলন দিয়েছে, চলতি বছর বিশ্বজুড়ে ব্যবসায়িক ভ্রমণ ৪১ শতাংশেরও বেশি বাড়বে। বিশেষ করে এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে দ্রুত পুনরুদ্ধারের আশা করা হচ্ছে। আগামী ১০ বছরে ব্যবসায়িক ভ্রমণ বার্ষিক ৫ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বাড়তে পারে।
২০২০ সালে কভিডজনিত বিধিনিষেধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোর অন্যতম ছিল ভ্রমণ ও পর্যটন। কভিড সংক্রমণ প্রতিরোধে দেশগুলো সীমান্ত বন্ধ করে দেয়ায় স্থবির হয়ে পড়ে খাতটি। ওই বছর এ খাতের ৬ কোটি ২০ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছিল এবং ৪ লাখ ৯০ হাজার কোটি ডলার লোকসান লোকসানের মুখোমুখি হয়েছিল। বৈশ্বিক জিডিপিতে এ খাতের অবদান আগের বছরের তুলনায় ৫০ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গিয়েছিল। যদিও ২০২১ সালেই খাতটিতে পুনরুদ্ধারের সূচনা হয়েছিল। তবে ওমিক্রনের প্রাদুর্ভাব এবং সরকারগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণে পুনরুদ্ধারের গতি প্রত্যাশার চেয়ে ধীর হয়েছিল। গত বছর জিডিপিতে খাতটির অবদান ২১ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৫ লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাশাপাশি খাতটিতে ১ কোটি ৮২টি নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1822124439.jpg[/IMG]