চলার পথে ট্রাফিক জ্যাম আছে কি না কিংবা সামনে কোনো স্পিড ব্রেকার আছে কি না—এসব আগে থেকেই জেনে গেলে অনেক ধরনের দুর্ঘটনা এবং জ্যামে আটকে পড়া থেকে বাঁচা যাবে। আরো আছে ট্রাফিক অ্যালার্ট, স্পিড ব্রেকার অ্যালার্টের মতো সুবিধা। এমন সব সুবিধা পাওয়া যাবে দেশি স্টার্টআপ ‘যান্ত্রিক’-এর তৈরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ‘ডিজিটাল ড্রাইভার’ অ্যাপ থেকে।
‘ডিজিটাল ড্রাইভার’ অ্যাপটিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে ড্রাইভিংয়ে সহায়ক করে তৈরি করা হয়েছে। ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপের মোটরসাইকেল এবং কার, বাস ও ট্রাকে ব্যবহারের জন্য ভিন্ন দুটি ইন্টারফেস রয়েছে। আর সেটি অ্যাপ চালুর সময় নির্বাচন করে নিতে হবে। ইন্টারফেস দুটিতে প্রয়োজন অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন ফিচার যোগ করা হয়েছে। মোটরসাইকেল ছাড়া বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক নিজেরা ড্রাইভ করেন না। অন্য চালক সেটি চালান। এ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপের মাধ্যমে নিজের গাড়ি ও চালকের গতিবিধি সার্বক্ষণিক তদারক করতে পারেন।
মোটরসাইকেল ছাড়া বেশির ভাগ ব্যক্তিগত গাড়ির মালিক নিজেরা ড্রাইভ করেন না। অন্য চালক সেটি চালান। এ ক্ষেত্রে গাড়ির মালিক ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপের মাধ্যমে নিজের গাড়ি ও চালকের গতিবিধি সার্বক্ষণিক তদারক করতে পারেন।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/621238284.jpg[/IMG]
রাস্তার অবস্থা জানানো
গাড়ি চালানোর সময় সামনের রাস্তায় কোনো স্পিড ব্রেকার থাকলে কিংবা রাস্তায় কোনো ভাঙা বা গর্ত থাকলে তা আগেভাগেই জানিয়ে দেবে। এ ছাড়া গন্তব্যের সামনের রাস্তায় অতিরিক্ত জ্যাম কিংবা রাস্তা ব্লক থাকার মতো ঘটনা ঘটলে সেটি জানিয়ে দেবে এবং বিকল্প রাস্তা থাকলে সেটি ব্যবহারের পরামর্শ দেবে।

স্লিপ ডিটেক্টর
ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপের অন্যতম ফিচার এটি। এটি কার, বাস কিংবা ট্রাকের মতো যানবাহনে ব্যবহার করা যাবে। এ জন্য অ্যাপটি চালু করে চালকের সামনে স্ট্যান্ডে যোগ করে মোবাইল ফোনটি স্থাপন করতে হবে। তাহলে মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে প্রতিনিয়ত চালকের মুখমণ্ডল স্ক্যান করতে থাকবে এটি। চালক যদি যাত্রাপথে ঝিমুনি অনুভব করেন, তাহলে তাঁর চোখের পাতা ফেলার গতি ও অন্যান্য বিষয় যাচাই করে অ্যাপটি ধরে ফেলবে এবং বিকট শব্দে অ্যালার্ম বাজিয়ে চালককে ঘুমভাব কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে।

ভয়েস কমান্ড
অ্যাপটি ভয়েস কমান্ড দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। রাস্তার তথ্য জানাতে রাস্তার ঝাঁকুনি থেকে প্রাপ্ত তথ্য ও অন্য ব্যবহারকারী থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে অ্যাপটি। যাত্রাপথে রাস্তায় স্পিড ব্রেকার কিংবা ভাঙা সড়কের তথ্য, যেটি অ্যাপটিতে যুক্ত নেই, সেসবও ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে যোগ করা সম্ভব। এ ছাড়া ভয়েস কমান্ডের মাধ্যমে অ্যাপের অন্যান্য ফাংশন নিয়ন্ত্রণ কিংবা মোবাইলে কল চলে এলে সেটিও নিয়ন্ত্রণ করা যাবে।

ওভারস্পিড অ্যালার্ট
নির্দিষ্ট গতিসীমার ওপরে গাড়ির গতি উঠে গেলে অ্যাপটি বুঝতে পারে এবং চালককে ওভারস্পিড অ্যালার্ট প্রদান করে। প্রয়োজনে তথ্যটি গাড়ির মালিকের কাছে প্রেরণ করে। এভাবে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে উচ্চগতিজনিত দুর্ঘটনা হ্রাসে সহায়তা করে অ্যাপটি।



লাইভ ট্র্যাকিং
সাধারণত গাড়ির অবস্থান শনাক্ত করতে ‘ভেহিকল ট্র্যাকিং সার্ভিস/ডিভাইস (ভিটিএস)’-এর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। কিন্তু ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপ দিয়েও ট্র্যাকিংয়ের কাজটি করা যাবে। এর মাধ্যমে মোবাইলের লোকেশন ব্যবহার করে জানা যাবে গাড়ির অবস্থান। এ ছাড়া অ্যাপটি দিয়ে ফোনের ফ্রন্ট ক্যামেরা ব্যবহার করে গাড়ির মালিক গাড়ির ভেতরের অবস্থাও লাইভ ভিডিও আকারে দেখতে পারবেন। এ ছাড়া ট্রিপের বিস্তারিত তথ্য, চালকের গাড়ি চালানোর গতিবিধির বিস্তারিত জানা যাবে।

জরুরি যোগাযোগ
অ্যাপটিতে জরুরি যোগাযোগের (এসওএস) ফিচারও যোগ করা হয়েছে। যাত্রাপথে তেল ফুরিয়ে গেলে অ্যাপের মাধ্যমে সাহায্যের অনুরোধ করা যাবে, যা নিকটবর্তী অন্যান্য ব্যবহারকারীর কাছে নোটিফিকেশন আকারে যাবে এবং এতে পাশের অন্য ব্যবহারকারী সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসতে পারবেন। যাত্রাপথে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে তা গাড়ির মালিককে অবহিত করতে সক্ষম। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটলে চালক চোখের ইশারার মাধ্যমে গাড়ির মালিককে অবহিত করতে পারবেন।


অ্যাপটি যেভাবে কাজ করে
অ্যাপটি ক্রাউড ডাটা সোর্সিং মডেলে কাজ করে থাকে। রাস্তার অবস্থার হালনাগাদ ও স্পিড ব্রেকার বিষয়ক তথ্যের ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের থেকে প্রাপ্ত তথ্য, চলন্ত অবস্থায় ঝাঁকুনির প্রযুক্তিগত (এআই) বিশ্লেষণ করে তা অ্যাপে প্রদর্শিত হয়। এ ছাড়া স্লিপ ডিটেকশনের ক্ষেত্রে চালকের মুখমণ্ডলের অবয়ব ও চোখের পাতা নড়াচড়ার হার বিশ্লেষণ করা হয়।

‘যান্ত্রিক’-এর সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী শুভ আল ফারুক বলেন, ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন চলাকালে এই ধরনের একটি অ্যাপের আইডিয়া মাথায় আসে আমাদের। এর পর থেকেই তাদের মূল প্রতিষ্ঠান যান্ত্রিক থেকে অ্যাপটির ডেভেলপমেন্টের কাজ শুরু হয়। ’ তবে বৃহৎ পরিসরে অ্যাপটি ডেভেলপমেন্টে সরকারি সহায়তার প্রয়োজন আছে বলে তিনি মনে করেন।
এ ছাড়া বাণিজ্যিক গাড়িগুলোতে অ্যাপটির ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে ড্রাইভার থেকে গতিবিধি ও পারফরম্যান্স তদারক ও মনিটর করার সুযোগ তৈরি হবে। এ জন্য সরকারি দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর (যেমন—বিআরটিএ) সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক কার্যক্রমের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

এ ছাড়া বাইকারদের জন্য অ্যাপটি বিশেষভাবে সহায়ক করে তোলার পেছনে তাদের প্রয়াসের কথাও জানান শুভ আল ফারুক। তিনি জানান, দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার অন্যান্য যানবাহন অপেক্ষা প্রায় ৩০ গুণ বেশি। অ্যাপটি ব্যবহার করে যাতে এই হার কমিয়ে আনা যায় সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছেন তাঁরা।

অ্যাপ ব্যবহারে খরচ কেমন
অ্যাপটিতে নিবন্ধন করলে প্রথম ৩০ দিন পরীক্ষামূলক সময় হিসেবে বিনা মূল্যে ব্যবহার করা যাবে। এর পর থেকে চার্জ দিতে হবে। কার, বাস, ট্রাক ইত্যাদি যানবাহনে ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাসিক ৩০০ টাকা হারে চার্জ দিতে হবে। আর মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে মাসিক প্যাকেজ ৯৯ টাকা, চার মাসের প্যাকেজ ২৯৯ টাকা এবং বার্ষিক প্যাকেজ ধরা হয়েছে ৫৯৯ টাকা। অ্যাপে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের পেমেন্ট মাধ্যম থেকে ব্যবহারকারীর সুবিধাজনক মাধ্যমে পেমেন্টের সুবিধা রয়েছে।

মভবিষ্যৎ ভাবনা
যান্ত্রিকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শুভ আল ফারুক বলেন, অ্যাপটি বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যবহার করা গেলেও এটিকে আন্তর্জাতিকভাবে ব্যবহারের উপযোগী করে তৈরি করছেন তাঁরা। খুব দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে তাঁদের কার্যক্রম চালুর ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন শুভ আল ফারুক। ডিজিটাল অ্যাপটি এখনো বেটা পর্যায়ে রয়েছে। এটির ক্রমাগত মানোন্নয়ন, উৎকর্ষ সাধন এবং আরো ফিচার যোগ করার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। অ্যাপটি যেহেতু ক্রাউড মডেলে কাজ করে, তাই এটির ব্যবহারকারী যত বাড়বে অ্যাপের কার্যকারিতা ততই বৃদ্ধি পাবে।

ডাউনলোড লিংক
ডিজিটাল ড্রাইভার অ্যাপটি আপাতত কেবল অ্যানড্রয়েড প্ল্যাটফরমেই ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই আইওএস প্ল্যাটফরমের জন্যও অ্যাপটি উন্মুক্ত করা হবে। গুগল প্লে স্টোরে গিয়ে ডিজিটাল ড্রাইভার সার্চ করে কিংবা এই লিংক(https://urlzs.com/cSoM5) থেকেও অ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে।