কভিড-১৯ মহামারীর কারণে আরোপিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য বিধিনিষেধের ফলে বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েছে পর্যটন শিল্প। সম্প্রতি জাপানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে কঠোরতাগুলো তুলে নেয়া হয়েছে। এতে ত্বরান্বিত হয়েছে পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে এগিয়ে রয়েছে এশিয়া-প্যাসিফিক। ধারণা করা হচ্ছে, ২০২৩ সালের মধ্যে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পর্যটন শিল্পকে সম্পূর্ণভাবে পুনরুদ্ধার করতে সফল হবে অঞ্চলটি। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি লন্ডনভিত্তিক ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (ডব্লিউটিটিসি) তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ইকোনমিক ইম্প্যাক্ট শীর্ষক ওই প্রতিবেদন অনুসারে, প্রাক-মহামারী স্তরের তুলনায় ২০২০ সালে বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে এশিয়া-প্যাসিফিকের পর্যটন রাজস্ব ৫৯ শতাংশ বেশি হ্রাস পায়। তাছাড়া বেশির ভাগ দেশ কঠোর সীমান্ত বিধিনিষেধ বজায় রাখায় ২০২১ সালে এ অঞ্চলে পুনরুদ্ধার চেষ্টা ছিল অনেকটাই স্থবির। সে সময় পর্যটন বাবদ আয়ের পরিমাণ প্রায় ১৬ শতাংশ বাড়লেও তা ইউরোপের ২৮ শতাংশ ও উত্তর আমেরিকার ২ শতাংশ থেকে কম। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1130560122.jpg[/IMG]
তবে এ বছর এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যবধান কমবে বলে আশা করা হয়েছে। পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভ্রমণ রাজস্বের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ৭১ শতাংশ। কেননা, চলতি বছর এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ভ্রমণের পরিমাণ বেড়েছে। প্রথমে বিধিনিষেধ শিথিল করা হয় ভারত ও অস্ট্রেলিয়ায়। এরপর মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো তাদের ভ্রমণবিষয়ক কঠোরতাগুলো তুলে নেয়। সম্প্রতি জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও উত্তরে তাইওয়ান তাদের মহামারীবিষয়ক কঠোরতাগুলো তুলে নিয়েছে।
তাই ডব্লিউটিটিসির প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে এশিয়া-প্যাসিফিকের ভ্রমণ শিল্প ঘিরে অব্যাহত লাভের আশা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল অঞ্চলটির জন্য ইতিবাচক বৃদ্ধির আরেকটি বছর হতে যাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরো উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৫ সাল নাগাদ এ অঞ্চলের জিডিপিতে ভ্রমণ খাত ৩২ শতাংশের বেশি অবদান রাখতে সমর্থ হবে, যা মধ্যপ্রাচ্যের ৩০ শতাংশ থেকে বেশি। পাশাপাশি অন্য প্রতিটি অঞ্চলের তুলনায়ও বেশি হবে।
প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, ২০২২-৩২ সাল পর্যন্ত বিশ্ব অর্থনীতির গড় বার্ষিক বৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। তবু একই সময়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে পর্যটন খাতের অবদান গড়ে বার্ষিক ৫ দশমিক ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে এ হার অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় বেশি। ডব্লিউটিটিসির প্রতিবেদনে আশা করা হচ্ছে, জিডিপিতে পর্যটন খাতের অবদান গড়ে বার্ষিক ৮ দশমিক ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে।
পর্যটন শিল্পের পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি ডব্লিউটিটিসির পক্ষ থেকে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, ভ্রমণ শিল্পে পরবর্তী এক দশকের মধ্যে প্রায় ১২৬ মিলিয়ন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে; যার ৬৫ শতাংশই এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে। এর মধ্যে পর্যটন শিল্পের অন্যতম কর্মসংস্থান তৈরি হবে ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে। আগামী এক দশকে এখানে যথাক্রমে ৫ দশমিক ৩ মিলিয়ন, ৩ দশমিক ৫ মিলিয়ন এবং ৩ দশমিক ১৫ মিলিয়ন নতুন চাকরি যোগ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু চীন যদি আন্তর্জাতিক ভ্রমণ সীমিত করতে থাকে সেক্ষেত্রে ২০২৩ সালের মধ্যে এশিয়ায় সম্পূর্ণ পুনরুদ্ধার সক্ষমতা বিপন্ন হতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।