চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে প্রত্যাশার অধিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে চীন। তবে অব্যাহত করোনার হানা, আবাসন খাতে শ্লথগতি ও বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ এ অর্থনীতির জন্য উদ্বেগের বিষয় হিসেবে রয়ে গিয়েছে। চীনের জাতীয় পরিসংখ্যান ব্যুরো (এনবিএস) এক প্রতিবেদনে জানায়, জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে চীনের অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে ৩ দশমিক ৯ শতাংশ। রয়টার্সের এক জরিপে যেখানে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। উল্লেখ্য, দ্বিতীয় প্রান্তিকে এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতির জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ।
গত সপ্তাহে প্রবৃদ্ধিসহ তৃতীয় প্রান্তিকের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশ করার কথা ছিল চীনের। কিন্তু দেশটির পরিসংখ্যান ব্যুরো গত সোমবার জানায়, মঙ্গলবার জিডিপি প্রবৃদ্ধিসহ অন্যান্য উপাত্ত প্রকাশ হচ্ছে না। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির সপ্তাহব্যাপী কংগ্রেস উপলক্ষে গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশ থেকে বিরত রয়েছে বেইজিং। হংকংভিত্তিক একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ব্রুস প্যাং বলেন, অর্থনৈতিক উপাত্ত প্রকাশের বিলম্বের পেছনে অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়া ব্যাহতের ঘটনা নেই। বরং দলের কংগ্রেসে কী কী গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে জনগণের দৃষ্টি যাতে সেখানে নিবদ্ধ থাকে সে উদ্দেশ্যে উপাত্ত প্রকাশে বিলম্ব হচ্ছে।
দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জিরো কভিড পলিসির কারণে ২০২২ সালে ৫ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন দুরূহ হবে চীনের। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) পূর্বাভাস, চলতি বছরে চীনের অর্থনীতি ৩ দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারিত হবে। কভিডজনিত কারণে ২০২০ সালের ২ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাদে গত শতকের আশির দশকের পর যা সর্বনিম্ন প্রবৃদ্ধি। আইএনজি গ্রুপের বৃহত্তর চীনবিষয়ক মুখ্য অর্থনীতিবিদ আইরিস প্যাং জানান, যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো চীনের অর্থনীতিতে এখনো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক কভিড-১৯।
আগের মন্দাভাব ও শ্লথগতির সময় চীন যেভাবে অবকাঠামো ও শিল্প খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে চলতি বছরেও এ প্রয়াস লক্ষণীয়।
গতকাল প্রবৃদ্ধি উপাত্তের পাশাপাশি আমদানি-রফতানির উপাত্তও প্রকাশ করেছে এনবিএস। সেখানে দেখা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানি হ্রাস পেলেও আমদানি বেড়েছে। বৈশ্বিক ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ার ফলে চীনের রফতানিতে প্রভাব পড়েছে। তবে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি আগের তুলনায় ভালো অবস্থানে থাকায় আমদানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এনবিএসের উপাত্তে দেখা গিয়েছে, সেপ্টেম্বরে চীনের রফতানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে ৩২ হাজার ২৮০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। যেখানে গত আগস্টে চীনের রফতানি বেড়েছিল ৭ শতাংশ। এদিকে আমদানি দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ২৩ হাজার ৮০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা পূর্বাভাস দিয়েছিলেন, ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে চীনা রফতানি খাত দুর্বল হবে। গত বছরের তুলনায় ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে চীনের বৈশ্বিক বাণিজ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে ৮ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার। মূলত জ্বালানি তেল ও গ্যাসের ওপর দাঁড়িয়ে রাশিয়া থেকে চীনের আমদানি গত বছরের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১ হাজার ৭০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা গত আগস্টের চেয়ে ৫ শতাংশ কম।
সেপ্টেম্বরে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে রফতানির পরিমাণ গত বছরের তুলনায় ১১ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ৫ হাজার ৮০ কোটি ডলার হয়েছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানি ৪ দশমিক ৬ শতাংশ কমে ১ হাজার ৪৭০ কোটি ডলার হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে বাণিজ্য উদ্বৃত্ত গত বছরের তুলনায় ১৪ দশমিক ১ শতাংশ কমে ৩ হাজার ৬১০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।
[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/2132085084.jpg[/IMG]