[IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1241154334.jpg[/IMG]
দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত ছিল কঠোর কভিডজনিত বিধিনিষেধ। সাম্প্রতিক সময়ে বিধিনিষেধ কিছুটা শিথিলের পর আবারো ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে সংক্রমণ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভূরাজনৈতিক প্রভাবেও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এরই মধ্যে ধীর হয়ে পড়েছে চীনের অর্থনীতি। এসব কারণে লোকসানে পড়ে স্থানীয় সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ কমিয়ে দিচ্ছেন চীনের ধনীরা। পরিবর্তে তারা বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ নিরাপদ কোনো দেশের সন্ধান করছেন। আসন্ন ২০২৩ সালে চীনাদের দেশের বাইরে বিনিয়োগের প্রবণতা ব্যাপক বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন তহবিল ব্যবস্থাপক ও শিল্পসংশ্লিষ্টরা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছর পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ থেকে বড় ধরনের লোকসান গুনেছেন চীনা ধনীরা। ভূরাজনৈতিক প্রভাবের কারণে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অনিশ্চয়তায় তারা আরো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছেন।
তথ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ইউরেকাহেজ জানিয়েছে, চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত হেজ ফান্ডগুলো ১২ দশমিক ৯ শতাংশ বাজারমূল্য হারিয়েছে। এটি ২০১১ সালের পর সবচেয়ে খারাপ বছর হিসেবে চিহ্নিত হতে যাচ্ছে। সম্পদের বৈষম্য কমাতে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের গৃহীত সাধারণ সমৃদ্ধির পদক্ষেপ নিয়েও উদ্বিগ্ন ধনীরা। এ অবস্থায় তারা যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মতো দেশে বিদেশী প্রাইভেট ইকুইটি এবং রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগের সুযোগ অনুসন্ধান করছেন। যদিও চীনের মূল ভূখণ্ডের বাইরে দেশটির নাগরিকদের বিনিয়োগ নতুন কিছু নয়। আবার এসব বিনিয়োগের বড় একটি অংশ দেশের বাইরের চীনা সম্পদে বিনিয়োগ করা হয়। যেমন অফশোর বাজারে তালিকাভুক্ত চীনা সিকিউরিটিজ। রেলিয়েন্ট গ্লোবাল অ্যাডভাইজারসের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান জেসন হু বলেন, ‘চীনের ধনীরা আগে দেশের বাইরে তালিকাভুক্ত চীনা সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করতে বেশি পছন্দ করতেন। তবে এখন সেই প্রবণতা পরিবর্তন হচ্ছে। তারা এখন বিদেশী শেয়ারে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজছেন। কিছুদিন ধরে আমরা মার্কিন অর্থনৈতিক নীতি এবং বিনিয়োগের নিয়ম নিয়ে চীনাদের পারিবারিক অফিস থেকে অনেক প্রশ্ন পেয়েছি।’
শত কোটি ডলারেরও বেশি সম্পদ রয়েছে এমন একটি পারিবারিক অফিসের হংকংভিত্তিক পোর্টফোলিও ম্যানেজার রয়টার্সকে জানান, গত বছরের শেষ দিকেও মোট বিনিয়োগের ৮০ শতাংশই ছিল চীনা সম্পদে। তবে এখন পর্যন্ত এ বিনিয়োগ এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনা হয়েছে এবং আরো কমানোর প্রক্রিয়া চলছে। পরিবর্তে তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান বিদেশী জ্বালানি ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। বিশেষ করে জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ বাড়ানো হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
১০০ কোটি ডলারের বেশি সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা পৃথক একটি চীনা পারিবারিক অফিসের একজন ব্যবস্থাপনা অংশীদার বলেন, ‘আমরা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগের সুযোগ খুঁজতে উল্লেখযোগ্য সময় ব্যয় করছি। পাশাপাশি চীনের জিরো কভিড নীতি শিথিলের ফলে তৈরি হওয়া সুযোগগুলোও মাথায় রাখতে হচ্ছে।’ এদিকে দুটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, বৃহত্তর চীনের পারিবারিক অফিসগুলোকে মার্কিন অর্থ ব্যবস্থাপকদের সঙ্গে সংযুক্ত করতে হংকংয়ের মার্কিন কনস্যুলেট অক্টোবর ও নভেম্বরে দুটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেছে। গত মাসে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গ্রিনলাইট ক্যাপিটালের সভাপতি ডেভিড আইনহর্ন এবং গুগলের সাবেক প্রধান নির্বাহী এরিক স্মিডের পারিবারিক অফিস পরিচালনা করা কেন গোল্ডম্যান আমন্ত্রিত ছিলেন। কেন গোল্ডম্যান ওই বৈঠকে যোগ দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করলেও ডেভিড আইনহর্ন কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি।
ইউবিএস গ্লোবাল ওয়েথ ম্যানেজমেন্ট চিফ ইনভেস্টমেন্ট অফিসের গ্রেটার চায়না ইকুইটির প্রধান ইভা লি বলেন, গত কয়েক বছরে চীনের ধনীরা তাদের স্থানীয় বাজারে বিনিয়োগ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করেছেন। তবে এখন তারা নেতিবাচক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। চলতি বছর বিনিয়োগকারীরা একটি বিষয় খুব ভালো করে শিখেছেন যে বৈচিত্র্যকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।