মূল্যস্ফীতির কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো যুক্তরাজ্যেও বেড়েছে খাদ্য ও জ্বালানির দাম। বেশ কিছুদিন ধরেই এ চাপ সামাল দিতে হচ্ছে ব্রিটিশদের। ধারণা করা হয়েছিল, নতুন বছর শুরু হলে মজুরি বাড়বে। আর সেই বাড়তি সুবিধা দিয়ে মূল্যস্ফীতির কারণে সৃষ্ট সংকট মোকাবেলা করবে তারা। কিন্তু সম্ভবত ব্রিটেনবাসীর আশা এবার পূরণ হবে না। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান প্রাইসওয়াটার হাউজকুপার্সের (পিডব্লিউসি) তথ্য বলছে, ২০২৩ সালে প্রকৃত মজুরি বরং কমবে, যা কমে ২০০৬ সালের পর্যায়ে নামতে পারে। মোট মজুরি থেকে মূল্যস্ফীতির হার বাদ দিয়ে প্রকৃত মজুরি হিসাব করা হয়। খবর দ্য গার্ডিয়ান। পিডব্লিউসির পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২২ সালে মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত মজুরি কমেছিল ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে তা কমবে আরো ২ শতাংশ। সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মজুরি অনেকটা স্থির অবস্থায় রয়েছে। যদিও মূল্যস্ফীতি দুই অংক ছাড়িয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে জীবনযাপনের ব্যয় বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে, যার রেশ পড়েছে গোটা ব্রিটিশ অর্থনীতির বিভিন্ন খাতে। [IMG]http://forex-bangla.com/customavatars/1699016598.jpg[/IMG]
গত শুক্রবার যুক্তরাজ্যের পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তারা আট দিনব্যাপী কর্মবিরতি শুরু করেন। কর্মবিরতি পালন অব্যাহত থাকলে তার প্রভাব পড়বে লন্ডনের সবচেয়ে ব্যস্ত দুই বিমানবন্দর হিথরো ও গ্যাটউইকের ওপর। কারণ বড়দিন ও গ্রেগরিয়ান নববর্ষ সামনে রেখে প্রচুর মানুষ এখন ভ্রমণে বের হচ্ছে।এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিমানবন্দরের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সীমান্তরক্ষীদের সহায়তা করবে সেনাবাহিনী। তবে সেই সঙ্গে পর্যটকদেরও সতর্ক করে বলা হয়েছে যে ব্রিটেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে ফ্লাইট ছাড়ার ক্ষেত্রে বিলম্ব ও বিমানবন্দরে কিছু সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। পিডব্লিউসির জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ব্যারেট কুপেলিয়ান বলেন, ২০২২ যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির জন্য ছিল ভীষণ চ্যালেঞ্জের। ২০২৩ সালও প্রায় একই রকম যাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। অর্থাৎ নতুন বছরেও একই ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে ব্রিটিশ অর্থনীতিকে যেতে হবে।
প্রতিবেদনে অবশ্য কিছু আশার কথাও শোনানো হয়েছে। মজুরি না বাড়লেও আগামী বছর ৩০ হাজারের বেশি কর্মী যুক্তরাজ্যের শ্রমবাজারে আবারো যুক্ত হবেন। এর ফলে অনেক খাতে অর্থনৈতিক স্থবিরতা কমবে, উচ্চ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মী প্রয়োজন এমন খাতগুলোয় কর্মী সংকট মিটবে। একই সময়ে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের পরিমাণ বাড়বে, যা দেশটির অর্থনীতিতে ১ হাজার ৯০০ কোটি পাউন্ড যুক্ত করবে। পুরো অর্থনীতিতে সংকোচন ঘটলেও অভিবাসীরা জিডিপির ১ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।
আরেক অর্থনীতিবিদ জ্যাক ফিনে বলেন, অর্থনীতির সংকোচনের পরও যুক্তরাজ্য অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য পছন্দের গন্তব্য। ২০২২ সালে অভিবাসী প্রবেশের পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় ১১ লাখে, যা এক বছরের জন্য সর্বোচ্চ রেকর্ড। এর মধ্যে ইউক্রেন, আফগানিস্তান ও হংকং থেকে পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার অভিবাসীও এসেছে। এখনো দেশটির পরিষেবা, খুচরা ব্যবসা ও কৃষি শিল্প খাতে প্রবল কর্মী সংকট রয়েছে।